SpringTime: বড়ন্তির পথে পলাশের আগুন; আপনি ঘরবন্দি হয়ে বৃথা বসে থাকবেন?
বসন্ত আর ফুল পরিপূরক। ফুলের মধ্যে বিশেষ করে পলাশ। দোলের আগে-পরে বাংলাজুড়ে শিমুল-পলাশ-কুসুমের যে প্রাণমাতানো বিকাশ, নীল আকাশের প্রেক্ষাপটে তার যে ফুলেল জৌলুস তার উপমা পাওয়া ভার।
বসন্তে মানুষ যে হঠাৎ করে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে, তা কীসের টানে? বাউন্ডুলে প্রকৃতির মধ্যে রক্তপলাশের দুকূল-ভাসানো উদ্ভাস মানুষকে তার সাময়িক সব ক্ষুদ্রতা থেকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরে। এ এমন এক আগুন যা চোখজুড়নো, মনমাতানো। দহন আছে, তবে তা সৌন্দর্যের।
বাসন্তী প্রকৃতির এই ফুলবিলাস পশ্চিমবঙ্গের নানা জেলায় নানা ভাবে ধরা পড়ে। বিশেষ করে রাঢ় বঙ্গে। বাঁকুড়া-পুরুলিয়া-বীরভূম-পশ্চিম মেদিনীপুর এবং বর্ধমানের একটা অংশে বসন্তের এই অপার দান চোখে পড়ে।
পলাশ আবার সব জেলায় সব অঞ্চলে একই সঙ্গে আসেও না। পলাশ থাকেও মাত্র সপ্তাহ-দুয়েক। স্থানভেদে এই দিনগুলি একটু একটু আগে-পিছে পড়ে।
এখন যেমন আসানসোল ও তার সন্নিহিত অঞ্চলে ফুলের আগুন লেগেছে। আসানসোল থেকে পাঞ্চেৎ ড্যাম, আবার সেখান থেকে বড়ন্তি। এই পলাশ-জোনে ফুলমুগ্ধ চৈত্রের রক্তরচিত কাব্য চোখ ও মন টানবেই!
রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন 'নীল দিগন্তে ওই ফুলের আগুন লাগল'! এই 'ফুলের আগুন' যে কী বস্তু, তা বসন্তের আবহে রাঢ়বঙ্গ বা তার সন্নিহিত অঞ্চলে না গেলে বোঝা সম্ভব নয়।
ছবিতে, ভিডিয়োতে নয়, পরের মুখে ঝাল খেয়ে নয়, অন্যের ভ্রমণকাহিনি পড়েও নয়। নিজের চোখে না দেখলে, বিপুল ফুলসম্ভার দেখার নিজ অভিজ্ঞতা না থাকলে বোঝানো বড়ই কঠিন এই ফুলযাপনের প্রকৃত আনন্দ। ফলে এই সময়ে ঘরে বসে না থেকে চলে যান প্রকৃতির মাঝে। বুক ভরে শ্বাস নিন, চোখ ভরে দেখুন, মন ভরে পুড়ুন। সামিল হোন এক অবিরল বসন্তযাপনে।
কালো পিচের রাস্তা চলে গেছে দূর দিগন্তে। হারিয়ে গিয়েছে কোন দূর পাহাড়ের অন্তরালে। আর সেই সব-হারানো পথের দুপাশে রুদ্রপলাশের রাজসমারোহ। আপনি লং-ড্রাইভে চলে যান। কখনও গড়পঞ্চকোট, কখনও পাঞ্চেৎ জলাধার, কখনও মধুকণ্ডার রুট ধরে বিহারীনাথ অঞ্চল, কখনও আবার সোজা বড়ন্তি। সেখানে গাছে গাছে ফুটে থাকা পলাশ দেখে আপনার মনে না হয়ে পারবে না যে, আপনি বোধ হয় গাছের ডালে প্রদীপ জ্বলতে দেখছেন! ঠিক একেবারে আগুনের শিখার মতো থরে থরে ফুটে আছে অজস্র পলাশ।