Richard Feynman: বিজ্ঞানের চাবি দিয়ে স্বর্গ না নরক কীসের তালা খোলা হবে, সেই সিদ্ধান্তই আসল
শতবর্ষ অতিক্রান্ত এই পদার্থবিজ্ঞানীর। বিশ শতকের পদার্থবিদ্যার দুনিয়ার সব চেয়ে বর্ণময় ব্যক্তিত্ব। সদা-উদাস, আপনভোলা, নিজের বিষয়ে বুঁদ, বহির্জগৎ বিষয়ে সম্পূর্ণ উদাসীন অথচ অসাধারণ বাস্তবোধের অধিকারী। তিনি রিচার্ড ফাইনম্যান। আজ, এই ১৫ ফেব্রুয়ারি তাঁর মৃত্যুদিন।
স্নাতকে পড়তে গিয়েছিলেন গণিত। কিন্তু পরে গণিত থেকে সরে এলেন, ভর্তি হলেন ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। কিন্তু অল্প কয়েকদিন পরেই বুঝলেন, সেখানেও তাঁর মন বসছে না। আবার বিষয়বদল। এবার ভর্তি হলেন পদার্থবিজ্ঞানে।
তাঁর ডক্টরেটের কাজেও নানা বাধা, নানা বিপত্তি। তবে তিনি এগিয়ে চললেন। একসময়ে ম্যাক্সওয়েলের তড়িৎচৌম্বক তত্ত্বের তরঙ্গের মডেলটাকে নিয়ে কাজ শুরু করলেন। মডেলটায় বদল আনতে চেষ্টা করলেন। তাঁর মডেল স্থান-কালের সঙ্গে কণাদের মিথষ্ক্রিয়ার উপরে ভিত্তি করে তৈরি। এই মডেল দিয়েই ফাইনম্যানের ক্ষমতার সর্বোচ্চচূড়ার একটা আভাস মিলল। পদার্থবিজ্ঞানের জগতে তোলপাড় ফেলে দিলেন তিনি।
কিন্তু তাঁর জীবনের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় সম্ভবত পারমাণবিক বোমার জন্য গবেষণার পর্ব। বোর, ফার্মি, ওপেনহাইমারের মতো তাবৎ বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানীদের সঙ্গে এক ছাদের নিচে গবেষণা। ফাইনম্যান তখন নব্য তরুণ বিজ্ঞানী। প্রজেক্টে যোগ দেয়ার পরে জটিল সব গাণিতিক হিসেবনিকেশের দায়িত্ব তাঁর ঘাড়ে এসে পড়ল। গাণিতিক হিসেব ঠিকঠাক করাটা এ ধরনের প্রজেক্টে সবচেয়ে গুরুদায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কারণ, সেই হিসেবের উপরে ভিত্তি করেই তৈরি হয় যন্ত্রাংশ। সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ভুলের জন্যও গুণতে হতে পারে চড়া মাশুল। কিন্তু তরুণ রিচার্ড যেন গণিতের জাদুকর। দারুণ দক্ষতার সঙ্গে সামাল দিলেন সবকিছু। সেই সঙ্গে ইউরেনিয়াম-২৩৫-এর থেকে কী ভাবে ইউরেনিয়াম-২৩৮-কে কীভাবে আলাদা করা যায়, সেটা নিয়েও কাজ করলেন।
তিনি কোয়ান্টাম বলবিদ্যা নিয়েও কাজ করেছেন। বলতে গেলে তাঁর মূল অবদান কোয়ান্টাম বলবিদ্যাতেই। আরও স্পষ্ট করে বললে, কোয়ান্টাম ইলেক্ট্রোডায়নামিক্স-এ। এখানে নতুন ধরনের ডায়াগ্রামের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন তিনি। এই ডায়াগ্রামের নাম দেওয়া হয় 'ফাইনম্যান ডায়াগ্রাম'। সিস্টেম বা ব্যবস্থার সঙ্গে মিথষ্ক্রিয়াশীল কণাদের আচরণ গাণিতিকভাবে ব্যাখ্যা করতেই এই ডায়াগ্রাম ব্যবহার করা হয়।
কোয়ান্টাম ইলেক্ট্রোডায়নামিক্সে তুলনাহীন অবদানের জন্য ১৯৬৫ সালে নোবেল পুরষ্কারে ভূষিত হন রিচার্ড ফাইনম্যান। ১৯৮৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি, ৬৯ বছর বয়সে ক্যানসারে ভুগেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন রিচার্ড ফাইনম্যান।