পিঠেপুলির মৌতাতমুগ্ধ পৌষসংক্রান্তি নবান্ন ও মহাস্নানেরও
শেষ হল পৌষ মাস। পৌষ মাসের সংক্রান্তিকেই বলা হয় 'উত্তর সংক্রান্তি' বা 'মকর সংক্রান্তি'। বৃহস্পতিবার মকর সংক্রান্তি। সূর্য এদিন ধনু রাশি থেকে মকররাশিতে প্রবেশ করে। এদিনই 'উত্তরায়ণে'র শুরু।
এই দিন মহাস্নানেরও মহালগ্ন। সংক্রান্তির স্নানশেষে ঠান্ডায় কাঁপতে-কাঁপতে ধানখেতে আগে থেকেই তৈরি করে রাখা 'খড়ের বুড়িমা'র ঘরে আগুন দিয়ে গ্রাম জুড়ে সেই আগুনের আঁচ পোয়ান মানুষ।
মহাস্নান উপলক্ষে সাগরদ্বীপে মকর সংক্রান্তি মেলার আসর বসে। বহুজনের আনন্দসমাগমে প্রাণিত হয়ে থাকে মেলাপ্রাঙ্গণ। সাধারণ গৃহস্থ থেকে দেশের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সন্ন্যাসীবৃন্দ এদিন এখানে স্নানে আসেন। বিশ্বাস, এদিনের স্নানে মহাপুণ্য সঞ্চয় হয়, মুছে যায় জীবনের ক্লেদ। অমৃতের আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে মর-অস্তিত্ব।
কথিত আছে, এদিনই শ্রীবিষ্ণু অসুরবধ করে অসুরদের কাটামুণ্ড মন্দিরা পর্বতে পুঁতে দিয়েছিলেন। তাই মকরসংক্রান্তির দিনই অশুভ শক্তির বিনাশ হয়ে শুভ শক্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বলে মনে করা হয়।
মাঘ থেকে আষাঢ়-- এই ছ'মাস উত্তরায়ণ। মনে করা হয়, এটা শুভ সময়। মকর সংক্রান্তির এই শুভতিথিতেই শরশয্যায় শায়িত পিতামহ ভীষ্ম ইচ্ছামৃত্যু বরণ করেছিলেন। শাস্ত্র মতে, উত্তরায়ণে মৃত্যু হলে মুক্তিপ্রাপ্তি ঘটে।
সারা দেশে মকরসংক্রান্তি-র যে অনুষঙ্গ, বাংলায় তা কিছুটা আলাদা। পৌষসংক্রান্তির সঙ্গেই এখানে মিলে গিয়েছে নবান্নের অনুষঙ্গ। নতুন ফসলের উৎসব। শস্যোৎসব। নবান্নের ঘ্রাণ। নতুন ধানের ঘ্রাণ। নতুন ফসলের ঘ্রাণ। গ্রামবাংলার ঘরে এদিন ফসল ওঠে। উদযাপন হয় সেই ফসলের।
এদিন বাংলার ঘরে-ঘরে বাঁধা হয় 'আউনি-বাউনি'। খেতের পাকা ধান প্রথম ঘরে তোলা উপলক্ষে কৃষক পরিবারে এদিন এক অনুষ্ঠান পালিত হয়। এদিন দু'তিনটি ধানগাছ বিনুনির মতো করে জড়িয়ে 'আউনি-বাউনি' তৈরি করা হয়। সঙ্গে থাকে মুলোফুল, সরষেফুল, আমপাতা ইত্যাদি। এই 'আউনি-বাউনি' ধানের গোলা, ঢেঁকি, বাক্স-প্যাঁটরা-তোরঙ্গ ইত্যাদির উপর এবং ঘরের চালে গুঁজে দেওয়া হয়। বছরের এই প্রথম ফসলকে পবিত্র ও সৌভাগ্যদায়ক মনে করে একটি পাত্রে সারা বছর ধরে তা সংরক্ষণও করা হয়।
পৌষের সংক্রান্তি মানেই পিঠেপুলি-পায়েস দিয়ে রসনাতৃপ্তির দিনও। মুগপুলি, ভাজাপুলি, দুধপুলি, চন্দ্রপুলি, সেদ্ধপুলি-- কত রকম যে পিঠে! থাকে পাটিসাপটা, গোকুলপিঠে, পোস্তপিঠে, নারকেল পিঠে, সরুচাকলিও। ময়দা, চালগুঁড়ো, দুধ, খোয়া ক্ষীর, নারকেল কোরা, চিনি, নলেনগুড়, এসব দিয়ে বৎসরান্তে একবার তৈরি পিঠে অমৃতের মতোই লাগে।