করোনা ও আমপান সহ ভরা কোটাল ত্রিমুখী তাণ্ডবে নষ্ট সুন্দরবনের সৌন্দর্য্য, আত্মবিশ্বাস হারাচ্ছে সুন্দরবনবাসী
নিজস্ব প্রতিবেদন: দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ১৯ টি ব্লক নিয়ে সুন্দরবন গঠিত। গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্রের মোহনা ২৫,৩০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে সৃষ্টি করেছে পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ। সরকারি তথ্য অনুযায়ী— ** সুন্দরবনের ১০২টি দ্বীপের মধ্যে বর্তমানে ৫৪ টি দ্বীপের জঙ্গল প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংস করে গড়ে উঠেছে মানুষের বসতি। ** ৫৪টি দ্বীপে বর্তমানে প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ বসবাস করে। ** ৪৮টি দ্বীপ সংরক্ষিত বনাঞ্চল হিসাবে নিজের অবস্থান ধরে রাখতে পেরেছে। ** সাড়ে ৩ হাজার কিলোমিটার নদী বাঁধ সুন্দরবনকে ঘিরে রেখেছে।
এই ব-দ্বীপের সভ্যতা গড়ে উঠেছে নদীর পাড়কে ঘিরে। কিন্তু জন্মলগ্ন থেকে একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে সুন্দরবনের সভ্যতা ভাঙাগড়া আজও অব্যহত। বাংলায় প্রবাদ বাক্য আছে নদীর বাঁধের কাছে বাস, চিন্তা ১২ মাস।
১৮৬৭ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে সাংঘাতিক ক্ষতি হয়ে ছিল সুন্দরবনের। সেই সময় মাতলা নদীতে ডুবে গিয়েছিল জাহাজ। ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল লর্ড ক্যানিং-এর স্বপ্নের ক্যানিং বন্দর। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে তারপর থেকেও একের পর এক ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডব চলেছে এই ব-দ্বীপের উপর দিয়ে। সাম্প্রতিক স্মরণে ২০০৯ সালের আয়লা, ২০১৯ সালে বুলবুল আর ২০২০ সালে আমপানের মতন ঘূর্ণিঝড়ে ধ্বংস স্তূপে পরিণত হয়েছে সুন্দরবন। এক দশকে তিনটি ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে একটু একটু করে ঘুরে দাড়ানো চেষ্টা করে যাচ্ছে সুন্দরবন।
কিন্তু কয়েকদিন ধরে বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপে অবিরাম বৃষ্টি সেইসঙ্গে কৌশিকি অমাবস্যায় জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা। সেইসঙ্গে ভরা কোটালে বাঁধ ছাপিয়ে নদীর নোনা জল ঢুকে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে লোকালয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চাষের জমি ও পুকুরের মাছ চাষ। এক দিকে জলোচ্ছ্বাস অন্যদিকে অপরদিকে নিম্নচাপে টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে নাজেহাল সুন্দরবনবাসী। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ক্যানিং-১ ও ২,বাসন্তী, গোসাবা, ঝড়খালী সহ বিভিন্ন ব্লক।ভরা কোটালে জলের তোড়ে একাধিক জায়গায় বাঁধ ভেঙে নোনা জলে প্লাবিত বসতবাড়ি।
সুন্দরবনের মানুষের ঝড়ের সঙ্গে সহবাস। তাই তাঁরা ঝড়কে ভয় পায় না। ভয় পায় বাঁধ ভাঙাকে। সেই বাঁধ ভাঙছে। যেটা এখানকার মানুষের সবচেয়ে মাথা ব্যাথার কারণ। আয়লার পর বাঁধ ঠিক হয়েছিল। কিন্তু যে পর্যন্ত হওয়ার কথা সে পর্যন্ত হয়নি। মাত্র সাড়ে তিন কিলোমিটার নদী বাঁধ দেওয়া হয়েছে। এরফলে সুন্দরবনের শতাধিক পরিবার নোনা জলে প্লাবিত হয়ে পড়েছে। কোটালের নোনা জলে ভেঙেছে ঘরের মাটির দেওয়াল।
এই পরিস্থিতিতে সুন্দরবনবাসীর রোজগারকে গ্রাস করেছে করোনা। নদীতে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা। লকডাউনে অন্যান্য কাজকর্ম বন্ধ। জীবনযুদ্ধে ক্রমশ হার মানতে হচ্ছে সুন্দরবনের হাজার হাজার পরিবারকে। সব মিলিয়ে করোনা, আমপান এবং কোটাল এই ত্রিমুখী তান্ডবে সুন্দরবন হারাচ্ছে তাঁর সৌন্দর্য্য আর সুন্দরবনবাসী হারাচ্ছে জীবনযুদ্ধের আত্মবিশ্বাস।