মণিরত্নম ৬৫, তাঁর `সন্ত্রাস-ত্রিপদী` বদলে দিল ভারতীয় সিনেমার মুখ

Wed, 02 Jun 2021-8:35 pm,

নিজস্ব প্রতিবেদন- মধ্য ষাটে পৌঁছলেন ভারতীয় পরিচালক মণিরত্নম। তামিল ছবি দিয়ে যাত্রা শুরু করে ৭ টা জাতীয় পুরস্কার তাঁর ঝুলিতে। ভারতীয় ছবিতে তাঁর চিত্রনাট্য, গল্প বলার ধরণ, শুটিং টেকনিক এইসব নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা-সমালোচনার অবকাশ আছে, কিন্তু সন্ত্রাস এবং ভারতীয় জনজীবনে তার প্রভাবকে যেভাবে বড়পর্দায় তিনি ধরেছেন তা আলাদা করে উল্লেখ করতে হয়। 'রোজা','বম্বে','দিল সে' - এই তিনটে ছবিকে বলা হয় মণিরত্নমের 'টেররিজম-ট্রিলজি'। তাঁর এই 'সন্ত্রাস-ত্রিপদী' দিয়েই তিনি বদলে দিয়েছিলেন ভারতীয় সিনেমার মুখ।

ছবির নাম- 'রোজা'। দক্ষিণী অভিনেতা মধু আর সঙ্গীতশিল্পী মিনমিনির 'দিল হ্যায় ছোটাসা, ছোটি সি আশা' মাতিয়ে দিল গোটা ভারত। সঙ্গে অরবিন্দ স্বামী। ডবল ভার্সান ছবিতে দক্ষিণের নায়ক-নায়িকাদের এনে যেমন স্বাদ-বদল করলেন, ঠিক তেমনই এমন এক প্রেক্ষিতে গল্প বাঁধলেন, যা সেই সময়ে রাজনৈতিকভাবেও গুরুত্বপূর্ণ। রোজার স্বামী ঋষিকে অপহরণ করে জম্মু-কাশ্মীরে নিয়ে যায় সন্ত্রাসবাদীরা। তামিল-কন্যা পাড়ি দিলেন বরফে ঢাকা কাশ্মীরে, স্বামীকে খুঁজে বের করার জন্য। ছবির এই গল্পের মধ্যেই প্রধান অংশ হয়ে ওঠে সেই সময়ের উত্তাল জম্মু-কাশ্মীরের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। আর তা কীভাবে সাধারণ একটি মেয়ের জীবনকে প্রভাবিত করে, সেই কাহিনিই 'রোজা'।এই ছবি ৩টে জাতীয় পুরস্কার জিতে নেয়। জাতীয় সংহতির উপর সেই বছর সেরা ছবি মনোনীত হয় 'রোজা'।

মণিরত্নমের ট্রিলজির দ্বিতীয় ছবি 'বম্বে'। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের প্রেক্ষিতে তৎকালীন বম্বে শহরের রায়টকে ঘিরে অরবিন্দ স্বামী-মনীষা কৈরালাকে নিয়ে ছবি।  মুসলিম কন্যা ও হিন্দু ছেলের ভালবাসার গল্প। প্রেক্ষাপট সেইসময়ের রাজনীতি। বক্স অফিসে সুপারহিট হওয়ার পাশাপাশি এই ছবি সমালোচকদের প্রশংসাও কুড়িয়েছিল। ছবি রিলিজের পর সামাজিক প্রতিরোধের মুখেও পড়েন মণিরত্নম।সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় ছবির মুক্তি আটকে দেওয়া হয়। মণিরত্নমের বাড়িতে বোমা মারা হয়েছিল। ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউটের বিচারে সেরা ২০ ভারতীয় ছবির তালিকায় আছে 'বম্বে'।

