লকডাউনের তৃতীয় পর্যায়ে অভুক্তদের পেট ভরানোর `সংকল্পে` বরানগর রামকৃষ্ণ মিশনের প্রাক্তনীরা

Mon, 11 May 2020-11:48 pm,

করোনার কামড়ে ধুঁকছে তামাম বিশ্ব। নতুন অর্থবর্ষের গোড়াতেই অর্থনীতিকে ভয়াবহ চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে মহামারী। কিছুক্ষেত্রে ছাড় মিললেও করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ার পর থেকেই প্রায় বেশিরভাগ আর্থিক কার্যকলাপই বন্ধ। ঝাঁপ বন্ধ করেছে বহু সংস্থা। ইতিমধ্যেই কাজ হারিয়েছেন বহু মানুষ। ভবিষ্যতেও কর্মহীনের সংখ্যাটা যে আরও বাড়বে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। পরিস্থিতি কবে নিয়ন্ত্রণে আসবে তাও জানা নেই।

তবে একটা বড় অংশ রয়েছেন যাঁদের অবস্থা খানিকটা ঘরে কুমির, বাইরে বাঘের মতো। করোনা এবং পেটের জ্বালা এই দুই-এ কার্যত জেরবার তাঁরা। কাজ বন্ধ, কখনও আধ পেটা বা কখনও ভুখা পেটেই চলছে দিন যাপন। সরকারি, বেসরকারি ত্রাণই এখন ওঁদের একমাত্র ভরসা। রুজিরুটি হারিয়ে কার্যত দিশেহারা আর্থিক ভাবে নিচুতলার এই মানুষগুলো।

আর এবার ওই দিন আনা দিন খাওয়া মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াল বরানগর রামকৃষ্ণ মিশনের প্রাক্তন (২০১০ মাধ্যমিক) ছাত্ররা। রবিবার সকালে চাল, ডাল, তেল, চিড়ে, মুড়ি, বিস্কুটের মতো বেশ কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে তাঁরা পৌঁছে গিয়েছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার বরাহনগর, বেলঘড়িয়া, দক্ষিণেশ্বরের বেশ কিছু জায়গায়। মূলত কনটেনমেন্ট জোনের আওতায় রয়েছে এই জায়গাগুলো।

এ দিন সবমিলিয়ে মোট ৪০০টি পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হল ত্রাণ সামগ্রী। পুলিসের সহায়তায় সমস্ত বিধি নিষেধ মেনেই চলল ত্রাণ বিলির কাজ। উল্লেখ্য, অতিমারীর দিনগুলোতে ত্রাণ শিবির তো চলছেই। তবে সংকল্প, #donateOneBox কর্মসূচিটা অন্যান্যদের থেকে খানিক আলাদাই বলা চলে। কী রকম?

বরানগর রামকৃষ্ণ মিশনের এই ব্যাচের স্কুল- কলেজ শেষ হয়েছে বহুবছর আগেই। কর্মসূত্রে কেউ এখন কলকাতায়, তো কেউ ব্যাঙ্গালুরু, কেউ আবার মুম্বই। যোগাযোগ বলতে ওই সোশ্যাল মাধ্যম। দৈনন্দিনের ব্যবস্থায় কেউ কেউ আবার যোগাযোগের বাইরে। তবে লকডাউনে কিছুটা সচল হয়েছিল যোগাযোগ। ভিডিও কল, সোশ্যাল মিডিয়া আর অনলাইন গেমেই চলছিল অবসর যাপন।

 

আর এর মাঝেই অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তটা হঠাৎই  মাথায় এসেছিল ওঁদের। যেমন ভাবা তেমন কাজ, তৈরি হল রিলিফ ফান্ড। সাড়াও মিলল অপ্রত্যাশিতভাবেই। যে যেমনভাবে পারল সাহায্যের হাত বাড়াল। টানা দু-তিন সপ্তাহ চলল তোড়জোড়। শহরের বাইরে থাকার কারণে যে বন্ধুরা সামিল হতে পারল না তাঁরা দূর থেকেই সহযোগীতা করেছে। আর শহরে থাকা বন্ধু-বান্ধবরা একজোট হয়ে হাতে হাতে সেরেছে কাজ। রবিবার পরিকল্পনা মাফিক শেষ হয়েছে প্রথম দফার ত্রাণ বিলি। 

টিম সংকল্পের তরফে জানানো হয়েছে, অতিরিক্ত যে টাকা বেঁচে গিয়েছে তা দিয়ে এখনও বেশ কয়েক দফা কর্মসূচির পরিকল্পনা রয়েছে। সবমিলিয়ে এই দুর্দিনে অন্তত কয়েকদিন ওই দ্ররিদ্র মানুষগুলোকে খেয়ে পড়ে থাকার রসদটুকু জোগানোর সংকল্পেই বহুবছর পর ফের একজোট হল ওঁরা। হাসি ফুটল ভুখা পেটে থাকা মানুষগুলোর মুখে। আর এদিকে মিশন-এর মিশন 'সংকল্প'ও সফল হল এবারের মতো।

ZEENEWS TRENDING STORIES

By continuing to use the site, you agree to the use of cookies. You can find out more by Tapping this link