Maitreyi Devi: রবীন্দ্র-অতুলপ্রসাদ-সঙ্গ ধন্য এক বিস্মৃত বিদুষী বাঙালিনী মৈত্রেয়ী

Soumitra Sen Wed, 01 Sep 2021-10:16 pm,

সাধারণ বাঙালি মেয়ের ঘরানার কোনও দিনই ছিলেন না। বরং একটা আত্মদীপ্তির শিখা সবসময় তাঁর মধ্যে যুক্তি ও দর্শন কাব্য ও যাপনকে আলো করে রাখত। তিনি মৈত্রেয়ী দেবী। আজকের প্রজন্ম তাঁকে খুব একটা মনে রাখেনি হয়তো। অথবা অল্পসংখ্যক বাঙালি 'ন হন্যতে' উপন্যাসের লেখক হিসেবে মনে রেখেছেন। 

১৯১৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের চট্টগ্রামে মৈত্রেয়ী দেবীর জন্ম। তাঁর বাবা সুরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত, মা হিমানী মাধুরী রায়। বাবার থেকেই তাঁর সাহিত্যপ্রীতির জন্ম। মৈত্রয়ীর বাবা ছিলেন দার্শনিক ও প্রাবন্ধিক। মৈত্রেয়ীও পরবর্তী কালে লেখালেখিতে ডুবে যান। তিনি একাধারে কবি, লেখক, ঔপন্যাসিক। সমাজসেবাতেও অনন্য অবদান রেখেছেন। ১৯৭৭ সালে 'পদ্মশ্রী' পুরস্কারে ভূষিত হন।

১৯৩৪ সালে ড. মনোমোহন সেনের সঙ্গে বিয়ে হয় মৈত্রেয়ীর। মনোমোহন ছিলেন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী। তিনি মংপুতে সিনকোনা ফ্যাক্টরির ম্যানেজার ছিলেন। ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী ভেষজ সিনকোনা চাষ নিয়ে গবেষণাও করেন। স্বামীর কর্মসূত্রেই মৈত্রেয়ী দেবী দীর্ঘদিন মংপুতে ছিলেন। তাঁরা মংপুতে থাকাকালীন রবীন্দ্রনাথ মৈত্রেয়ীর আমন্ত্রণে ১৯৩৮ থেকে ১৯৪০ সালে মধ্যে চারবার সেখানে যান। রবীন্দ্রনাথের মংপুতে কাটানো দিনগুলির স্মৃতি ও কবির সঙ্গে তাঁর আলাপচারিতা নিয়ে মৈত্রেয়ী পরবর্তী কালে লেখেন অনন্য স্মৃতিকথা 'মংপুতে রবীন্দ্রনাথ'।

সারা জীবন ধরে বিশিষ্ট সব মানুষের সঙ্গ পেয়েছেন মৈত্রেয়ী। এঁদের মধ্যে একজন কবি ও গীতিকার অতুলপ্রসাদ সেন। ১৯৩২ সালে অতুলপ্রসাদের কথায় ও সুরে 'মধুকালে এল হোলি' গানও রেকর্ড করেন মৈত্রেয়ী।

কিন্তু মানুষ তাঁকে সম্ভবত এসবের জন্য মনে রাখেনি। মনে রেখেছে 'ন হন্যতে' নামক উপন্যাসের জন্য। মির্চা ইলিয়াড নামক এক বিদেশির সঙ্গে সদ্যতরুণী মৈত্রেয়ীর সম্পর্ক তাঁর পরিবারকে বিশেষ ভাবে নাড়া দেয়। তাঁরা এমনকী বিয়ের কথাও ভাবছিলেন। যাই হোক, পরে তাঁর এই 'ন হন্যতে' উপন্যাসে তিনি এই ঘটনাটা আনেন। 

আত্মজীবনীমূলক এই উপন্যাস পাঠকমহলে তাঁকে খ্যাতির শীর্ষে নিয়ে এল। ১৯৭৫ সালে ভারতীয় লেখিকা সঙ্ঘ 'ন হন্যতে' উপন্যাসের জন্য তাকে সম্মানসূচক পদকও দেয়। এই বইতে তিনি তাঁর যে দৃষ্টিভঙ্গি, যে জীবনবোধ, ইংরেজ শাসনে ভারতের সমাজব্যবস্থা এবং সেই প্রেক্ষিতে সাধারণের জীবনযাপনের চিত্র তুলে ধরেন তা বিপুল চর্চিত হয়। বইটির জন্য তিনি ১৯৭৬ সালে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কারও লাভ করেন। বইটি ইংরেজিতে 'ইট ডাজ নট ডাই' নামে অনূদিত ও প্রকাশিত হয়।

মৈত্রেয়ী দেবীর সিদ্ধি অবশ্য সারস্বত জগতেই সীমাবদ্ধ নয়। কলকাতার সন্নিহিত বাদু গ্রামে ৯ বিঘা জমি জুড়ে তিনি কৃষি, মীনপালন, মৌপালন, গোপালন, হাঁসপালনের প্রকল্প করেন। সঙ্গে শরণার্থী শিবিরের অনাথ শিশুদের জন্য একটি সংস্থাও প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি এই বিশিষ্ট মহিলা প্রয়াত হন।

ZEENEWS TRENDING STORIES

By continuing to use the site, you agree to the use of cookies. You can find out more by Tapping this link