আন্তর্জাতিক ফুটবলে Sunil Chhetri র ১৬ বছর! ফিরে দেখা `ক্যাপ্টেন ফ্যান্টাস্টিক`-এর অবিস্মরণীয় সব কীর্তি

Subhapam Saha Sat, 12 Jun 2021-8:31 pm,

দেখতে দেখতে আন্তর্জাতিক ফুটবলে ১৬ বছর কাটিয়ে ফেললেন সুনীল ছেত্রী। ২০০৫ সালের ১২ জুন চির প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দেশের জার্সিতে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে অভিষেক করেছিলেন ২০ বছরের সুনীল। দলের তারকা স্ট্রাইকার বাইচুং ভুটিয়া চোট পাওয়ায় কোচ সুখবিন্দর সিং দল গোছাতে নিদ্রাহীন রাত কাটিয়ে ছিলেন। শেষ পর্যন্ত সুনীলকে নিয়েই তিনি দল সাজিয়ে ছিলেন। সাদা জার্সিতে কুয়েতায় নেমেই ম্যাচে ছাপ রাখেন সুনীল। করেন গোল। আর সেদিনের সুনীল আজ ভারত অধিনায়ক। দেশের জার্সিতে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলে সর্বোচ্চ গোলদাতা 'ক্যাপ্টেন ফ্যান্টাস্টিক'।

সুনীল একেবারে খেলাধুলো করার পরিবার থেকেই উঠে এসেছেন। সুনীলের মা সুশীলা ছেত্রী ও তাঁর দুই যমজ বোন তিনজনেই নেপালের জাতীয় মহিলা ফুটবল টিমে খেলেছেন। এমনকী সুনীলের বাবা কেবি ছেত্রীও সার্ভিসেসের হয়ে খেলেছেন। তিনি ভারতীয় সেনায় কর্মরত ছিলেন। সেকেন্দ্রেবাদে জন্মানো সুনীল বাবার বদলির চাকরি জন্য গ্যাংটক, দার্জিলিং, নয়া দিল্লি ও কলাকাতাতেও থেকেছেন। যদিও সুনীল নিজেকে দিল্লির ছেলে বলতেই পছন্দ করেন।

সুনীল গ্যাংটকের বাহাই স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। এরপর তিনি দিল্লির আর্মি পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন। স্কুল শেষ করার পর সুনীল কলকাতার আশুতোষ কলেজ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়াশোনা শেষ করেন। কিন্তু এরপর আর সুনীল বই-খাতার সঙ্গে সম্পর্ক রাখার সুযোগ পাননি। পড়াশোনাকে গুডবাই বলে একেবার পুরোদমে ফুটবলের জন্য নিজেকে সঁপে দেন। ২০০১ সালে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত এশিয়ান স্কুল চ্যাম্পিয়নশিপে সেই যে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করলেন সুনীল, আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে।

 

সুনীল একমাত্র ভারতীয় ফুটবলার যে ভারত ছাড়াও তিন দেশে ফুটবল খেলেছেন। এশিয়া, ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার ক্লাব ফুটবলের স্বাদ পেয়েছেন তিনি। সুনীল আমেরিকার মেজর লিগ সকারে খেলেছেন কানসাস সিটির হয়ে। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর শৈশবের ক্লাব স্পোর্টিং পর্তুগালে খেলেছেন সুনীল। এছাড়াও সুনীল সই করেছিলেন ব্রিটেনের কুইন্স পার্ক রেঞ্জার্সে। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার তার ভিসা নাকচ করে দেওয়ায় এই ক্লাবে সুনীলের খেলা হয়নি।

হ্যাটট্রিকের রাজাও সেই সুনীল। একমাত্র ভারতীয় ফুটবলার হিসেবে দেশের জার্সিতে তিনবার হ্যাটট্রিক করেছেন তিনি। তাজাকিস্তান (২০০৮), ভিয়েতনাম (২০১০) ও চিনা তাইপেইয়ের (২০১৮) বিরুদ্ধে এই নজির গড়েন সুনীল। সুনীল ইন্ডিয়ান সুপার লিগেও নর্থইস্ট ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালে হ্যাটট্রিক করেন। তারপর ২০১৮ সালে তিনি পুণে সিটির বিরুদ্ধেও এক ম্যাচে তিন গোল করেন।

