এখন আমরা লাশ গোনা ছেড়ে দিয়েছি, নিউ ইয়র্কের ভয়াবহ অবস্থার বর্ণনা করলেন এক তরুণী
রাত নামলেও দিনের মতো আলো থাকত সেখানে। আমেরিকানরা গর্ব করে বলতেন, পৃথিবীর সেরা শহর নিউ ইয়র্ক। এখন সেই শহরের রাস্তা ফাঁকা। ধু ধু করছে চারদিক। কোথাও ভিড় নেই। একা একেকটা দৈত্যের মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে বিল্ডিংগুলো। আলো জ্বলছে। কিন্তু গোটা শহরে যেন এক মায়াবী অন্ধকার। মানুষের দীর্ঘশ্বাস।
কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আমেরিকা যেন মৃত্যুপুরী হয়ে উঠেছে। আর এই পরিস্থিতির দায় অনেকটাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের। তিনি সঠিক সময়ে লকডাউন করেননি। বলেছিলেন, আমেরিকার জন্ম হয়নি লকডাউন করার জন্য। তাঁর হঠকারীতার জন্য ভুগছে মার্কিন মুলুকের বাসিন্দারা।
মৃত্যুপুরীতে বসবাসের অভিজ্ঞতা কেমন, সেটা এক মার্কিন তরুণী জানালেন সংবাদসংস্থা রয়টার্সকে। স্কাইপেতে একটি ইন্টারভিউতে ২৮ বছর বয়সী অ্যালেক্স মন্টেলিয়ন জানিয়েছেন, নিউ ইয়র্ক সিটির ভয়াবহা অবস্থার কথা। তিনি বলেছেন, প্রেমিক মার্ক কজলোকে নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে তিনি ঘরবন্দি। বাইরে রাস্তা দিয়ে রোজ অগুণতি মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। প্রথমে তারা জানালায় বসে মৃতদেহ গুনতেন। কিন্তু এখন লাশ গোনা ছেড়ে দিয়েছেন। অজানা আতঙ্ক গ্রাস করছে তাঁদের। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।
তিনি বললেন, উইকওফ হাইটস মেডিক্যাল সেন্টার দেখা যায় আমাদের অ্যাপার্টমেন্ট থেকে। ওখানে সারাদিন প্রচুর মানুষ কান্নাকাটি করেন, চিত্কার করছেন। বুঝতে পারছি, ভিতরের পরিস্থিতি কতটা খারাপ। ভয়াবহ দৃশ্য রোজ দেখতে হচ্ছে। এটা একটা মানসিক অত্যাচার। রেফ্রিজেরেটেড ট্রাকে করে রোজ লাশ বহন করে নিয়ে যাওয়া হয় অজানার উদ্দেশে। এখন এই দৃশ্য দেখতে দেখতে চোখ সয়ে গিয়েছে। সেন্ট্রাল পার্ক-সহ শহরের বিভিন্ন জায়গায় এখন অস্থায়ী হাসপাতাল হয়েছে। এমনটা তো দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারিনি কখনও।
মন্টেলিয়ন আরও বলেছেন, আমাদের আত্মীয়রা বারবার বলছে এই শহর ছেড়ে দাও। অন্য কোথাও গিয়ে থাকে আপাততা। কিন্তু এটা আমাদের প্রাণের শহর। নিউ ইয়র্ক আশাবাদীদের শহর। আমরা ভরসা রাখছি। এই পরিস্থিতি হয়তো বেশিদিন থাকবে না। আমরা হয়তো আবার হাসতে হাসতে রাস্তায় হাঁটব। কিন্তূু সেই দিনটা কবে যে আসবে! মৃত্যুমিছিল যে কবে থামবে! আমাদের আগের শহরের সঙ্গে এই শহরের ছবি মেলাতে পারছি না। ভীষণ হতাশ হয়ে পড়ছি। তবে সাহস হারাচ্ছি না। আমরা জিতবই।