কবিতায় পুড়ে গিয়ে পাঠককে টেনেছিলেন শঙ্খ-শক্তি-সুনীলরা

Wed, 21 Apr 2021-6:41 pm,

নিজস্ব প্রতিবেদন: কবিতার মুহূর্ত আচমকাই স্তব্ধ। বন্ধুরা এবার হয়তো তরজায় মেতে উঠবেন অন্য কোথাও। শক্তি চট্টোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় , উত্পলকুমার বসু, বিনয় মজুমদার এবং তারপর শঙ্খ ঘোষ। জীবনানন্দ দাশ পরবর্তী যুগে বাংলা কবিতার পঞ্চপাণ্ডবের শেষ নক্ষত্রের পতন। নিজেকে অন্য কেউ করে তোলা হয়তো এক জন মানুষের কবি হয়ে ওঠা। আর সেই কবির নশ্বর দেহের মৃত্যু মানে কোথাও যেন বাংলা ভাষার অভিভাবকের  ছাতাটাও হারিয়ে যাওয়া। বাংলা সাহিত্যের ভরকেন্দ্রটা কোথাও যেন নড়ে উঠল।  

পাঁচের দশক। বিপ্লবের ঝলক ঝরে পড়ত সেই  সময় তরুণ  কবিদের লেখায়।  এদিকে সুনীলের রোম্যান্টিসিজম, শক্তির উন্মাদনা, হাংরি জেনারেশনের উত্পলের লেখা। অন্যদিকে  শঙ্খর বোধে মিলে যেত বিনয়ের যন্ত্রণাক্লিষ্ট পংক্তি।

হাংরি জেনারেশনের অন্যতম মুখ উৎপলকুমার বসু পুরী সিরিজে বলে ওঠেন, ''তারপর ঘাসের জঙ্গলে পড়ে আছে তোমার ব্যক্তিগত বসন্ত দিনের  চটি। এবং আকাশ আজ দেবতার ছেলেমেয়েদের  নীল শার্ট পাজামার মতো বাস্তবিক।''

 

সুনীল-শঙ্খ-বিনয়দের লেখা-সে তো এক সমুদ্র জল। সেই সমুদ্রের জলে অবগাহন করতে হয় বারবার। তবু সাধ মেটে না। শঙ্খ ঘোষের কলম তাই গর্জে ওঠে।‘‘আরও কত ছোট হব ঈশ্বর, ভিড়ের মধ্যে দাঁড়ালে! আমি কি নিত্য আমারও সমান, সদরে, বাজারে, আড়ালে?’’

সুনীল লেখেন, ''ওই ছেলেটা মানুষ দেখলে ধুলো কাদায় ছবি আঁকবে/ ধুলো কাদাই ছিটিয়ে বলবে ভালোবাসতে চেয়েছিলাম।’’

এভাবেই বাংলা সাহিত্যে, বাংলা ভাষায় শুদ্ধতার পর্যায়ক্রমিক ধারা বয়ে নিয়ে গিয়েছেন এই পঞ্চপাণ্ডব। বাঙালির মনন এবং শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে উঠেছে শক্তি-সুনীল-উত্পলের  নাম। ঠিক সন্ধ্যার শান্ত উপহারের মতো একটা মানুষ শঙ্খ ঘোষ। কিন্তু বাকি চার ভাষাপ্রেমিকের মতোই শোকের সায়র উজিয়ে জীবনজমিতে প্রার্থিত পলি খুঁজে চলার কাজ এসেছে আজ। সে টানে তাই যেতেই হল। কিন্তু কবির মৃত্যু হয় কি? ’’

শক্তি চিত্কার করে ওঠেন, ‘‘এসো নীলাঞ্জন মেঘ/ পিঁড়ি পাতা আছে/দু’দণ্ডের জন্যে বসো/যদি হাতে থাকে সময়/জানো প্রবাসিনী,/দু’দণ্ড সুখের চেয়ে/দুঃখ খুবই, বড় অবিনাশী।’’

 

ঠাকুরনগরের ছোট্ট ঘরে বিনয়ের কলম থেকেউঠে আসে-“আমি মুগ্ধ; উড়ে গেছ; ফিরে এসো, ফিরে এসো, চাকা,রথ হয়ে, জয় হয়ে, চিরন্তন কাব্য হয়ে এসো । আমরা বিশুদ্ধ দেশে গান হব, প্রেম হব, অবয়বহীন, সুর হয়ে লিপ্ত হব পৃথিবীর  সব আকাশে ।

কবিতাকে তাঁরা নিয়ে গিয়েছিলেন জীবনের কেন্দ্রে। এমনকী এ বললেও অত্যুক্তি হবে না যে কবিতায় পুড়ে যেতেও পাঠককে টেনে ছিলেন। কিন্তু সে টান, শান্ত-সমাহিত। শুধু অস্থির সময়ে মনে রয়ে যাবে, ‘‘আছি,তবু ভাঙা এই দেশকাল নিয়ে আজও আছি। এর চেয়ে বড় কিছু হয়?''

ZEENEWS TRENDING STORIES

By continuing to use the site, you agree to the use of cookies. You can find out more by Tapping this link