Salvador Dalí: অত্যাশ্চর্য ইমেজের জাদুকর দালির মৃত্যুতে শেষ হয়ে গিয়েছিল শিল্পের একটি যুগ!
সালভাদোর ডোমিঙ্গো ফেলিপি জেসিন্তো দালি ই দোমেনেখ, ১ম মার্কুইস দ্য দালি দ্য পুবোল। কিছু বোঝা গেল? দুর্বোধ্য লাগল? তা হলে শুনুন, এটি হল সালভাদোর দালি'র পুরো নাম। দালি এক স্পেনীয় পরাবাস্তববাদী (Surrealist) চিত্রকর। শিল্পের ইতিহাসে এক বিস্ময়।
'দ্য মেটামরফোসিস অব নারসিসাস' চিত্রকর্মের স্রষ্টা সালভাদর দালির কথা শিল্পরসিক মাত্রেই জানেন। তবে দালিকে সমসাময়িক সমালোচকদের বিরামহীন সমালোচনার শিকার হতে হয়েছে। তবে সবকিছু উপেক্ষা করে শিল্পী ডুবেছিলেন রঙ, তুলি আর ক্যানভাসে। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ চিত্রশিল্পীদের একজন এই সালভাদর দালি দারুণভাবে অনুপ্রাণিত ছিলেন রেনেসাঁর সময়কালীন চিন্তাচেতনা ও শৈল্পিক রুচির দ্বারা।
সালভাদর দালি স্কুলজীবনেই 'ডাডাইজমে' প্রভাবিত হন। 'ডাডা' আন্দোলন হল একটি শিল্প আন্দোলন যা গোটা ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। দালির প্রায় সকল কাজেই এই আন্দোলনের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। ১৯২৬-২৯ সালের মধ্যে ডালি বেশ কয়েকবার প্যারিসে ভ্রমণ করেন এবং বিখ্যাত ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পাবলো পিকাসো, জোয়ান মিরো, রেনে ম্যাগ্রিতির মতো বিখ্যাত চিত্রশিল্পীদের সাক্ষাৎ পেয়ে দালি অভিভূত হন। তিনি পিকাসোকে অত্যন্ত সম্মান করতেন। পিকাসোর সঙ্গে সাক্ষাতের পরবর্তী কয়েক বছরে দালির আঁকা ছবিগুলিতে পিকাসোর প্রভাবও বোঝা যেত।
দালির চিত্রকর্মে মোটামুটি তিনটি বিষয় লক্ষ্য করা যেত-- মানুষের সংবেদনশীলতা, যৌনতার প্রতীক এবং আইডিওগ্রাফি। ১৯২৯ সাল থেকে মূলত তিনি পরাবাস্তব চিত্রকর্ম নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেন। পরাবাস্তব ছবির জগতে দালির সব চেয়ে বড় অবদান 'প্যারানয়িক ক্রিটিকাল মেথড'। এই পদ্ধতির সারমর্ম হচ্ছে-- একজন শিল্পী নিজেকে এমন ভাবে প্রস্তুত করবেন যে তিনি তাঁর অবচেতনে ইচ্ছানুযায়ী প্রবেশ করতে পারবেন এবং নিজের শিল্পকর্মকে অবচেতন ভাবনা দিয়ে ভরিয়ে দিতে পারবেন।
১৯২৯ সালে দালির জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে। তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় বিখ্যাত পরাবাস্তববাদী লেখক পল ইলুয়ার্ডের স্ত্রী দিমিত্রিয়েভনা ডায়াকোনোভার, সংক্ষেপে যিনি গালা নামে পরিচিত ছিলেন। এই গালার সঙ্গে দালির প্রণয় গড়ে ওঠে এবং গালা তার প্রথম স্বামী ইলুয়ার্ডকে ডিভোর্স দিয়ে দালির কাছে চলে আসেন। ১৯৩৪ সালে তাঁরা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
বলা হয়ে থাকে, গালার কারণেই সালভাদর দালি প্রকৃত অর্থে সালভাদর দালি হয়েছেন। গালা ছিলেন অত্যন্ত অনুপ্রেরণাদায়ী যাঁর ভালোবাসা দালির ভেতরের শিল্পীসত্তাকে প্রবলভাবে জাগিয়ে তুলেছিল। খিটখিটে মেজাজের দালি ছবির ব্যবসা-বাণিজ্য খুব একটা ভালো বুঝতেন না। গালাই দালির ব্যবসা পরিচালনা করেন এবং অর্থনৈতিকভাবে দালিকে সচ্ছলতায় রাখতেন।
১৯৩০ সালে জীবনের শ্রেষ্ঠ তো বটেই, ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ (পরাবাস্তব) ছবি 'দ্য পারসিস্ট্যান্স অব মেমোরি' আঁকলেন দালি। ছবিটিতে ছোট বড় কিছু দেয়ালঘড়ি, পকেটঘড়িকে গলন্ত অবস্থায় দেখা যায়। অথবা ঘড়িগুলি ছিল নমনীয়, যেগুলি শুকোবার জন্য গাছের ডালে মেলে দেওয়া রয়েছে। ছবিটির অসংখ্য অর্থ তৈরি করেছেন বোদ্ধারা। কেউই নিশ্চিত কোনও ধারণায় উপনীত হতে পারেননি।