Ramakrishna Paramahamsa: দিনভর পূজা-অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে রামকৃষ্ণ জন্মতিথি পালন বেলুড় মঠে
যথোচিত ভক্তি-শ্রদ্ধার সঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণের জন্মতিথি উৎসব উদযাপিত হল বেলুড় মঠে। ভোর সাড়ে পাঁচটায় মঙ্গল আরতির মধ্যে দিয়ে আজ, ৪ মার্চের পূজার অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। কীর্তন, বেদপাঠ, স্তবগান কথামৃতপাঠ, ধর্মসভা ইত্যাদি নানা অনুষ্ঠানে আয়োজন থাকছে আজ দিনভর। সকাল ছ'টায় বেলুড় মঠের প্রবেশদ্বার উন্মুক্ত হলে ভক্ত এবং দর্শনার্থীদের সমাগম হতে শুরু করে। এই জন্মতিথি উৎসবে ভক্ত ও দর্শনার্থীদের প্রসাদ বিতরণের ব্যবস্থা করেছেন বেলুড়মঠ কর্তৃপক্ষ।
তৃতীয় কোভিড-ঢেউ-পর্বের পরে ভক্তদের বহু প্রত্যাশার শেষে অবশেষে কিছু দিন আগেই খুলেছে বেলুড় মঠ। আজ সেখানে যথাবিহিত পালিত হল শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের ১৮৭ তম জন্মতিথি উৎসব।
১৮৩৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি হুগলির কামারপুকুরে শ্রীরামকৃষ্ণের জন্ম। প্রথাগত দৃষ্টিভঙ্গিতে অশিক্ষিত হলেও রামকৃষ্ণ বাঙালি সমাজ ও বাঙালি বিদ্বজ্জনের সম্ভ্রম অর্জন করেছিলেন। ১৮৭০-এর দশকের মধ্যভাগ থেকে পাশ্চাত্যশিক্ষায় শিক্ষিত বুদ্ধিজীবীদের নিকট তিনি হয়ে ওঠেন হিন্দু পুনর্জাগরণের কেন্দ্রীয় চরিত্র। তাঁকে ঘিরে কলকাতা ও কলকাতা-সন্নিহিত অঞ্চলে একটা সাড়া পড়ে গিয়েছিল।
আজ সকাল থেকেই মঠের বাতাসে মধুর ফাল্গুনের উপস্থিতি। সকালের স্নিগ্ধ বাতাসের মধ্যেই প্রভাতফেরি ও গানের মধ্যে দিয়ে শ্রীরামকৃষ্ণের জন্মোৎসব শুরু। একটু একটু করে ভক্তেরাও ততক্ষণে ঢুকতে শুরু করেছেন।
ছ'সাত বছর বয়স থেকেই তাঁর মধ্যে আধ্যাত্মিক ভাবতন্ময়তা দেখা দিত। সেই বয়সেই একবার ধানক্ষেতের পথে চলতে চলতে আকাশে কালো মেঘের পটে সাদা বলাকার সৌন্দর্যে মোহিত হয়ে বাহ্যজ্ঞানরহিত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। পরবর্তীকালে নিজের এই অবস্থাকে অনির্বচনীয় আনন্দের এক অভিজ্ঞতারূপে ব্যাখ্যা করেছিলেন তিনি। আরও কয়েকবার অনুরূপ ভাবতন্ময়তা দেখা দিয়েছিল-- একবার দেবী বিশালাক্ষীর মন্দিরে যাওয়ার পথে, আর একবার শিবরাত্রি উপলক্ষে অনুষ্ঠিত যাত্রায় শিবের চরিত্রে অভিনয়কালে।
পরবর্তী কালে সাধনার বিশেষ পর্বে কালীকে তিনি মা ও বিশ্বজননী রূপে প্রত্যক্ষ করতে শুরু করেন। এই সময়-পর্বে দেবীর প্রত্যক্ষ রূপদর্শনের জন্যও তীব্র ভাবে ব্যাকুল হয়ে ওঠেন। পাষাণপ্রতিমা তাঁর সাধনার স্পর্শে যেন চিন্ময়ী হয়ে ওঠে। তাঁর গোটা জীবনটিই এক অন্তহীন সাধন-প্রবাহ। তিনি যেন বহু বহু প্রাচীন ভারতীয় আধ্যাত্মিকতার এক ঘনীভূত মূর্তি, যাঁকে এ কালের মানুষও জানতে পারেন, দেখতে পারেন, বুঝতে পারেন, ছুঁতেও পারেন।