বেবি বাম্প, সন্তানের পিতা কে, নুসরত জাহানের জীবনের পরতে পরতে লুকিয়ে রোমাঞ্চ
নিজস্ব প্রতিবেদন: টলিউডের সবচেয়ে চর্চিত অভিনেতা, বিতর্কে ভরা জীবন। ব্যক্তিগত জীবনে চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আজ তিনি সাংসদ-অভিনেতা।
ছবিতে তাঁর সঙ্গীত তনুশ্রী চক্রবর্তী ও শ্রাবন্তী। এক ঘরোয়া পার্টিতে তিনজনেই ক্যামেরাবন্দি হন। নুসরতের বাড়িতেই বসেছিল আসর, হবু মায়ের সঙ্গে আড্ডা জমালেন তাঁর বন্ধুরা। এই ছবি প্রকাশ্যে আসার পর থেকে জল্পনা চলছেই।
সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে এবার প্রকাশ্যে এল নুসরতের বেবি বাম্প। মা হতে চলেছেন সাংসদ, অভিনেত্রী নুসরত জাহান (Nusrat Jahan)। বেশকিছুদিন ধরে তা নিয়েই গুঞ্জন, চর্চা চলছেই। এরই মাঝে লিক হল তাঁর বেবি বাম্পের ছবি।
১৯৯০ সালের ৮ জানুয়ারি পৃথিবীর আলো দেখেন নুসরত। কলকাতায় বাঙালি মুসলিম পরিবারে তাঁর জন্ম হয়। ছেলেবেলা থেকেই বাবার চোখের মণি তিনি। ‘আওয়ার লেডি কুইন অব দ্য মিশন্স’ স্কুলে পড়াশোনা ও তাঁর বেড়ে ওঠা।
ভবানীপুর কলেজ থেকে পড়াশোনা। যদিও নুসরতের হলফনামায় দেখা যায় তিনি উচ্চমাধ্যমিক পাশ, অন্যদিকে লোকসভার সাইটে দেওয়া তিনি অনার্স গ্র্যাজুয়েট। এরপর ২০১০ সালে সুন্দরী প্রতিযোগিতায় সেরা হওয়ার পর নুসরত মডেলিং জগতে পা রাখেন।
ইন্ডাস্ট্রিতে পা রাখেন ২০১১ সালে 'শত্রু' ছবি দিয়ে। প্রথম ছবিতে জিতের বিপরীতে নায়িকা ছিলেন তিনি। প্রথম ছবিতে নায়িকাকে দেখে পছন্দ করেন দর্শক।
২০১২ সালে পার্ক স্ট্রিটের ধর্ষণ কাণ্ডে অভিযুক্ত কাদের খানের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল বহুদিনের। কাদেরকে বাঁচাতে সাহায্যও করেছিলেন নুসরত, এমনও শোনা যায়। বিতর্কে জড়ায় তাঁর নাম। বিভিন্ন সংবাদ-মাধ্যম তাঁর কাছ থেকেই কাদের সম্পর্কে তথ্য পান।
জামশেদপুরের এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত, ছোটোবেলার বন্ধু ভিক্টর ঘোষের সঙ্গে থাকতেন নুসরত। টলিউডের এক প্রযোজকের সঙ্গে তাঁর নাম জড়ানোর পর তিনি প্রকাশ্যেই বলেছিলেন যে তাঁর বন্ধুর সঙ্গে তিনি লিভ ইন রিলেশনশিপে রয়েছেন। তাঁর সঙ্গেই থাকেন। শোনা গিয়েছিল তাঁকে ভিক্টরকে বিয়েও করেছিলেন তিনি। রেজিস্ট্রি হওয়ার ফলে আইনের সাহায্য নিয়ে শেষে ভিক্টরের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ করতে হয়েছিল তাঁকে।
ভিক্টরের সঙ্গে সম্পর্ক থাকাকালীন ভিক্টরের নামে একটি ট্যাটুও করিয়েছিলেন নুসরত। তাঁর বুকে আঁকা এই ট্যাটু বহুবারই চোখ টেনেছে সকলের। তবে ভিক্টরের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর নিখিলের সঙ্গে সংসার পাতার আগে তিনি ভিক্টর বদলে ভিক্ট্রি করে দেন, অর্থাৎ একটি Y যুক্ত করে দেন নায়িকা।
২০১৯ সালের ১৯ জুন ব্যবসায়ী নিখিল জৈনের সঙ্গে তুরস্কে বিয়ে হয় তাঁর। 'রঙ্গোলি' শাড়ির মালিকের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন তিনি। ধুমধাম করে বিয়ে হয় নুসরতের। ফিরে এসে কলকাতার এক পাঁচতারা হোটেলে সারেন রিশেপশন। রাজনৈতিক মহল থেকে টলিউড, হাজির ছিলেন বিশিষ্টরা। দাম্পত্য জীবনের মিষ্টি মুহর্ত মাঝেমধ্যেই ফুটে উঠত সোশ্যাল মিডিয়ায়।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী হন নুসরত জাহান। বিজেপি-র সায়ন্তন বসুকে লক্ষাধিক ভোটে হারিয়ে নির্বাচনে জিতে বসিরহাটের সাংসদ হিসেবে সকল মানুষের মন জিতে নেন। শপথ বাক্য পাঠ করেন এক মাথা সিঁদুর নিয়ে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা পৌঁছে দেন সকলের মধ্য়ে।
