পুনশ্চ মৃণাল, স্মরণ করলেন সৌমিত্র, মাধবী, অপর্ণা সেন ও অনিরুদ্ধ ধর

Sun, 30 Dec 2018-4:26 pm,

বছরের শেষে এধরনের একটা খবর, মৃণাল সেনের মতো একজন কিংবদন্তির মৃত্যুর খবর যেন আমার কাছে আঘাত করার মতোই ছিল। মৃণাল জ্যেঠু ভারতীয় চলচ্চিত্রকে অন্য মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছেন। এটা একটা বড় ক্ষতি। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি।

অনিরুদ্ধ ধর - (চলচ্চিত্র সমালোচক)- ''মৃণাল দা চলে গেলেন এটা আমার কাছে একটা ভয়ঙ্কর খবর। মৃণাল দা সবসময় ভাবতেন আমি বুঝি সত্যজিৎরায়ের গুণমুগ্ধ, তাই আমাকে জিজ্ঞাসা করতেন 'তোমার ওই ঢ্যাঙা স্যার কেমন আছেন?' বাংলা ছবিকে তিনিই প্রথম ইউরোপীয় চলচ্চিত্রের ধারায় ফেলেছিলেন। তিনি ভারতীয় সিনেমার পথিকৃৎ। মৃণাল দার সঙ্গে একটি ছবিতে কাজ করেছিলাম, সেই ছবিতে ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়, অঞ্জন দত্ত, অপর্ণা সেনরা ছিলেন। আমি সহকারী হিসাবে কাজ করেছিলেন। তবে আমার গিল্ডের কার্ড ছিল না তবুও 'বিশেষ সহযোগিতায় অনিরুদ্ধ ধর' নাম দিয়েছিলেন সিনেমার কার্ডে। এটা একটা পাওয়া''

শিবাশিস বন্দোযপাধ্যায়- (ফিল্ম সমালোচক) এই মুহূর্তে বাংলা ও ভারতীয় ছবিতে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁরা সকলের মধ্যেই কোনও না কোনও ভাবে মৃণাল সেনের প্রভাব রয়েছে। একটা মানুষ নিজের সৃষ্টিকেই  ভেঙে কীভাবে নতুন নতুন সৃষ্টি করতে পারেন তা ওনার কাছ থেকেই শিখতে হয়। একজন চির অনুসন্ধিৎসু পরিচালক ছিলেন। উনি ভারতীয় সিনেমার নতুন দিগদর্শন।। নিজেই নিজের চেনা ছক ভেঙেছেন। 

মাধবী মুখোপাধ্যায়- (অভিনেত্রী) ওনার সঙ্গে কাজ করেছি তাই অভিজ্ঞতা তো থাকবেই। মাধবী নামটাই তো মৃণাল সেনের ছবি থেকেই হয়েছিল। ৬ বছর বয়স থেকে কাজ করছি। '২২ শ্রাবণ' ছবিতে অভিনয় করার সময় থেকে আমার নাম হল মাধবী। আমি কদিন ধরেই ভাবছিলাম যাব, যাব। কিন্তু আর যাওয়া হল না। আমি বিস্মিত। এধরনের মানুষের প্রতি আমাদের ভালোবাসা এমনটাই থাকে যে আমরা বিশ্বাসই করতে পারছি না যে উনি চলে গেলেন।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্য়ায়- (অভিনেতা) শেষ মহীরুহও চলে গেলেন। মনটা এতটা কষ্ট হচ্ছে, যে কিছু বলবার মতো অবস্থায় নেই। ওনার ৪টে ছবিতে কাজ করেছি। একপাড়ায় থাকতাম, বাড়িতেই আড্ডা হতো। আর কিছু বলতে পারছি না।

অপর্ণা সেন- (অভিনেত্রী, পরিচালক) মণৃাল কাকাকে ছোট থেকে দেখছি। ছোট থেকেই ওনার বাড়ি যেতাম ওনার ছবি দেখে বড় হয়েছি।। গীতা মাসি মারার যাওয়ার পরও গেছিলাম। কিছুদিন আগই অঞ্জনকে বলছিলাম, যে চল, শীত পরেছে একবার দেখে আসি মৃণাল কাকাকে। যাব যাব করে আর যাওয়া হল না, চলে গেলেন। ওনার অভাব বোধ সারা জীবন থাকবে। সব মানুষকে একদিন না একদিন তো যেতে হবেই, তবে উনি যে কাজ করে গিয়েছেন সেগুলি যাপন করা উচিত। ওনার কাজ বারবার করে দেখা উচিত। একটা প্রাণ ছিল ওনার সৃষ্টিতে। আজকাল অনেকেই কাজ করেন কিন্তু সৃষ্টির আনন্দ নেই। আমার খবু মনে পড়ে ওনার ছবিতে যখন কাজ করি আমি কাঁদতে ভয় পেতাম, 'আকাশ কুসুম' একটি কান্নার দৃশ্য ছিল, ওই দৃশ্যের জন্য উনি আমায় কীভাবে কাঁদতে হবে শিখিয়ে ছিলেন। গ্লিসারিন দিতে বলেননি, উনি শেখাচ্ছিল, কীভাবে কাঁদতে হবে। ওনার বিভিন্ন কথা শুনে কেঁদে ফেললাম তখন প্রোডাকশনের ভানু কাকা এসে গেছে এসে গেছে গেছে বলে লাফালেন, ওমনি ব্যাস আমি ফের হাসতে শুরু করলাম। তখন মৃণাল কাকা ওনায় বলল, দিলিতো সব গন্ডোগোল পাকিয়ে। উনি আমায় উইগ পড়তে বারণ করতেন।

ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত- (অভিনেত্রী) খুবই দুঃখজনক। উনি মূল্যায়নের উর্দ্ধে। খুব অল্প সময়ের জন্য ওনার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। উনি আমার প্রশংসা করেছিলেন। তবে অবশ্যই সিনেমা ভাবনা নিয়ে উনি আমাদের যা দিয়ে গিয়েছেন তা সত্যিই বিস্ময়। বিশ্ববরেণ্য পরিচালক উনি। উনি যা রেখে গেছেন তাঁর জন্য পরবর্তী প্রজন্ম চির ঋণী থাকবে।

বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত- (চিত্র পরিচালক) একটা যুগ শেষ হয়ে গেল। ব্যক্তিগত ভাবেও ভালো করে চিন্ততাম। আমরা ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলাম, কত আড্ডা মেরেছি, একসঙ্গে থেকেছি, ঘুরেছি। আমার দেখা শ্রেষ্ঠ ছবি গুলির মধ্যে '২২ শ্রাবণ' অন্যতম। ওই সময় সত্যজিৎ রায় ও ঋত্বিক ঘটক এমন ব্যপ্তিতে ছিলেন, তাই মৃণাল সেনের কাজের সেভাবে মূল্যায়ন হয়নি বলে আমার মনে হয়। উনি নানান ধরনের গোপাল ভাঁড়ের গল্প বলতেন, ওগুলি যে কোথা থেকে পেতেন জানি না, নাকি নিজেই বানাতেন, কে জানে! উনি কখনও টেনশন করতেন না। ওনার কাছে একটা জিনিস শিখতে চেয়েছিলাম, যখম তখন, যেখানে সেখানে ঘুমিয়ে পড়া। উনি ট্রেনে ওঠা মাত্রই ঘুমিয়ে পড়তে পারতেন।

ZEENEWS TRENDING STORIES

By continuing to use the site, you agree to the use of cookies. You can find out more by Tapping this link