অদ্ভুত নিয়মের ফাঁস! ছ`মাস ধরে বিমানবন্দরে বন্দি সিরিয়ার যুবক

Fri, 10 Aug 2018-5:38 pm,

২০০৬-এ সিরিয়া ছেড়েছিলেন হাসান আলি কোন্তার। তার পর ২০১৬ পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতে ছিলেন। বছর দশেক ধরে আরবের এক বিমা সংস্থায় কাজ করেছেন হাসান। কিন্তু আচমকাই তাঁর ওয়ার্ক ভিসার মেয়াদ শেষ বলে জানায় আরবের প্রশাসন। হাসান জানিয়েছেন, আরবে থাকাকালীন তিনি বারবার সিরিয়ার এমব্যাসির কাছে পাসপোর্ট পূনর্নবিকরণের আবেদন করেছেন। কিন্তু তারা করেনি। পাঁচ বছর ধরে পাসপোর্ট, ভিসা ছাড়া আরবে কাজ করে গিয়েছেন হাসান। তার পর ২০১৭-র জানুয়ারিতে কোন্তারকে হোল্ডিং সেন্টার হিসাবে মালয়েশিয়ায় পাঠানো হয়। সেখানে সে এক বছরের জন্য থাকার অনুমতি পায়।

মালয়েশিয়া সিরিয়ান নাগরিকদের ভিসা দেবে বলে জানিয়েছিল একটা সময়। কিন্তু হাসানের উপর পাঁচ বছর ভিসা ছাড়া বেআইনিভাবে আরবে থাকার অভিযোগ জানিয়েছে সে দেশের সরকার। ইতিমধ্যে মালয়েশিয়ায় তাঁর ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে আসে। প্রথমদিকে ভেবেছিলেন, সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু পরিস্থিতি দিনের পর দিন আরও জটিল হচ্ছে। ৭ মার্চ থেকে মালয়েশিয়ার বিমানবন্দরে বন্দি হাসান। 

দুবার মালয়েশিয়া থেকে অন্য দেশে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন হাসান। প্রথমবার ইকুয়েডর। পরেরবার কম্বোডিয়া। কিন্তু দুই দেশই শেষপর্যন্ত তাঁকে তাদের দেশে থাকার ছাড়পত্র দেয়নি। ফলে ফিরে আসতে হয়েছে সেই মালয়েশিয়ায়। হাসানকে মালয়েশিয়ার সরকারও ব্ল্যাকলিস্ট করেছে। তাই বিমানবন্দরেই তাঁকে থাকতে হবে। যতদিন না কোনও দেশ তাঁকে তাদের দেশে থাকার ছাড়পত্র দেয়। কুয়ালালামপুর এয়ারপোর্টের ট্রানসিট জোন এখন হাসানের স্থায়ী ঠিকানা। বন্দিদশায় সেখানেই তাঁর জীবন কাটছে। নোংরা জামা-কাপড়, বিছানাপত্র ছাড়া করুণ দশায় জীবন কাটাচ্ছেন এই যুবক।

কতদিন আর চেয়ারে শুয়ে রাত কাটানাে যায়! তার উপর টার্মিনালের এসির প্রচণ্ড ঠাণ্ডা। আমেরিকানদের একটা গ্রুপ হাসানকে একখানা কম্বল দিয়েছে দয়া করে। সেটা গায়ে চাপিয়েই থাকে সিরিয়ান যুবক। মেঝেতে ঘুমোন। 

প্রিমিয়র লিগের ভক্ত হাসান। মোবাইলে ফুটবল তাঁর সঙ্গী। টার্মিনালের দুটো বাথরুম ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে তাঁর। কিন্তু সেখানে জামা-কাপড় ধোয়ার অনুমতি নেই। যে এয়ারলাইন সংস্থা তাঁকে মালয়েশিয়ায় ফিরিয়ে এনেছিল তারাই হাসানকে তিন বেলা খাবার জোগাচ্ছে। 

এমন বন্দিদশায় মোবাইল তাঁর একমাত্র সঙ্গী। খুব মন খারাপের মুহূর্তে ভিডিও কলে মায়ের সঙ্গে কথা বলেন হাসান। আবার কখনও গানের ভিডিও দেখেন। মাঝে-মধ্যে বেরিয়ে পড়েন কারও কাছে সাহায্য চাওয়ার আশায়। প্রশাসনিক দরবারে ঘুরে ঘুরে তিনি ক্লান্ত। আশার কথা শোনায়নি কেউই। 

সারাদিন একা একা বসে আর তাঁর সময় কাটে না। কখনও গান শোনেন, কখনও একা একা বসে থাকেন, কখনও আবার টার্মিনালের টবে রাখা গাছে জল দেন। কবে ছাড়া পাবেন এই বন্দিদশা থেকে? এমন প্রশ্নের কোনও হদিশ জানেন না হাসান। 

ZEENEWS TRENDING STORIES

By continuing to use the site, you agree to the use of cookies. You can find out more by Tapping this link