দরগায় একসঙ্গে যশ-নুসরতের ছবি ভাইরাল হয়। সেখানে নুসরতের সিঁথিতে সিদুর লক্ষ করেছিলেন নেটিজেনরা। দুজনে মরুভূমিতে ঘুরতে গিয়ে নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়া থেকেই ছবি পোস্ট করেছিলেন। সেই থেকেই চর্চার সূত্রপাত। 'SOS কলকাতা' ছবির শুটিংয়ের সময় একে অপরের কাছাকাছি আসেন দুজনে। সেই সময় থেকেই নিখিলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে তাঁর।
যশ-নুসরতকে গিয়ে টলিউডে চর্চা চলছিলই। সোশ্যাল মিডিয়ায় একে অপরকে ট্যাগ করে ছবি দেওয়া, ছবি সৌজন্যেও ভেসে ওঠে একে অপরের নাম। একসঙ্গে দুজনে 'ডিকশনারি' ছবির প্রিমিয়ারে হাজিরও হন যশ-রত।
দক্ষিণেশ্বরে মদন মিত্রের সঙ্গে নুসরত ও যশের ছবি ভাইরাল হয়, যেখানে দেখা যায় রঙ্গোলির শাড়িতে সেজে উঠেছেন নুসরত। হাতে শাখা পলা, মাথায় সিঁদুর। এর বেশ কিছু আগে থেকেই নিখিলের সঙ্গে থাকা বন্ধ করে দেন অভিনেতা। শোনা যায় এই দিনই যশের সঙ্গে তাঁর বিয়েও হয়।
একুশের বিধানসভা নির্বাচনে প্রচারে সামিল ছিলেন অভিনেতা। অন্তঃস্বত্তা অবস্থায় তিনি ক্যাম্পেন করেছেন। একবার মেজাজও হারিয়েছিলেন অভিনেতা। যদিও যে খবর পরে জানা যায়। ক্যাম্পেনের সময় ঢিলেঢালা জামা পরতেও দেখা গিয়েছিল অভিনেতাকে।
নুসরত অন্তঃস্বত্তা এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই গুঞ্জন শুরু হয়। গত বছর নভেম্বরে নুসরত নিখিলের বাড়ি থেকে চলে আসেন। নিজের গুরুত্বপূর্ণ নথিও সঙ্গে নিয়ে আসেন, বালিগঞ্জের ফ্ল্যাটে থাকা শুরু করেন। সেই থেকেই নিখিলের সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক নেই, জি ২৪ ঘণ্টাকে সেই কথা জানান নিখিল। তবে নুসরতের সন্তানের বাবা কে, তা নিয়েই শুরু হয় জল্পনা।
চারিদিকে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে বিবাহিত না হলে শপথ বাক্য পাঠের সময় কীভাবে নিজেকে 'নুসরত জাহান রুহি জৈন' বলে পরিচয় দিয়েছিলেন নুসরত। আবার লোকসভার ওয়েবসাইটেও তাঁর স্টেটাস সিঙ্গল নয় ম্যারেড, স্বামীর নাম নিখিল জৈন। জল্পনা চলতেই থাকে।
নুসরত বিবৃতি প্রকাশ করে জানান, তাঁর বিয়েই হয় নি, তাঁরা সহবাসে ছিলেন। তুরস্কের বিবাহ আইন অনুসারে ওই বিয়ে ‘অবৈধ’। দুই ভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষের বিয়ের জন্য যে আইন, তা মেনেও নিখিল -নুসরতের বিয়ে হয়নি। তাই অভিনেতা সাংসদের মতে, যেহেতু বিয়েই হয় নি তাই আইনের পথে তিনি হাঁটবেন না। এরপর থেকেই বিভিন্ন মহল থেকে আক্রমণের মুখে পড়েন নুসরত।
এই খবর প্রকাশ্যে আসার পর নিখিল জৈন মুখ খুলেছেন। নুসরতের বিবৃতির পাল্টা দিয়ে তিনি জানিয়েছেন শেষ আট মাস তিনি নুসরতের সঙ্গে থাকেন না, যোগাযোগও নেই। গত নভেম্বরে নিখিলের বাড়ি ছাড়েন নুসরত। ফলে এই সন্তান কার তা নিয়ে কোনও ধারণাই নেই নিখিলের। নিখিল এও জানান নুসরত তাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এনেছেন তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। নুসরতের বাড়ির লোনের কিছু টাকা যে নিখিলের দেওয়া, এর প্রমাণ স্বরূপ ক্রেডিট কার্ড এর স্টেটমেন্টই যথেষ্ট।
বিবৃতি পাল্টা বিবৃতিতে প্রতিদিনই নতুন কোনও তথ্য সামনে আসছে, এরই মাঝে নুসরতের বেবি বাম্পের ছবি লিক হল। যদিও এখনও এই বিষয় স্পিক টি নট নুসরত। কোথাকার জল এখন কতদূর গড়ায় তা বলবে সময়!