Premendra Mitra: কবি, গদ্যকার, চলচ্চিত্রকার প্রেমেন্দ্র মিত্র আজও ছুঁয়ে যান বাঙালিকে
খাঁটি প্রতিভার বাঙালির সংখ্যা হাতে গোনা। অথচ একটা সময়ে বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির জগতে প্রতিভার ছড়াছড়ি ছিল। প্রেমেন্দ্র মিত্র বাঙালির সেই হারিয়ে যাও বিচ্ছুরিত প্রতিভার অন্যতম দৃষ্টান্ত। তিনি একাধারে কবি, ছোটগল্পকার, ঔপন্যাসিক, কল্পবিজ্ঞান রচয়িতা, আবার গোয়েন্দাকাহিনির স্রষ্টা, গীতিকার, চিত্রপরিচালক। আজ, ৪ সেপ্টেম্বর তাঁর জন্মদিন।
১৯০৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর বারাণসীতে প্রেমেন্দ্র মিত্রের জন্ম। তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার রাজপুরে৷ যদিও তাঁরা ছিলেন কোন্নগরের সম্ভ্রান্ত মিত্র বংশ৷
তিনি কল্লোল যুগের প্রতিভূ। বাংলা সাহিত্যে তাঁর বিপুল অবদান। শুধুমাত্র ঘনাদা, পরাশর বর্মা, মেজকর্তা এবং মামাবাবু'র মতো কিছু অবিস্মরণীয় চরিত্রের খাতিরেই তিনি হয়তো চিরকাল বাংলা সাহিত্যপ্রেমীর হৃদয়ে ঠাঁই পাবেন।
ছোটগল্প দিয়েই তাঁর সাহিত্যজীবন শুরু। মানুষের সম্পর্কের ভাঙাগড়া, মানবমনের জটিলতা, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের ব্যথাবেদনার আঁতের কথা নতুন ভাবে ও ভঙ্গিতে অনন্য স্বকীয়তায় প্রকাশ করলেন প্রেমেন্দ্র মিত্র। তাঁর বিখ্যাত ছোট গল্পসংকলনগুলি হল-- 'বেনামী বন্দর', 'পুতুল ও প্রতিমা', 'পুন্নাম', 'তেলেনাপোতা আবিষ্কার'।
প্রেমেন্দ্র মিত্রই প্রথম বাঙালি সাহিত্যিক যিনি নিয়মিত কল্পবিজ্ঞান বা বিজ্ঞান-ভিত্তিক গল্প-উপন্যাস লিখেছেন। 'পিঁপড়ে পুরান' তাঁর প্রথম কল্পবিজ্ঞান রচনা। 'কুহকের দেশে' গল্পে তাঁর কল্পবিজ্ঞান ও অ্যাডভেঞ্চার কাহিনীর নায়ক 'মামাবাবু'র আত্মপ্রকাশ। ১৯৪৮ সালে 'ড্রাগনের নিঃশ্বাস' প্রকাশিত হলে মামাবাবু পাঠকমহলে জনপ্রিয় হয়।
প্রেমেন্দ্র মিত্র সৃষ্ট জনপ্রিয়তম চরিত্র হল ঘনাদা। গল্পবাগীশ সর্বজ্ঞানী মেসবাড়ির ঘনশ্যাম দাস আজও পাঠকের প্রিয়। তাঁর সৃষ্ট আর একটি চরিত্র হল পেশায় গোয়েন্দা নেশায় কবি পরাশর বর্মা।
প্রেমেন্দ্র মিত্রের সৃষ্টিশীলতা বাংলা চলচ্চিত্রের পথেও বয়ে গিয়েছিল। বেশ কয়েকটি ছবি পরিচালনা করেছিলেন তিনি। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হল-- 'পথ বেঁধে দিল', 'চুপি চুপি আসে', 'কুয়াশা', 'হানাবাড়ী'। এছাড়াও তিনি বহু সিনেমার কাহিনীকার ও চিত্রনাট্যকার ছিলেন।
তবে রোম্যান্টিক বাঙালি কিন্তু আজও প্রেমেন্দ্র মিত্রকে মনে রেখেছে একজন অন্য ধারার কবি হিসেবেই। কল্লোলযুগের কবি প্রেমেন্দ্র মিত্রের প্রথম কবিতাগ্রন্থ 'প্রথমা'। তার পর একে একে তিনি বেশ কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ রচনা করেন। তবে আজও তাঁর 'ফেরারী ফৌজ', ও 'সাগর থেকে ফেরা' পাঠককে ছুঁয়ে যায়।