`অপুকে হারিয়ে আজ আমরা অনাথ, ইতিহাসের অবসান`, শোকবার্তা মুখ্যমন্ত্রীর

Sun, 15 Nov 2020-4:02 pm,

নিজস্ব প্রতিবেদন : বাংলা তথা সারা ভারতের অভিনয় জগতে নক্ষত্রপতন। ৪০ দিনের দীর্ঘ লড়াই শেষে হার মানলেন ফেলুদা। চলে গেলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্য়ায়। প্রবাদপ্রতিম অভিনেতার প্রয়াণে শোকস্তব্ধ আপামর বাঙালি থেকে সিনেমাপ্রেমী, সংস্কৃতিমনস্ক সকল মানুষ। এদিন হাসপাতালে দাঁড়িয়ে প্রয়াত অভিনেতাকে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "আমরা এক ইতিহাসকে হারালাম। যে শিখরে তিনি উঠেছিলেন, তার জন্য অনেক অধ্যবসায়, লড়াই লাগে।"

 

রবিবার রাত থেকেই অচল হয়ে গিয়েছিল মস্তিষ্ক। ব্রেন ডেথ হয়েছিল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের। হাসপাতালের তরফে সোমবার বেলা ১২টা বেজে ১৫ মিনিটে তাঁর মৃত্যুসংবাদ ঘোষণা করা হয়। রবিবার রাত থেকেই উত্তোরত্তর খারাপ হচ্ছিল বর্ষীয়ান অভিনেতার শারীরিক পরিস্থিতি। চিকিত্সায় আর সাড়া দিচ্ছিলেন না তিনি। সোমবার সকাল থেকেই হাসপাতালে একের পর আসতে শুরু করেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, ইন্দ্রনীল সেন, মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়, কমিশনার অনুজ শর্মা প্রমুখ।

 

এদিন বেলভিউ হাসপাতালেই অভিনেতাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে আসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "কোভিড থেকে সেরে ওঠার পর বেলভিউতে যখন ওনার সঙ্গে শেষ দেখা ও কথা হয় আমার, তখন বেশ ভালোই লেগেছিল ওনাকে। ভেবেছিলাম ভালো হয়ে যাবেন উনি। কিন্তু শেষ কদিন ধরে শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে। আজ আমরা ফেলুদাকে হারালাম।" 

মুখ্যমন্ত্রী জানান, কেওড়াতলা মহাশ্মশানে শেষকৃত্য হবে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের। সেখানেই রাজ্য সরকারের তরফে গার্ড অফ অনার দেওয়া হবে সৌমিত্রবাবুকে। হাসপাতাল থেকে দেহ নিয়ে প্রথমে যাওয়া হবে গল্ফগ্রিনের বাড়িতে। সেখান থেকে টালিগঞ্জের টেকনিশিয়ান স্টুডিয়ো হয়ে আসা হবে রবীন্দ্রসদনে। সাধারণ মানুষ থেকে তাঁর অগনিত ভক্তদের শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের জন্য রবীন্দ্রসদনে ২ ঘণ্টা শায়িত থাকবে প্রবাদপ্রতিম অভিনেতার মরদেহ।" 

 

অভিনেতার প্রয়াণের পর এক শোকবার্তায় মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, "বাংলার তথা ভারতের  চলচ্চিত্র  জগতের কিংবদন্তী নায়ক সৌমিত্র  চট্টোপাধ্যায় আমাদের ছেড়ে চলে যাওয়ায় বাংলার সকল মানুষের হয়ে আমি আমাদের গভীর মর্মবেদনা প্রকাশ করছি।  তিনি আজ কলকাতায়  শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। যে প্রতিভাবান  মানুষদের জন্য বিশ্বের দরবারে আমরা প্রতিনিধিত্ব পেয়েছি,  সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় তাঁদের মধ্যে অগ্রগণ্য ছিলেন।

জগৎবরেণ্য চিত্রপরিচালক সত্যজিৎ রায়ের চোদ্দটি ছবি সহ  তিনি  দু'শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলি হল অপুর সংসার, চারুলতা, অভিযান, অরণ্যের দিনরাত্রি, অশনি সংকেত, সোনার কেল্লা, জয় বাবা ফেলুনাথ, হীরক রাজার দেশে, ঘরে বাইরে, গণশত্রু,  গণদেবতা, ঝিন্দের বন্দী, তিন ভুবনের পারে, ক্ষুধিত পাষাণ, কোনি ইত্যাদি। 

বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়  একাধারে ছিলেন প্রবাদপ্রতিম চলচ্চিত্র ও মঞ্চাভিনেতা, পাশাপাশি অসামান্য বাচিক শিল্পী, কবি, লেখক, নাট্যকার এবং নাট্যনির্দেশক।"

"পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে ২০১২ সালে সারা জীবনের অবদানের জন্য  চলচ্চিত্র পুরস্কার,  ২০১৫ সালে টেলি অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড (হল অফ ফেম) ও ২০১৭ সালে 'বঙ্গবিভূষণ' সম্মানে ভূষিত  করে। এছাড়াও  তিনি  তাঁর অসামান্য অভিনয়ের জন্য পদ্মভূষণ, দাদাসাহেব  ফালকে পুরস্কার,  বিএফজেএ অ্যাওয়ার্ড, ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড, সংগীত নাটক অ্যাকাডেমি টেগোর রত্ন অ্যাওয়ার্ড  সহ বিভিন্ন পুরস্কার পেয়েছেন। ফ্রান্স সরকার শ্রীচট্টোপাধ্যায়কে ২০১৮ সালে তাঁদের সর্বোচ্চ সম্মান-  'লিজিয়ন দ্য অনার'- এ  ভূষিত করে।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার বিশেষ শ্রদ্ধা ও প্রীতির সম্পর্ক ছিল। আমাদের আমন্ত্রণে তিনি বঙ্গবিভূষণ পুরস্কার গ্রহণ করতে নজরুল মঞ্চে যেমন আমাদের সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন, আবার পাশাপাশি কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে উপস্থিত থেকেছেন। তাঁর সসম্মান ও মর্যাদাপূর্ণ,  আন্তরিক ব্যবহারে তিনি সকল সময়ে আমাদের চিত্ত স্পর্শ করেছেন। 

তাঁর মৃত্যু বাংলার জনজীবনে এক অপূরণীয় শূন্যতার সৃষ্টি করল। আমি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের  পরিবার-পরিজন ও অসংখ্য অনুরাগীর প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি ।"

'অপু'র প্রয়াণে ভারাক্রান্ত মুখ্যমন্ত্রী টুইটারে লেখেন, "আজ থেকে বাংলা চলচ্চিত্র জগত্ অনাথ হয়ে গেল।"

মৃত্যুকালে প্রবাদপ্রতিম অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। কোভিডের সংক্রমণ থেকে সেরে উঠলেও মাল্টিঅর্গান ফেলিওর হয় তাঁর।

ZEENEWS TRENDING STORIES

By continuing to use the site, you agree to the use of cookies. You can find out more by Tapping this link