SAvsIND: South Africa-র বাউন্সি পিচে Team India-র সেরা ১০ লড়াকু ইনিংস
১৯৯২-৯৩ মরশুমের সেই সফরের তৃতীয় টেস্ট ৯ উইকেটে হেরে, ১-০ ব্যবধানে সিরিজ খুইয়েছিল আজহারের ভারত। তবে ভারতীয় দল টেস্ট সিরিজ হারলেও পোর্ট এলিজাবেথের সেই ম্যাচ কপিল দেবের লড়াকু ১২৯ রানের জন্য সবার মনে থাকবে। প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যাটিং ব্যর্থতার মুখোমুখি হয়েছিল ভারতীয় দল। অ্যালান ডোনাল্ডের আগুনে বোলিংয়ের দাপটে একটা সময় মাত্র ২৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়েছিল ভারত। তবে কপিল হার মানতে রাজি ছিলেন না। ১৮০ বলে ১২৯ রান করেছিলেন তিনি। মেরেছিলেন ১৪টি চার ও ১টি ছয়।
১৯৯২-৯৩ মরশুমে শতরান করে নিজের জাত আগেই চিনিয়েছিলেন। তাই ১৯৯৬-৯৭ এর সফরে সচিনের উপর প্রত্যাশা ছিল অনেক বেশি। কারণ একদিকে তিনি যেমন দলের এক নম্বর ব্যাটার ছিলেন, তেমনই আবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সেই সফরে 'মাস্টার ব্লাস্টার' ছিলেন দলের অধিনায়ক। কেপ টাউনের সেই দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে ফের একবার ব্যাটারদের ভরাডুবি বজায় ছিল। মাত্র ৫৮ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে চলে গিয়েছিল ভারত। ঠিক সেই সময় ষষ্ঠ উইকেটে ২২২ রান যোগ করেন সচিন ও আজহার। ডোনাল্ড, শন পোলাক, লান্স ক্লুজনারদের পালটা মেরে মাত্র ৪০ ওভারে ২২২ রান যোগ করেছিলেন দুজন। ২৫৪ বলে ১৬৯ রানে থেমেছিলেন 'মাস্টার ব্লাস্টার'। মেরেছিলেন ২৬টি বাউন্ডারি। তবে সচিন-আজ্জুর লড়াইয়ে ফলো অন বাঁচলেও, শেষ রক্ষা হয়নি। কারণ দ্বিতীয় ইনিংসে ফের ব্যাটিং ব্যর্থতার জন্য ২৮২ রানে হেরে যায় ভারত।
সেই টেস্টের প্রথম ইনিংসে শতরান করেছিলেন ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক। সচিনের সঙ্গে ষষ্ঠ উইকেটে মারমুখী মেজাজে ২২২ রান তুলেছিলেন এই প্রাক্তন ডানহাতি ব্যাটার। দক্ষিণ আফ্রিকার তিন পেসার ডোনাল্ড, পোলাক, ক্লুজনার পিচে আগুন ঝারালেও আজ্জুর ব্যাট থেকে সে দিন ফ্লিক ও কভার ড্রাইভের ফুলঝুরি দেখা গিয়েছিল। হাডসনের কাছে রান আউট হওয়ার আগে ১৭৪ বলে ১১৫ রান করেছিলেন হায়দরাবাদের এই মিডল অর্ডার ব্যাটার। মেরেছিলেন ১৯টি চার ও ১টি ছয়।
১৯৯৬-৯৭ মরশুমের সেই সফরে জোহানেসবার্গে ছিল সিরিজের তৃতীয় টেস্ট। রাহুল দ্রাবিড়ের ব্যাটিং বিক্রমে সেই টেস্ট ড্র হয়ে যায়। তরুণ দ্রাবিড়ের কেরিয়ারে সেটি ছিল নবম টেস্ট। এর আগে লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অভিষেক টেস্টে ৯৫ করার পর নটিংহ্যামে নিজের দ্বিতীয় টেস্টে ৮৪ রান করেছিলেন 'দ্যা ওয়াল'। তবে কেরিয়ারের শুরুতে জোড়া শতরান হাতছাড়া করার আক্ষেপ ওয়ান্ডারার্সে মিটিয়ে নিয়েছিলেন তিনি। ৫৪১ মিনিট ক্রিজে কাটিয়ে ৩৬২ বলে ১৪৮ রান করেন রাহুল। মেরেছিলেন ২১টি চার। চতুর্থ উইকেটে সৌরভের সঙ্গে ১৪৫ রান যোগ করার পর, জভাগল শ্রীনাথ ও অনিল কুম্বলের সঙ্গে লড়াই করেন দ্রাবিড়। ফলে প্রথম ইনিংসে ৪১০ রান তোলে ভারত। দ্বিতীয় ইনিংসেও বাইশ গজে দাপট দেখিয়েছিলেন রাহুল। ১৪৬ বলে করেছিলেন ৮১ রান। মেরেছিলেন ১১টি চার। ফলে ম্যচের সেরা হন তিনি। তবে সে বারও ২-০ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজ হেরে দেশে ফিরেছিল সচিনের ভারত।
