Rainer Maria Rilke: `সিদ্ধান্তহীন শহরের ভিতরে` জেগে থাকেন এক শান্ত মরমি কবি!
'হেমন্তসন্ধ্যা' কবিতায় আমরা পড়ি এরকম কিছু চরণ-- বাতাস এল চাঁদের থেকে/ আর সহসা আক্রান্ত হল বৃক্ষরাজি,/ এবং একটি পাতা ঘুরতে ঘুরতে/ ঝরার সময়ে পথ খুঁজল/ লণ্ঠনের মৃদু আলোর মধ্য দিয়ে/ বহুদূরের গাঢ় কৃষ্ণ নিসর্গ--/জোর করে প্রবেশ করল/ সিদ্ধান্তহীন শহরের ভিতর। 'সিদ্ধান্তহীন শহরের ভিতর'! কী অপূর্ব একটি ফ্রেজ! এহেন কাব্যের কবি রাইনার মারিয়া রিলকে।
রাইনার মারিয়া রিলকের জন্ম ও মৃত্যু এই ডিসেম্বরেই। ১৮৭৫ সালের ৪ ডিসেম্বর তাঁর জন্ম এবং ১৯২৬ সালের ২৯ ডিসেম্বর তাঁর মৃত্যুদিন।
রাইনের মারিয়া রিলকে এক বিখ্যাত জার্মান কবি ও ঔপন্যাসিক। তাঁর পুরো নাম রেনে কার্ল উইলহেম জোহান জোসেফ মারিয়া রিলকে। তার কবিতা ও গদ্য উভয়ই গীতিময়। মিস্টিক একটা আঙ্গিকে রচিত রিলকের লেখা ছুঁয়ে যায় পাঠকের মন। তাঁর বেশিরভাগ লেখায় নিঃসঙ্গতা ও উদ্বেগের গভীর ছায়া। তাঁর সৃষ্টির মধ্যে অস্তিত্বের এক টানাপোড়েন বরাবর জেগে থেকেছে।
রিলকে চেক প্রজাতন্ত্রের প্রাগ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটোবেলাটা খুব সুখের ছিল না তাঁর। রিলকের জন্মের আগেই তাঁর মায়ের প্রথম কন্যাসন্তান মারা যায়। সেই শোক ভুলতে না পেরে তাঁর মা তাঁকে মেয়েদের পোশাক পরিয়ে রাখতেন। বাবা-মায়ের বিবাহবিচ্ছেদের পরে তাঁকে জোর করে মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে পাঠানো হয়। ১৮৮৬ থেকে ১৮৯৫ পর্যন্ত সেখানে থাকার পর অসুস্থতার জন্য অ্যাকাডেমি ছেড়ে দেন। ১৮৯৫ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রবেশিকা পরীক্ষা পাস করেন। ১৮৯৬ পর্যন্ত তিনি সাহিত্য শিল্প ইতিহাস ও দর্শন নিয়ে প্রাগ ও মিউনিখে পড়াশোনা করেন। কিন্তু হলে কী হবে, তাঁর মন পড়েছিল সাহিত্য়ে, কবিতায়।
বাঙালি তাঁকে চেনে 'দুইনো এলিজি'র কবি হিসেবে। কবিজীবনের একটা পর্যায়ে কাউন্টেস মারি ভন থার্ন-এর অতিথি হয়ে দুইনো ক্যাসলে থাকতে শুরু করেন রিলকে। সেখানে ১৯১২ থেকে ১৯২২ এই সময়-পর্বে তিনি তাঁর বিখ্যাত এলিজিগুলি লেখেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন অবসাদগ্রস্ত হয়ে কয়েকবছর লেখা বন্ধ রাখেন।
তাঁর এলিজিগুলি তাঁকে অমর করে রেখেছে। গীতিকাব্যময়তা ও মিস্টিসিজমের পাশাপাশি মানসিক টানাপোড়েনের গরল একটা আত্যন্তিক দাহ তাঁর কাব্যকে জড়িয়ে ধরে রাখে। বর্গের দিক দিয়ে সাহিত্য সমালোচকেরা তাঁকে ইম্প্রেশনিস্ট কবি বলে চিহ্নিত করেছেন।