Boney-র প্রথম স্ত্রী মোনার বন্ধু থেকে তাঁর সতীন হয়ে ওঠেন Sridevi, কেমন ছিল সেই গল্প?
প্রযোজক বনি কাপুর এবং অভিনেত্রী শ্রীদেবীর সম্পর্ক নিয়ে একসময় বলিউডে বহু গুঞ্জন ঘোরফেরা করেছে । আশির দশকে মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে শ্রীদেবীর প্রেমের চর্চা ছিল বলিউডের হটকেক, এরপর আচমকাই শ্রীদেবীর জীবনে এন্ট্রি নেন বিবাহিত বনি কাপুর। কেমনভাবে শুরু হয়েছিল এই প্রেমের গল্পটা?
জানা যায়, শ্রীদেবীর 'ষোলা সাওয়ান' (১৯৭৯) দেখার পরই বনি কাপুর ঠিক করেন তিনি তাঁর প্রোডাকশন হাউসে 'মিস্টার ইন্ডিয়া' সিনেমায় তাঁকে কাস্টিং করবেন। কারণ তামিল ছবিতে শ্রীদেবী দেখেই প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন বনি। অন্যদিকে, শ্রীদেবীর মা যেহেতু তাঁর মেয়ের অভিনয় কেরিয়ারের যাবতীয় খুঁটিনাটির দেখাশোনা করতেন। তাই বনির প্রথম লক্ষ্য ছিল শ্রীদেবীর মা’কে হাত করা।
২০১৩তে বনি কাপুর খোলসা করেন, সমসাময়িক অভিনেত্রীদের তুলনায় বেশি পারিশ্রমিক নিতেন শ্রীদেবী। tবনি বলেন, ''আমি জানতাম সেই সময় শ্রী প্রায় ৮ লক্ষ টাকা পারিশ্রমিকে একটা সিনেমা করেছিল। আমি ওর মাকে জানিয়েছিলাম, না আমি ১১ লক্ষ টাকা পারিশ্রমিক দেব। তিনি যা চাইছেন আমি তাঁর থেকে বেশি পারিশ্রমিক দিতে রাজি আছি শুনে উনি ভেবেছিলেন আমি বম্বের একজন উন্মাদ প্রোডিউসার। যাক, এভাবেই আমি তাঁর মায়ের কাছে সহজে পৌঁছাতে পেরেছিলাম।''
জানা যায় প্রথমদিকে শ্রীদেবী ছিলেন বনি কাপুরের প্রথমা স্ত্রী মোনার ভাল বন্ধু। বনির বাড়িতে তাঁর ঘন ঘন যাতায়াতও ছিল। প্রথমদিকে অবশ্য বনি কাপুরকে দাদা বলতেন শ্রীদেবী। এমনি অভিনেত্রী বনিকে রাখিও বেঁধে ছিলেন বলে জানা যায়। ১৯৯৩ সালে মুম্বাই বিস্ফোরণের পর, শ্রীদেবী যখন মুম্বাইয়ের একটি হোটেলে থাকছিলেন, তখন বনি অভিনেত্রীর মাকে রাজি করিয়ে শ্রীদেবীকে তাঁর বাড়িতে নিয়ে যান। তখন মোনা শ্রীদেবীর বন্ধু ছিলেন।
তবে মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে দূরত্ব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই বনির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে শ্রীদেবীর। এসময় শ্রীদেবীর মায়ের বড় অঙ্কের ঋণ পরিশোধ করে দেন বনি কাপুর। যে ঘটনার পর বনির প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েন শ্রীদেবী। এসবের মাঝেই, শ্রীদেবীর মা অসুস্থ হয়ে পড়লে, তাঁর চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ অভিনেত্রীর কাছে ছিল না। তাঁর মাকে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে গিয়েছিলেন বনিই। এভাবেই শ্রীদেবী ও বনির ঘনিষ্ঠতা ক্রমাগত বাড়তে থাকে।
