‘খেয়া’ শূন্য করে চলে গেলেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়...

Mon, 13 Aug 2018-11:34 am,

বর্ণময় ও সফল রাজনৈতিক জীবন। তাঁর জীবনে একাধিক ‘শেড’। আইনজীবী থেকে কমরেড, দশ বারের সাংসদ ও প্রথম বাঙালি হিসাবে লোকসভার অধ্যক্ষ হওয়া- বহু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের অনুপ্রেরণা লোকসভার প্রাক্তন অধ্যক্ষ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়।  

১৯২৯ সালের ২৫ জুলাই অসমের তেজপুরে জন্ম সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের। প্রেসিডেন্সি কলেজের পর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়- পড়াশোনার শেষে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাড়ি দেন তিনি। সেখানে আইন নিয়ে পড়াশোনা করেন সোমনাথ। ফিরে এসে কলকাতা হাইকোর্টে আইনজীবী হিসাবে পেশা শুরু।

১৯৬৮ সালে বাম রাজনীতিতে পা রাখেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। ১৯৭১ সালে বাবার মৃত্যুতে খালি হওয়া বর্ধমান লোকসভা কেন্দ্র থেকে জয়লাভ করেন।

১৯৮৯-২০০৪ সাল পর্যন্ত বোলপুরের সাংসদ ছিলেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। সাংসদ থাকাকালীন বোলপুরের সুখ-দুঃখের সাথী ছিলেন তিনি। বোলপুর-বর্ধমান বাইপাস, বোলপুরের প্রথম মহিলা  কলেজ নির্মাণ, শান্তিনিকেতন শ্রীনিকেতন উন্নয়ন পর্ষদ-সবই নির্মীত হয়েছিলেন তাঁরই তত্ত্বাবধানেই।

শান্তিনিকতেন তাঁকে মনেপ্রাণে টানত। স্ত্রীকে নিয়ে তাই বোলপুরের শ্যামবাটি এলাকাতে এই বাড়িতেই থাকতেন তিনি।

বাড়ির নাম ‘খেয়া’। আজ এই বাড়ির চারপাশ নিস্তব্ধ। প্রতিবেশীরাও বাক্যহারা। অত্যন্ত কাছের একজন অভিভাবক যেন তাঁদের ছেড়ে চলে গেলেন। যে মানুষকটা বিপদে সবসময় পাশে পাওয়া যেত, সেই মানুষটাকে হারিয়ে আজ অভিভাবকহীন যেন শ্যামবাটি।

লালরঙা বাড়ির প্রতিটি পরতে রুচিশীলতার ছাপ। বাড়িতে ঢুকে প্রথমেই বসার ঘর। পাশেই তাঁর পড়ার ঘর। দেওয়াল আলমারিতে থরে থরে সাজানো বই।

এই ঘরই যেন কত রাজনৈতিক ঘাত-প্রতিঘাতের সাক্ষ্য বহন করছে। এই ঘরে বসেই চায়ের কাপে উঠেছে ঝড়। দলের বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের সঙ্গে বিতর্ক, গুরু-স্নেহে পরামর্শ সবই এই ঘরে বসেই দিয়েছেন তিনি।

বাড়ির সামনে লনে রাখা থাকত সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের গাড়ি।   

আজ এই বাড়ির গেটে তালা ঝুলছে। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, এত বড় মাপের মানুষ, কিন্তু তাঁর আচরণে কোনওদিন তা ধরা পড়ত না। পাড়ার প্রত্যেকটি মানুষের খোঁজখবর নিতেন তিনি। মিশতেন সকলের সঙ্গেই। পাড়ার যে কোনও অনুষ্ঠান হত তাঁরই তত্ত্বাবধানে।

বরাবরই সুবক্তা ছিলেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। দলের সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়েছিল, তবে রাজনীতির বাইরে থেকেও সমাজ সংস্কারমূলক বিভিন্ন সিদ্ধান্ত ও গণতান্ত্রিক ভিতকে মজবুত করতে নানাসময়ে মতপ্রকাশ করেছেন। তিনি চলে গেলেন, রেখেন গেলেন বর্ণময় অনুকরণীয় রাজনৈতিক জীবন।

ZEENEWS TRENDING STORIES

By continuing to use the site, you agree to the use of cookies. You can find out more by Tapping this link