ব্লুমফন্টেইনে অভিষেক টেস্ট খেলতে নেমে বাজিমাত করেছিলেন নজফগড়ের নবাব। সৌরভের অধিনায়কত্বে ২০০১-০২ মরশুমের প্রথম টেস্টে ভারত ফের একবার ব্যাটিং ব্যর্থতার মুখোমুখি হয়েছিল। মাখায়া এনটিনি, শন পোলাক, ন্যান্টি হেইওয়ার্ডস, জ্যাক ক্যালিস ও ক্লুজনারের আগুনে জোরে বোলিংয়ের দাপটে একটা সময় ৬৮ রানে ৪ উইকেট হারায় ভারত। তবে এরপরেই শুরু হয় 'আসল খেলা'। আইডল সচিনের সঙ্গে পঞ্চম উইকেটে ২২০ রান যোগ করেন বীরু। সচিন সেই টেস্টে সর্বোচ্চ ১৫৫ রান করলেও, সবাই এখনও শেহওয়াগের মারমুখী শতরানের কথা মনে রেখেছে। প্রোটিয়াস পেসারদের দাপটে ভারত সেই টেস্ট ৯ উইকেটে হেরে গেলেও এখনও সবার চর্চায় বীরুর সেই ইনিংস। ১৭৩ বলে ১০৫ রানে থামেন তিনি। মেরেছিলেন ১৯টি চার।
২০০৬-০৭ মরশুমের সেই সফর ভারতীয় ক্রিকেটের নিরিখে সব দিক থেকেই ছিল আলাদা ভাবে প্রাসঙ্গিক। জোহানেসবার্গে রাহুল দ্রাবিড়ের ভারত প্রথমবার টেস্ট জয়ের স্বাদ পেয়েছিল। শ্রীসন্থের আগুনে বোলিংয়ের দাপটে প্রথম টেস্ট জিতেছিল টিম ইন্ডিয়া। তাছাড়া সেই টেস্ট মহারাজের কাছেও সমান গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ বেশ কয়েক মাস জাতীয় দলে ব্রাত্য থাকার পর গুরু গ্রেগ চ্যাপেলের আমলে সেই টেস্টে কামব্যাক করেছিলেন 'প্রিন্স অফ ক্যালকাটা'। প্রথম ইনিংসে একটা সময় ৮৩ রানে ৩ উইকেট চলে গেলেও, বিপক্ষের জোরে বোলারদের বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে লড়েছিলেন বেহালার বাঁহাতি। ১০১ বলে ৫১ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। মেরেছিলেন ৪টি চার ও ১টি ছয়। এমনকি দ্বিতীয় ইনিংসেও ৩৮ বলে ২৫ রানে গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেছিলেন বিসিসিআই-এর বর্তমান সভাপতি।
২০১০-১১ মরশুমের সেই সফরে ডারবানে ছিল সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট। মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে সেই টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৮৭ রানে হারিয়েছিল ভারত। সেই ঐতিহাসিক জয়ের জাহির খান,শ্রীসন্থ ও হরভজন সিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিলেও, লক্ষ্মণের অবদান ছিল আরও বড়। প্রথম ইনিংসে ভারতের ইনিংস ২০৫ রানে শেষ হয়ে যাওয়ার পর, ভারতের বোলারদের দাপটে ১৩১ রানে শেষ হয়ে যায় প্রোটিয়াসদের প্রথম ইনিংস। ফলে ৭৪ রানে মূল্যবান লিড পায় টিম ইন্ডিয়া। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে ডেইল স্টেন, মর্নি মর্কেল, লোয়ানবো তোতসবের দাপটে একটা সময় দ্বিতীয় ইনিংসে ৫৬ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় ভারত। সেই সময় ক্রিজে নেমে ১৭১ বলে ৯৬ রানের মহা মূল্যবান ইনিংস খেলেছিলেন লক্ষ্মণ। লোয়ার অর্ডার ব্যাটারদের নিয়ে লড়েছিলেন তিনি। মেরেছিলেন ১২টি চার। ফলে ২২৮ রান তুলে বিপক্ষকে ৩০৩ রানে টার্গেট দেয় ধোনিবাহিনী। তবে ফের একবার বাইশ গজে দাপট দেখান জাহির,ভাজ্জি,হরভজন,শ্রীসন্থরা। ফলে এসেছিল জয়।