জানা যায়, ১৯৯৩ সালে শ্রীদেবীকে প্রথমবার প্রেমের প্রস্তাব দেন বনি। প্রথমে অবশ্য অভিনেত্রী রাজি হননি, এমনকি তিনি নাকি বনির সঙ্গে ৮ মাস কথা বন্ধ করে দেন। পরে ধীরে ধীরে বিভিন্ন ঘটনায় তাঁরা কাছাকাছি আসেন। বনির সঙ্গে সম্পর্কে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন শ্রী।
এদিকে বনি কাপুরের প্রথমা স্ত্রী মোনা সৌরি কাপুরও তাঁর থেকে ১০ বছরের ছোট ছিলেন। মোনা সৌরি কাপুর ছিলেন একজন প্রযোজক এবং উদ্যোক্তা। মোনা এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ''বনি আমার থেকে ১০ বছরের বড় ছিল। যখন আমি ওকে বিয়ে করি তখন আমার বয়স ছিল ১৯। আক্ষরিক অর্থেই আমি ওর সঙ্গেই বড় হয়েছি। আমাদের ১৩ বছরের বিবাহিত সম্পর্ক ছিল। তবে যখন আমি বুঝতে পারলাম আমার স্বামী অন্য কারও প্রেমে পড়েছেন, তখন আমার আর কিছু করার ছিল না।
জানা যায়, প্রথমা স্ত্রী মোনা সৌরি কাপুর কোনওদিনই নাকি বনি কাপুরকে ডিভোর্স দেননি। তাই বৈধ অর্থে তিনিই ছিলেন বনি কাপুরের স্ত্রী। ২০১২ সালের ২৫ মার্চ দুই সন্তানের সামনে মৃত্যু হয় ক্যানসার আক্রান্ত মোনা সৌরি কাপুরের।
মোনা সিংয়ের সঙ্গে বনি কাপুরের সম্পর্ক ভাঙার পর কপালে ঘর ভাঙার অপরাধ অপবাদ জোটে শ্রীদেবীর। জানা যায় শ্রীদেবীর অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার খবরে ভেঙে পড়েন বনির প্রথমা স্ত্রী মোনা সৌরি কাপুর। মেয়ের পরিস্থিতির কথা জেনে মোনার মা নাকি শ্রীদেবীর গায়ে হাত তুলেছিলেন বলেও শোনা যায়।
১৯৯৬ সালে ২ জুন প্রায় ৮ বছরের ছোট শ্রীদেবীকে মন্দিরে গিয়ে বিয়ে করেন বনি কাপুর। জানা যায়, তাঁর সঙ্গে বিয়ের পরও প্রথম পক্ষের দুই সন্তান অর্জুন ও অংশুলাকে নিয়ে বনি কাপুর পিকনিকে গেলে বেজায় বিরক্ত হন শ্রীদেবী। বনিকে প্রথম পক্ষের স্ত্রী ও দুই সন্তানের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করতে বলেন অভিনেত্রী। তখন থেকেই প্রথমা সিং মোনা সিং ও দুই সন্তান অর্জুন, অংশুলার থেকে আলাদাই থাকতেন বনি।
বিয়ের আগে থেকেই বনি কাপুরের সন্তানের মা হতে চলেছিলেন শ্রীদেবী। ১৯৯৭ সালের ৬ মার্চ জন্ম হয় শ্রীদেবীর সেই সন্তানের, নাম রাখেন জাহ্নবী। ২০০০ সালের ৫ নভেম্বর জন্ম হয় শ্রীদেবী-বনির দ্বিতীয় সন্তান খুশি কাপুরের।
২০১৮-র ২৪ ফেব্রুয়ারি দুবাই-এর হোটেলের বাথটাব থেকে উদ্ধার হয় শ্রীদেবীর দেহ। কঠিন পরিস্থিতিতে শেষপর্যন্ত পুরনো মান-অভিমান ভুলে বাবা বনি কাপুরের পাশে দাঁড়ান তাঁর প্রথমপক্ষের দুই ছেলেমেয়ে অর্জুন কাপুর ও অংশুলা কাপুর।