২০১৮ সালে সুনীল আরও একটি অনন্য নজির গড়েন। প্রথম ভারতীয় ফুটবলার হিসেবে আন্তর্জাতিক গোলের হাফ-সেঞ্চুরি করেন। তাঁর ৫০ নম্বর গোলটি এসেছিল বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বের ম্যাচে গুয়ামের বিরুদ্ধে। 

 

সুনীল ২০১৮ সালে ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপে কেনিয়ার বিরুদ্ধে মুম্বইতে দেশের হয়ে ১০০ নম্বর ম্যাচ খেলেন। খেলার আগে তাঁর হাতে বিশেষ স্মারক তুলে দিয়েছিলেন দুই কিংবদন্তি ভারতীয় ফুটবলার বাইচুং ভুটিয়া ও আইএম বিজয়ন। বাইচুংয়ের পর দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে সুনীল ১০০ নম্বর আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার নজির গড়েন। 

এক বা দু'বার নয়, সুনীল আইএফএ-র বর্ষসেরা ফুটবলারের শিরোপা পেয়েছেন ৬ বার। ২০০৭, ২০১১, ২০১৩, ২০১৪, ২০১৭ ও ২০১৮-১৯ মরসুমে। আইএম বিজয়ন এবং জো পল আনচেরিরা তিনবার ফেডারেশনের বিচারে সেরা ফুটবলার হয়েছিলেন। বাইচুং পেয়েছেন দু'বার।

ভারত সরকার সুনীলকে অর্জুন পুরস্কার ও পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করেছে।

দোহায় বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পবের ম্যাচে সুনীল ছেত্রীর জোড়া গোলেই ভারত ২-০ হারিয়েছে বাংলাদেশকে। এই জোড়া গোলের সুবাদেই সুনীল পিছনে ফেলে দিয়েছেন আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি ও ছ'বারের ব্যালন ডি'অর জয়ী লিওনেল মেসিকে। এই মুহর্তে সক্রিয় আন্তর্জাতিক ফুটবলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ গোলদাতাদের তালিকায় ২ নম্বরে উঠে এসেছেন সুনীল। তিনে মেসি (৭২ গোল)। তালিকায় সবার ওপরে পর্তুগিজ জাদুকর ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো (১০৩টি গোল)। এরপরেই সুনীলের সঙ্গে মেসির তুলনা শুরু হয়ে যায়।

 

মেসির সঙ্গে তাঁর তুলনার প্রসঙ্গে সুনীল বলেন, "এই নিয়ে দেখছি প্রচুর কথা হচ্ছে। এমনকী আমার পরিবারের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপেও! আমি সবাইকে একই জিনিস বলেছি। সত্যিটা এটাই যে, মেসির সঙ্গে আমার কোনও তুলনাই চলে না। বিশ্বের কারোর সঙ্গে নয়। আমি মেসির বিরাট ভক্ত। আর কোনও তুলনা একেবারেই নয়।" মেসির সঙ্গে দেখা হলে সুনীল কী করবেন?  উত্তরে তিনি বলেন, "আমি বলব, হায় আমি সুনীল ছেত্রী। আমি আপনার বিরাট ভক্ত। আমি মেসিকে কোনও সমস্যায় ফেলব না। শুধু মেসি বলেই নয়, আমি যাঁদের যাঁদের ফ্যান, তাঁদের কাউকেই খুব একটা সমস্যায় ফেলব না। ওঁর সঙ্গে দেখা হলে আমার ভাললাগবে, নাহলেও আমি ভালই থাকব। আমার যখন মন খারাপ হয়, আমি মেসির ভিডিয়ো দেখে খুশী হয়ে যাই। তাই যখন দেখা হবে আমাদের, আমি মেসির সঙ্গে হ্যান্ডশেক করে এটাই বলব, আমি আপনার বিরাট ফ্যান।"

 

ZEENEWS TRENDING STORIES

By continuing to use the site, you agree to the use of cookies. You can find out more by Tapping this link