শুধু গান্ধী নন, ২ অক্টোবর এই মহাপুরুষেরও জন্মদিন! এই বাঙালি মনীষীকে দেশ কি একেবারেই ভুলেছে?

Soumitra Sen Mon, 02 Oct 2023-5:11 pm,

ইনি গান্ধীর থেকে ৩ বছরের বড়। গান্ধীর জন্ম ১৮৬৯ সালে পোরবন্দরে, আর আমাদের এই মনীষীটির জন্ম ১৮৬৬ সালে, উত্তর কলকাতায়, একই দিনে-- ২ অক্টোবর।  

ইনি স্বামী অভেদানন্দ। রামকৃষ্ণ পরমহংসের সাক্ষাৎ শিষ্য় এবং স্বামী বিবেকানন্দের গুরুভাই। এঁর পূর্বাশ্রমের নাম কালীপ্রসাদ চন্দ্র।   

১৮৮৪ সালে স্কুল ফাইনাল পরীক্ষা দেওয়ার আগে দক্ষিণেশ্বরে রামকৃষ্ণ পরমহংসের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ। 

১৮৮৫ সালের এপ্রিল মাসেই তিনি গৃহত্যাগ করে রামকৃষ্ণের কাছে চলে যান। প্রথমে শ্যামপুকুরে পরে কাশীপুর উদ্যানবাটীতে রামকৃষ্ণের শেষ দিনগুলিতে কালীপ্রসাদ তাঁর সঙ্গেই ছিলেন।

১৮৮৬ সালে গুরুর মৃত্যুর পর কালীপ্রসাদ বরাহনগর মঠের একটি ঘরে ধ্যানে ও পড়াশোনায় ডুবে থাকতে শুরু করেন। এজন্য গুরুভ্রাতারা তাঁকে কালীতপস্বী নাম দিয়েছিলেন। রামকৃষ্ণের মৃত্যুর পর তিনিও স্বামী বিবেকানন্দ ও অন্যান্য গুরুভাইদের সঙ্গে সন্ন্যাস গ্রহণ করেছিলেন। সন্ন্যাসজীবনে তাঁর নাম হল 'স্বামী অভেদানন্দ'!

এরপর স্বামী অভেদানন্দ দশ বছর ভিক্ষাজীবী সন্ন্যাসীর মতো গোটা ভারত ভ্রমণ করেছিলেন। ভ্রমণকালে পওহারী বাবা, ত্রৈলঙ্গস্বামী, স্বামী ভাস্করানন্দ প্রমুখ বিশিষ্ট সন্ন্যাসীদের সংস্পর্শে এসেছিলেন। অভেদানন্দ গঙ্গোত্রী ও যমুনোত্রী ভ্রমণ করে হিমালয়ে কিছুকাল সাধনাও করেন।

১৮৯৬ সালে লন্ডনে অবস্থানকালে স্বামী বিবেকানন্দ তাঁকে ডেকে পাঠিয়ে পাশ্চাত্যে বেদান্তপ্রচারের কাজে নিযুক্ত করেছিলেন। ১৮৯৭ সালে অভেদানন্দ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান। সেদেশে স্বামী বিবেকানন্দের নির্দেশে তিনি নিউ ইয়র্ক বেদান্ত সোসাইটির ভার নেন। সুদীর্ঘ ২৫ বছর ধরে অভেদানন্দ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মেক্সিকো, জাপান ও হংকং ভ্রমণ করে বেদান্ত প্রচার করেন। ১৯২১ সালে হনলুলুতে প্যান-প্যাসিফিক এডুকেশন কনফারেন্সে যোগদানের পরে তিনি ভারতে ফেরেন।

১৯২২ সালে অভেদানন্দ পদব্রজে হিমালয় পার হয়ে তিব্বতে যান। সেখানে বৌদ্ধ দর্শন ও লামাবাদ অধ্যয়ন করেন। হিমিস গুম্ফায় যিশুর অজ্ঞাতবসবাস সংক্রান্ত একটি পাণ্ডুলিপিও আবিষ্কার করেছিলেন তিনি। পাণ্ডুলিপিটি রামকৃষ্ণ বেদান্ত মঠ প্রকাশিত ''স্বামী অভেদানন্দ'স জার্নি ইনটু কাশ্মীর অ্যান্ড টিবেট'' গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯২৩ সালে কলকাতায় 'রামকৃষ্ণ বেদান্ত সোসাইটি' স্থাপন করেন। ১৯২৪ সালে দার্জিলিঙে স্থাপন করেন 'রামকৃষ্ণ বেদান্ত মঠ'। ১৯২৭ সালে তিনি রামকৃষ্ণ বেদান্ত সোসাইটির মুখপত্র 'বিশ্ববাণী' পত্রিকাটি চালু করেন। ১৯৩৬ সালে রামকৃষ্ণ পরমহংসের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে কলকাতার টাউন হলে যে বিশ্বধর্মমহাসভার আয়োজন হয়েছিল সেখানে পৌরোহিত্য করেন তিনি। ১৯৩৯ সালের ৮ সেপ্টেম্বর দার্জিলিঙের তাঁরই প্রতিষ্ঠা করা রামকৃষ্ণ বেদান্ত মঠে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সন্ন্যাসী, ভাবুক, দার্শনিক, কর্মী, সাধক, সংগঠক, লেখক ইত্যকার বহুপরিচয়ে পরিচিত হওয়ার মতো বহুমুখী এই মানুষটি। 

ZEENEWS TRENDING STORIES

By continuing to use the site, you agree to the use of cookies. You can find out more by Tapping this link