২০১৩-১৪ মরশুমের প্রথম টেস্টে দাপট দেখিয়েছিল ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ। সেই সফরের এক বছর আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছিলেন দ্রাবিড়। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে কঠিন পরিবেশে তিন নম্বরে ব্যাট করতে নেমে পূজারা কিন্তু টিম ম্যানেজমেন্টকে নিরাস করেননি। দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৫৩ মিনিট ক্রিজে থেকে ২৭০ বলে ১৫৩ রান করেছিলেন পূজারা। মেরেছিলেন ২১টি চার। তৃতীয় উইকেটে বিরাট কোহলির সঙ্গে তাঁর ২২২ রানে পার্টনারশিপ ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ফলে ৪২১ রান তুলে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৪৫৮ রানের টার্গেট দেন কোহলি। তবে এবি ডেভিলিয়ার্স ও ফাফ ডু প্লেসির শতরানের উপর ভর করে টেস্ট হার বাঁচিয়ে নেয় প্রোটিয়াসরা।
সেই টেস্টের দুই ইনিংসেই দাপট দেখিয়েছিলেন 'কিং কোহলি'। পূজারা যদি দ্রাবিড়ের অভাব পুরণ করিয়ে দিয়ে থাকেন, তাহলে কোহলি তাঁর আইডল সচিনের অভাব মিটিয়েছিলেন। প্রথম ইনিংসে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছিল ১৮১ বলে ১১৯ রান। মেরেছিলেন ১৮টি চার। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসেও বিপক্ষের বোলারদের বুঝে নিয়েছিলেন ভারত অধিনায়ক। পূজারার সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে যোগ করেন ২২২ রান। সেই ইনিংসে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছিল ১৯৩ বলে ৯৬ রান। মেরেছিলেন ৯টি চার।
২০১৭-১৮ মরশুমের সফরে জোড়া টেস্ট হেরে সিরিজ ইতিমধ্যেই খুইয়েছিল বিরাটবাহিনী। জোহানেসবার্গের তৃতীয় টেস্ট ছিল সম্মান রক্ষার ম্যাচ। তৎকালীন হেড কোচ রবি শাস্ত্রী ও অধিনায়ক বিরাট কোহলি অদ্ভুত যুক্তি দেখিয়ে অজিঙ্কা রাহানেকে প্রথম দুই টেস্টে দলের বাইরে রেখেছিলেন। তবে সেই টেস্টে প্রথম একাদশে ফিরে আসেন 'জিঙ্কস'। এবং ব্যাট হাতে ক্রিজে এসেই দ্বিতীয় ইনিংসে ৬৮ বলে ৪৮ রান করেন এই মুম্বইকর। এর আগে প্রথম ইনিংসে ১৮৭ রানে গুটিয়ে যায় ভারত। জবাবে ব্যাট করতে নেমে প্রোটিয়াসরাও সুবিধা করতে পারেনি। জসপ্রীত বুমরা ও ভুবনেশ্বর কুমারের আগুনে পেসে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংস ১৯৪ রানে শেষ হয়ে গিয়েছিল। ফলে মাত্র ৭ রানের লিড পেয়েছিল ডু প্লেসিসের দল। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে রাহানে ও কোহলির লড়াইয়ের জন্য ভারত স্কোরবোর্ডে ২৪৭ রান তুলে দেয়। ফলে দক্ষিণ আফ্রিকার টার্গেট দাঁড়ায় ২৪১ রান। কিন্তু মহম্মদ সামির পেসে ছারকার হয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ৬৩ রানে জিতে মুখ রক্ষা হয় ভারতের।