গ্যালিলিওর ‘আঙুল রহস্য’
বিজ্ঞানী গ্যালিলিও চেয়েছিলেন, মৃত্যুর পর তাঁর দেহ সমাধিস্থ করা হোক তাসকানির ব্যাসিলিকা দি সান্তা ক্রোসে। সেখানেই তাঁর পিতা এবং পরিবারের সমাধি রয়েছে।
সব ঠিকঠাক থাকলেও কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওখানে তাঁকে সমাধিস্থ করা যায়নি। কারণ, তিনি ছিলেন সমাজের ‘শত্রু’। যে সময় বিজ্ঞান চেতনার উন্মেষ ঘটিয়েছিলেন, সে সময় গ্যালিলিও-কে মেনে নেয়নি। তাঁর মহাকাশ জগত নিয়ে গবেষণা আঘাত হানে তখনকার ক্যাথলিক চার্চগুলির উপর। রাতারাতি গ্যালিলিও ‘সত্যকে মিথ্যা’ বানিয়ে ফেলছেন এই অভিযোগে একঘরে করে দেওয়া হয় তাঁকে।
মৃত্যুর পর তাঁর শেষ ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে সামান্য এক চ্যাপেলের ছোট্ট ঘরে সমাধিস্থ করা হয় গ্যালিলিও-কে।
এরপর অনেকটা সময় পেরিয়ে গিয়েছে। গ্যালিলিও ফিকে হয়ে গিয়েছেন। প্রায় পাঁচ দশক পর আইজ্যাক নিউটন যখন তাঁর বই ‘ম্যাথমেটিক্যাল প্রিন্সিপলস অব ন্যাচারাল ফিলোজফি’-এ গ্যালিলিওর গবেষণা পত্র সত্যি বলে সিলমোহর দেন, তখন ফের টনক নড়ে ‘ধর্মগুরু’দের।
পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে এই ধ্রুব সত্য যখন গ্যালিলিও প্রমাণ করেছিলেন তখন মানতে রাজি হননি সে সময়ের ক্যাথলিক চার্চের প্রধানরা।
কিন্তু নিউটন প্রমাণ করে দেখিয়েছিলেন গ্যালিলিও-ই ঠিক। ১৭১৮ সালে সমস্ত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয় গ্যালিলিও -র উপর।
এরপর ১৭৩৭ সালে পুনরায় সমাধি থেকে গ্যালিলিও-র দেহকে তুলে ব্যাসিলিকা দি সান্তা ক্রোসে সমাধিস্থ করা হয়।
সমাধিস্থ করার সময় গ্যালিলিওর হাতের তিনটি আঙুল, দাঁত এবং শরীরের হাড় সংগ্রহ করে রাখেন তাঁর অনুরাগীরা।
ইউনিভার্সিটি অব পাদুয়ায় গ্যালিলিও-র সেই হাড় সংরক্ষণ রয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক বছর ধরে শিক্ষকতা করিয়েছেন গ্যালিলিও।
কিন্তু তাঁর দাঁত এবং আঙুল একের পর এক হাতবদল হতে থাকে।
২০০৯ সালে এক নিলামে সপ্তদশ শতাব্দীর একটি বাক্স কেনেন অ্যালব্র্যাটো ব্রুসচি নামে এক ব্যক্তি।
অ্যালব্র্যাটো এবং তাঁর মেয়ে সেই বাক্স খুলে দেখলেন, সেখানে রয়েছে দাঁত এবং তিনটি আঙুল। তাঁদের বুঝতে অসুবিধা হয়নি এই ‘সম্পদ’গুলি গ্যালিলিওরই।
সত্যতা যাচাই করতে তাঁরা জাদুঘরে পাঠান ওই বাক্সটি। অনেক গবেষণার পর প্রমাণ হয় শরীরের অঙ্গগুলি গ্যালিলিওরই।
ব্যাসিলিকা দি সান্তা ক্রোস-এ মুসিও গ্যালিলিও জাদুঘরে গেলেই দেখতে পাবেন ডিম্বাকৃতি কাচের মধ্যে রাখা গ্যালিলিওর মধ্যমা আঙুলটি। এই জাদুঘরের অদূরেই রয়েছে তাঁর সমাধি।
কত সময় পেরিয়ে কত হাত বদল হয়ে শেষে গ্যালিলিও-র সমাধির কাছেই ফিরে এল তাঁর হাতের আঙুল। যে হাত দিয়েই প্রথম ব্রহ্মাণ্ডের পরিচিতি ঘটিয়েছিলেন তিনি।