সুতোয় ঝুলছে ৪০ লাখের নাগরিকত্ব, দড়ি টানাটানি শাসক-বিরোধীর
সোমবার সকালে এক লহমায় নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেল ৪০ লক্ষের বেশি মানুষের। যদিও এটি খসড়া তালিকা কিন্তু চুড়ান্ত তালিকায় কত জন অন্তর্ভুক্ত হবেন, কত জন বাইরে থাকবে সে নিয়ে শুরু হয়েছে জোর জল্পনা।
সরকারের এই পদক্ষেপে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। থেমে নেই শাসক দলও। তাঁরাও যথাযথ যুক্তি খাঁড়া করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। কেউ বা বিতর্কিত মন্তব্য করে আগুনে আরও ঘি ঢালছেন বলে অভিযোগ করছে অন্য পক্ষ। এবার এক নজরে জেনে নিন, অসমে জাতীয় নাগরিক পঞ্জিকরণ নিয়ে কার কী মন্তব্য?
‘অনুপ্রবেশকারী’ মুসলিম এবং বাংলাদেশি বেআইনিভাবে বসবাস করছে। যদি দেশ না ছাড়ে, তা হলে গুলি করে মেরে দেওয়া উচিত তাদের- এমন বিতর্কিত মন্তব্য শোনা গেল বিজেপি বিধায়ক রাজা সিংয়ের মুখে। মঙ্গলবার বিধানসভায় বিতর্কিত মন্তব্য করেন গোশামহল কেন্দ্রের এই বিজেপি নেতা।
পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি মহিলা মোর্চার নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ক্ষমতায় এলে পশ্চিমবঙ্গ থেকে অনুপ্রবেশকারীদের তাড়িয়ে ছাড়বে বিজেপি।”
অসমের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ বলেন, ''নাগরিকপঞ্জি আমাদের সন্তান। সেটা নিয়ে বিরোধিতা করছি না। আমরা সরকারকে বলছি, সঠিক তথ্য প্রকাশ করুন। এই নাগরিকপঞ্জি ভুলে ভরা''।
তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, ‘‘দেশে সুপার এমার্জেন্সি চলছে। রাজ্যসভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করেছিলাম। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করে নোটিসও দিই। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিবৃতি দেননি। আমরা এর তীব্র নিন্দা করছি।’’ তবে শুক্রবার রাজ্যসভায় বিবৃতি দিয়েছেন রাজনাথ সিং।
তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে ওরা। খ্রিস্টান, মুসলিম, দলিত হলেই আলাদা করা হচ্ছে কেন? বাংলায় এসব হতে দেব না।”
পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ বিধানসভায় সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, “বিজেপি বাংলায় ক্ষমতায় এলে, এ রাজ্যেও এনআরসি প্রয়োগ করা হবে। নাগিরকত্বের প্রমাণ না পেলে বার করে দেওয়া হবে। বাংলাদেশিদের গলাধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হবে।”
অসমের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনওয়াল বলেন, “এই ঐতিহাসিক দিন অসমের জনতার স্মৃতিতে চিরকালের জন্য খোদাই হয়ে থাকবে।”
সোমবার এনআরসি-র চূড়ান্ত খসড়া প্রকাশিত হওয়ার খানিক পরেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, “এখানে সরকার কিছুই করেনি। পুরো প্রক্রিয়া চলেছে সুপ্রিম কোর্টের তত্বাবধানে। যারা সরকারকে নিষ্ঠুর বলে কাঠগড়ায় দাঁড় করচ্ছে, তাদের বক্তব্য ভিত্তিহীন।”
রাহুল গান্ধী সোমবারই টুইটে বলেন, “মনমোহন সরকার অসম চুক্তি রূপায়নের অঙ্গ হিসাবে কাজ শুরু করেছিল, এটা ঠিক। কিন্তু বিজেপি যেভাবে এই কাজটি করল, তা একেবারই অভিপ্রেত নয়।”
কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেন, “৪০ লক্ষ মানুষের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন। তাঁরা ভোট দিতে পারবেন কি না! সেটা স্পষ্ট করুক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।”