Nature Photography Day: দেখো রে, নয়ন মেলে জগতের বাহার...
আমাদের চারপাশের প্রকৃতির পদে পদে বিস্ময়। কবিরা সেই সব সুন্দরের উপাসনা করে কত কাব্য রচনা করেছেন। সেখানে তবু অতীন্দ্রিয় উপাদান কিছু থাকলেও থাকতে পারে। কিন্তু কিছু কিছু গদ্যেও এই বিশ্ব প্রকৃতির সহজ সৌন্দর্যকে এমন ভাবে তুলে ধরা হয়েছে, যাতে আমরা বুঝি, সৌন্দর্য আমাদের হাতের কাছেই। যেমন 'পথের পাঁচালী' উপন্যাসে বিভূতিভূষণ সাধারণ গ্রাম্য প্রকৃতির গহনে এত অনাবিল মাধুর্যের সন্ধান করেছেন যে আমাদের চোখ যেন খুলে যায়!
কিন্তু আধুনিক মানুষ শুধু নিজে দেখেই খুশি হয় না, সে তার দেখাটা অন্যকে দেখাতেও চায়। আর তখনই ওঠে ক্যামেরার কথা। কেননা, তা না হলে যে বিশেষ মুহূর্ত বা যে বিশেষ নদী-গাছ-ফুল-পাখি দেখে আমি মুগ্ধ হচ্ছি তাকে চিরবন্দি করে রাখব কী করে!
ফলে মানুষ ছবি তুলতে শিখল, ছবি তুলতে লাগল। আর এই করতে-করতেই সে অনুভব করল, প্রকৃতির উপাসনাস্বরূপ এই ছবি তোলার জন্য একটি দিনও উত্সর্গ করা উচিত। আর তখনই এই Nature Photography Day-র ভাবনা।
দিনটির অবশ্য একটি ছোট্ট ইতিহাস আছে। প্রায় শখানেক প্রকৃতির ছবি তুলতে উত্সাহী মানুষদের নিয়ে ১৯৯৪ সালে গড়ে উঠেছিল The North American Nature Photography Association (NANPA)। এই সংস্থার সদস্যরা ভবিষ্যতে নিজেদের একান্ত ভাবে তাঁদের প্যাশনের জন্যই নিবেদিত রাখলেন। দেখতে-দেখতে যখন চক্রটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠল তখনই NANPA Nature Photography Day-র দিন ধার্য করল।
করল, কারণ, প্রকৃতির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হওয়া এবং সেই মুগ্ধতাবোধ থেকে একটি অপূর্ব সুন্দর ছবি তোলা কখনও নিছক একটা টেকনিক্যাল ব্যাপার হতে পারে না। মানুষের মনের নিভৃতে যদি নান্দনিকতার বোধ জাগ্রত না থাকে তবে কখনও বিষয়টি নিয়ে এগনো যাবে না। যাঁদের মনে সেই বোধ আছে তাঁদের খোঁজা, উত্সাহ দেওয়ার লক্ষ্যেই এমন একটি দিন-ভাবনা।
কী করে পালন করা যেতে পারে এমন একটি বিশেষ দিন? আর কিছু না। স্রেফ ক্যামেরাটা গলায় ঝোলান আর বেরিয়ে পড়ুন। বাড়ি থেকে বেরিয়ে পার্কে যান, কোনও বাগানে যান। কাছাকাছি কোনও পাহাড় বা অরণ্যেও যেতে পারেন। গোধূলির লাল আকাশের ছবি--তা-ও হতে পারে আপনার উপভোগ করা এক সেরা মুহূর্ত!
কিন্তু প্রকৃতির ছবি তুলতে গেলে অক্লান্ত হেঁটে যেতে হবে। প্রকৃতিকে সঙ্গে নিয়েই হেঁটে যেতে হবে। তাই এজন্য কোনও নেচার সাফারির অংশ হতে পারেন।
কিংবা চলে যেতে পারেন মরুপ্রান্তরে। যেখানে বিস্তীর্ণ বালুকারাশির স্তূপ ভেঙে ভেঙে চলেছে উটের সারি। গোধূলির বিষণ্ণ আলো উটের পিঠ থেকে পিছলে আসছে।
অথবা কোনও নদীপ্রান্তরে, বা জলাশয়ের পাশে পৌঁছে যেতে পারেন সারা দিনের হাঁটাহাঁটির শেষে। সেখানে হয়তো এমন একটা মুহূর্তকে আপনি ফ্রেমবন্দি করতে পারবেন, যা দেখে মনে হবে এর জন্য়ই বুঝি সারাদিন হেঁটেছেন।
আর রইলই তো সুদূর কোনও অরণ্যের ডাক। ছায়াঘন বনপথ, নির্জন, আলো-আঁধারিতে মায়াময়। সেখানেও আপনার গলার ক্যামেরাটা একটা মিষ্টি শব্দ তুলবে-- ক্লিক!
আর যেতে পারেন শহরগ্রাম, সড়ক ছাড়িয়ে, নদী-জনপদ এড়িয়ে, আরও দূরে গভীর কোনও সমুদ্রের নীলনিবিড় জলরাশির হাতছানিতে।
আর যদি আর একটু বেশি সময় হাতে থাকে। মনে থাকে অ্যাডভেঞ্চারের তাড়না। তা হলে আর কী, চলুন, ওই সুদূরে মাথা তুলে আপনারই জন্য অপেক্ষমাণ চিরসুন্দর মহাপর্বত। সার্থক হোক ছবিদিবস।