বিস্ফোরণ কেড়েছে বাবা-স্বামী-ভাইকে, গ্রামজুড়ে শুধুই শ্মশানের নিস্তব্ধতা
কমলাক্ষ ভট্টাচার্য: প্রতিদিন সকালে গ্রামবাসীর ঘুম ভাঙত মসজিদের আজানে। কিন্তু এদিন সকালে এনায়েতপুরের মোমিনপাড়া গ্রামের মসজিদের আজানের সুরটা ছিল খুব করুন। উত্তরপ্রদেশের ভাদোহিতে কার্পেট কারখানায় বিস্ফোরণের জেরে প্রাণ হারিয়েছেন এই গ্রামের ৮ শ্রমিক। সেই খবর গ্রামে পৌঁছনোর পরই গ্রামজুড়ে শ্মশানের নিস্তব্ধতা।
গ্রামের কারও বাড়িতে আজ হাঁড়ি চড়েনি। গ্রামজুড়ে শুধুই কান্নার রোল। বুকফাটা হাহাকার। কাঁদছে সারা গ্রাম। কোনও পরিবারে বাবা, কোনও পরিবারে স্বামী, কোনও পরিবারে দাদা বা ভাই, বিস্ফোরণের জেরে প্রাণ হারিয়েছেন বাড়ির মানুষগুলো।
কারোও মেয়ের বয়স ৪ মাস। সেই দুধের শিশুকে কোলে নিয়ে অঝোরে কেঁদে চলেছে যুবতী মা। ৪ মাসের একরত্তি মেয়ে জানেও না কী ঘটে গিয়েছে! অবাক চোখে দেখছে, মা তাকে কোলে নিয়ে কেঁদেই চলেছে... কোনও পরিবারের ৩ ভাই-ই কার্পেট বোনার কাজে পাড়ি দিয়েছিলেন ভিন রাজ্যে। বাড়ির পুরুষদের হারিয়ে আজ প্রতিটি পরিবারে শুধুই অসীম শূন্যতা।
স্থানীয় বাসিন্দা বলছেন, প্রজন্ম ধরে কার্পেট বোনার কাজ করে আসছেন গ্রামের পুরুষরা। আগে বাইরে থেকে কাঁচামাল এনে এখানেই কার্পেট (স্থানীয় ভাষায় গালিচা) বোনা হত। ভালো রোজগার হত। কিন্তু বিগত বেশকিছু বছর ধরে আর তেমন লাভের মুখ দেখতে পারছিলেন না গ্রামের যুবকরা। কার্পেটের বদলে গামছা বোনা শুরু করেছিলেন বটে, কিন্তু তাতেও অবস্থা ফেরেনি।
আর তাই গত ৩০--৩৫ বছর ধরে উত্তরপ্রদেশে যাওয়া শুরু করেন গ্রামের যুবকরা। ভাদোহি, রোটারা এলাকায় কার্পেট বোনার অনেক কারখানা। সেখানে কাজ করলে মজুরিও ভালো মেলে। একটু বেশি রোজগার, লাভের মুখ দেখার আশায় ফি বছর প্রায় ৫০০ যুবক এনায়েতপুর মোমিনপুর থেকে কার্পেট শ্রমিক হিসেবে উত্তরপ্রদেশে পাড়ি জমায়।
শনিবার সকাল ১১টা নাগাদ বিস্ফোরণ ঘটে ভাদোহির কার্পেট কারখানায়। তার মিনিট ১০-১৫-র মধ্যেই দুঃসংবাদ এসে পৌঁছয় মালদার গ্রামে। দাবালনের মত সেই খবর ছড়িয়ে পড়ে গোটা গ্রামে। বিস্ফোরণের জেরে আতাউর মোমিন, আবদুল গফ্ফর, মহম্মদ সুভান আনসারি, ইসরাফিল মোমিন, আবদুল কালাম মোমিন, আলমগির মোমিন, আজাদ মোমিন, আবদুল কাদির, মোসাওয়ার নামে মালদার ৯ শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেন।