সুদানের জন্য চোখের জল ফেললেন, খুনি কে? জানবেন না!
বিপদ যখন ঘনিয়ে এসেছে, তখন ঢেলে সাজানো হয়েছে কড়া নিরাপত্তা। তার অস্তিত্ব বাঁচাতে কোনও ত্রুটি রাখেনি বন দপ্তর। একটি গন্ডারকে বাঁচাতে ৯০ হাজার একর বিচরণ ভূমি দেওয়া হয়েছে। ২৪ ঘণ্টা সশস্ত্র রক্ষী মোতায়েন করা হয়েছে। সামান্য গন্ডারের জন্য এতকিছু কেন?
কারণ, সে যে আর কয়েক দিনের অতিথি। তবে, সে যেমন তেমন অতিথি ছিল না, পৃথিবীর একমাত্র নর্দান হোয়াইট রাইনো প্রজাতির ব্যাচলর গন্ডার ছিল সে। নাম সুদান।
সোমবার সুদান মারা যায়। সংক্রমণ জনিত যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেওয়া হয় তাকে। সুদান চলে যাওয়ার আর পরে রইল তার মেয়ে নাজিন এবং নাতনি ফাতু। এদের কোনও প্রজনন এখনও হয়নি। সেই হিসাবে সুদান ছিল একমাত্র নর্দান সাদা গন্ডার। কিন্তু এই প্রজাতির এমন দুরাবস্থা কেন? কে দায়ী?
প্রায় ৫০ বছর পিছনে একবার ফিরে তাকানো যাক। ১৯৬০ সালে নর্দান সাদা গন্ডার ছিল ২ হাজারের বেশি।
মাত্র ২০ বছর পার হতেই সেই সংখ্যাটা দাঁড়ায় ১৫-তে। কঙ্গোর গারাম্বা ন্যাশনাল পার্কে মাত্র ওই সংখ্যক গন্ডারকে দেখা যায়। এক ঝটকায় গন্ডারের সংখ্যা কমে যাওয়ার একটা কারণ চোরাশিকারি।
এই গন্ডারের শিং থেকে ওষুধ তৈরির জন্য এশিয়া বিভিন্ন দেশে চালান হয়। অবাধে চলত চোরাশিকার। ১৯৯৩ সালে সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়ায় মাত্র ৩০।
এরপরও থামেনি চোরা শিকার। সাউথ হোয়াইট গন্ডারের পাশাপাশি এই প্রজাতির গন্ডারেরও চলে চোরাশিকার। ২০০৬ সালে মাত্র ৪টি গন্ডার বেঁচে থাকে।
বেঁচে ছিল সুদান এবং তাদের পরিবারের তিন সদস্য। এর মধ্যে একটি পুরুষ গন্ডারও ছিল। ২০০৯ সালে আফ্রিকায় নিয়ে আসা হয় তাদের।
২০১৪ সালে অন্য পুরুষ গন্ডারটি মারা যায়। মহিলা গন্ডার দুটির মধ্যে কেউ কোনও প্রজনন করেনি।
সোমবার সুদানের মৃত্যুর পর তারাই এখন এই প্রজাতির শেষ বংশধর। বিজ্ঞানীরা এখন কৃত্রিম উপায়ে (ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন) সুদানের ডিএনএ সংগ্রহ করে চেষ্টা চালাচ্ছে বংশধরকে রক্ষা করতে। এই প্রচেষ্টা ভীষণ চ্যালেঞ্জের এবং খরচ সাপেক্ষ।
সবশেষে মানবজাতির এটা মনে রাখা দরকার যে, যতই নর্দান সাদা গন্ডারের অস্তিত্ব রক্ষা করতে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করি না কেন, হত্যাকারীর দায় আমরা কখনওই মুছে ফেলতে পারিনা।