বিষ্ণুকে স্মরণ করে পালন করুন এই একাদশী, সমৃদ্ধিতে ভরে উঠবে জীবন
বশিষ্ঠ মুনি এই ব্রতের কথা রামকে বলেছিলেন। আবার শ্রীকৃষ্ণ এই ব্রতের গুরুত্বের কথা যুধিষ্ঠিরকে বলেছিলেন। সারা বছরের ২৪টি একাদশীর মধ্য়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মোহিনী একাদশী। বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের ১১ তম দিবসে এই মোহিনী একাদশী পালিত হয়। এই বছর তিথিটি এমন ভাবে পড়েছে তাতে দু'দিনই, মানে আজ, শনিবার ২২ মে এবং আগামি কাল রবিবার ২৩ মে-ও এটি পালন করা যাবে।
ভগবান বিষ্ণু এই একাদশী তিথিতে মোহিনীবেশে প্রতিভাত হয়েছিলেন। তাই এই একাদশীর এরকম নাম। সুখ ও সমৃদ্ধির জন্য মানুষ এই একাদশীতে বিষ্ণুর আরাধনা করেন। এই একাদশী ব্রত পালন করে যুধিষ্ঠির লাভ করেছিলেন অতুল ঐশ্বর্য।
সমুদ্রমন্থন শেষে ক্ষীরসাগর থেকে অমৃতকলস হাতে উঠে এসেছেন ধন্বন্তরি। কিন্তু অসুরেরা ছিনিয়ে নিয়েছে সেই কলস। অমৃতের প্রকৃত অধিকার কার, সেই দ্বন্দ্বে মত্ত দেবাসুর। সেদিন ছিল বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের একাদশ। অমৃত-দ্বন্দ্ব ঘোচাতে বিষ্ণুই সাগরপারে আবির্ভূত হলেন এক অপরূপা নারীরূপে।
মোহিনী একাদশী ব্রতের দুই প্রকার ভেদ আছে। একটি মুখ্য মোহিনী একাদশী বা মোহিনী একাদশী, অন্যটি গৌণ একাদশী। মোহিনীর অসামান্য রূপে মুগ্ধ হয়েছিলেন শিব। কথিত আছে, দেবাদিদেবও তাঁর কামনা সংযত করতে পারেননি, তিনি বলপূর্বক সম্ভোগ করেছিলেন মোহিনীকে। সেই ঘটনা স্মরণে রেখে মোহিনী একাদশী ব্রতের পরের দিনেও সন্ন্যাসীরা বিশেষ করে পালন করেন গৌণ মোহিনী একাদশী ব্রত।
এই ব্রতের দিন সকালে তিল এবং কুশ নিয়ে স্নান সেরে শুদ্ধবস্ত্রে ব্রত পালনের সঙ্কল্প করতে হয়। বিষ্ণুমূর্তি বা শ্রীকৃষ্ণের ছবির সামনে প্রদীপ জ্বেলে তুলসী, ফুল-চন্দন, তিল-ফল অর্পণ করতে হয়। সারা দিন বিষ্ণুর নামগান সঙ্কীর্তন করতে বা শুনতে হয়। পরের দিন পারণের সময়ে ব্রাহ্মণকে দান করে ব্রত এবং উপবাস ভঙ্গ করতে হয়।
এই ব্রতের সঙ্গে রয়েছে আর এক গল্প। অতীতে সরস্বতী নদীর তীরে ভদ্রাবতী অঞ্চলে ধনপাল নামে এক বড় ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি খুবই মহত্ ছিলেন। দানধ্যান করতেন। তাঁর পাঁচ ছেলে। কিন্তু জ্যেষ্ঠ সন্তানটি যথেষ্ট ভদ্র ছিল না। এই ছেলে বড় হয়ে কী করবে, এই নিয়ে তাঁর দুশ্চিন্তা ছিল। ছেলেকে তিনি অনেক বুঝিয়েছিলেন। কিন্তু লাভ হয়নি। তিনি তাঁকে ত্যজ্যপুত্র করলেন এবং বনে পাঠিয়ে দিলেন। সেখানে ওই ছেলেটি কৌণ্ডিন্য নামের এক সাধুর দেখা পেলেন। এবং তাঁকে তাঁর জীবনের সব কথা বললেন। এই সাধুই তাঁকে মোহিনী একাদশীর ব্রত করতে বললেন। সেই মতো এই ব্রত পালন করে ধনপালের জ্যেষ্ঠ সন্তান ধীরে ধীরে সুমতির অধিকারী হলেন।
মোহিনী একাদশী তিথি শুরু হয়েছে আজ শনিবার ২২ মে সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে। ২৩ মে সকাল ৬টা ৪২ মিনিটে মোহিনী একাদশী তিথি শেষ হবে। এই ব্রতের পারণ হবে ২৩ মে দুপুর ১টা ৪০ মিনিট থেকে বিকেল ৪টে ২৫ মিনিটের মধ্যে। গৌণ মোহিনী একাদশী তিথি থাকবে ২৩ মে সারাদিন। এর পারণ হবে ২৪ মে ভোর ৫টা ২৬ মিনিট থেকে সকাল ৮টা ১১ মিনিটের মধ্যে। তবে অনেকে এ দিনটির উপবাস আগের দিন থেকে মানে, দশমী থেকেই করেন।