মণিরত্নমের 'সন্ত্রাস-ত্রিপদী'র তৃতীয় ছবি 'দিল সে'। এবার কাহিনি গিয়ে পড়ল উত্তর-পূর্ব ভারতে। ছবির নায়ক-নায়িকা এই পর্বে এক সাংবাদিক ও এক রহস্যে ঘেরা নারী। শাহরুখ খান ও মনীষা কৈরালাকে নিয়ে সিনেমাটোগ্রাফার সন্তোষ শিবন এমন সব সিচুয়েশন শ্যুট করলেন, যা ভারতীয় ছবির মাউন্টিংকেই বদলে দিল। তবে সেই সময় মেইনস্ট্রিম ছবির দর্শক এই ধরণের ছবি দেখতে প্রস্তুত ছিলেন না। অনেকেই 'দিল সে'কে মণিরত্নমের প্যারালাল বা সমান্তরাল ছবি বলে থাকেন। প্রসঙ্গত, মণিরত্নমের সময়েই দক্ষিণী ছবির একাধিক সৃষ্টিশীল মানুষ যুক্ত হলেন হিন্দি বলয়ের সঙ্গে। রামগোপাল ভার্মা, বালাচন্দর, তিঘমাংশু ধুলিয়া, সন্তোষ শিবন........তালিকাটা নেহাত ছোট নয়।

'যুবা', ঋতুপর্ণ ঘোষের মত অনেকেই বলেন, এটি মণিরত্নমের সবথেকে আন্ডাররেটেড ছবি। 'যুবা'র মুক্তির পর ঋতুপর্ণ বলেন, 'এটি এমন ছবি যা আমাদের আন্তর্জাতিক আঙিনায় নিয়ে যেতে পারে। যুবাতে বিনোদন ও সামাজিক বার্তা ঠিক পরিমাণে দেওয়া হয়েছে'। মুম্বইয়ে তখন ক্রস-ওভার ফিল্ম নিয়ে খুব আলোচনা চলছে। ঋতুপর্ণের মতে, 'যুবা' ক্রস-ওভার ছবির সঠিক নিদর্শন।

 ২০০৪য়ে এই ছবির শুটিং চলাকালীন হৃদ-সমস্যায় আক্রান্ত হন মণি। ভর্তি হতে হয় হাসপাতালে। কলকাতার দ্বিতীয় হুগলি ব্রিজে শুটিং করছিলেন অভিষেক বচ্চন ও অজয় দেবগনকে নিয়ে। শুটিং শেষে ভর্তি হন হাসপাতালে।

'যুবা' ছবির তিন বছর পর  আবারও অভিষেক বচ্চনের সঙ্গে জুটি বাঁধলেন মণিরত্নম। এবার ধীরুভাই আম্বানির জীবন নিয়ে ছবি। ছবির নাম 'গুরু'। অভিনয় করলেন অভিষেক বচ্চন ও ঐশ্বর্যা রাই বচ্চন। এই ছবির চিত্রনাট্য এক নতুন অভিষেককে নিয়ে এল দর্শকদের সামনে। 

বীর মুন্ডাকে মনে আছে। মণিরত্নমের সেই ছবি, রামায়ণ মহাকাব্যের প্রেক্ষাপটে লেখেন  'রাবণ'। এক পুলিস অফিসারের স্ত্রীকে অপহরণ করে নিয়ে যায় বীর মুন্ডা। তাকে ভালোবেসেও ফেলে সে। কিন্তু ছবির এক প্রান্তে এসে পুলিস অফিসারের স্ত্রীকে ছেড়েও দেয় সে, যখন বুঝতে পারে মহিলা তার প্রেমে পড়ছেন, তাকে ভালোবেসে ফেলছেন। বিশ্বাসঘাতকতা আর প্রতিহিংসার এই কাহিনিতে রাবণ ই হয়ে ওঠে নায়ক, এখানে যেন মধুসূদনের অনুসারী মণিরত্নম।

অনেকেই বলেন, মণিরত্নমের ছবির সাফল্যে সঙ্গীত পরিচালক এ আর রহমানের অবদানও কম নয়। তবে দক্ষিণের ছবির বড় ফরম্যাট মুম্বইয়ে নিয়ে এসে তার বিষয়বস্তুকে রিয়েলিজম দিয়ে মুড়ে দেওয়াই পরিচালক হিসাবে  মণিরত্নমের সবথেকে বড় অবদান। শুভ জন্মদিন মণিরত্নম।

ZEENEWS TRENDING STORIES

By continuing to use the site, you agree to the use of cookies. You can find out more by Tapping this link