Manabendra Mukhopadhyay: সেদিন মানবেন্দ্রের গানের পরীক্ষা নিলেন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়...
চাঁপাডাঙার বউ। কাহিনি তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সিনেমা হবে। পরিচালক নির্মল দে। নির্মল মানবেন্দ্রকে বললেন, এই ছবিতে সঙ্গীত পরিচালনার কাজ হতে পারে। কিন্তু তার আগে পরীক্ষা দিতে হবে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে।
তত দিনে প্লে-ব্যাকে কিছু নামধাম হয়েছে মানবেন্দ্রের। সাড়ে চুয়াত্তর-এ ছোট্ট একটু আহির ভৈরো আলাপ গেয়েছেন। যাই হোক, তা বলে একেবারে তারাবাবুর কাছে পরীক্ষা? তবু যাওয়া হল তারাশঙ্করের টালা পার্কের বাড়ি।
মানবেন্দ্র দেখলেন, ব্যাঘ্রচর্মের উপরে বসে লাল ধুতি পরে লিখছেন তারাশঙ্কর। গলায় উপবীত, রুদ্রাক্ষ। আলাপ করিয়ে কথা পাড়তে না পাড়তেই নির্মলবাবুকে তারাশঙ্কর বলে দিলেন, হবে না। গল্পটা খুব শক্ত। স্ক্রিপ্ট আমিই লিখছি। তুমি কোনও পাকা সঙ্গীত পরিচালককে আনো।
এর পর আর কোনও কথা নেই। উঠে আসতে হবে। মানবেন্দ্রের মন ভেঙে যাওয়ারই কথা। কিছুক্ষণ বাদে তারাশঙ্কর বললেন, আচ্ছা, দুকলম লিখে দিচ্ছি। সুর করো তো দেখি।
যেন হালে পানি পেলেন মানবেন্দ্র। হয়তো শেষ পর্যন্ত হবে না, তবু মরিয়া মানবেন্দ্র প্রশ্ন করলেন, আচ্ছা, সিচ্যুয়েশনটা কী? যুবক-সঙ্গীতকারের এ-কথাতেই বোধ হয় একটু থমকেছিলেন কাহিনিকার।
তারাবাবু বললেন, মহাতাপ (উত্তমকুমার) গাজনে শিব সেজে নৃত্য করছে। শুনে গানের কথা হাতে নিলেন মানবেন্দ্র। দেখলেন লেখা আথে-- শিব হে/অশিব শঙ্কর…। ঢাকের তাল মাথায় রেখে কীর্তনের ঢঙে সুর বেঁধে গাইতে লাগলেন মানবেন্দ্র। কিছুক্ষণ বাদে দেখেন তারাশঙ্করও উঠে পড়েছেন। মুখে তৃপ্তির হাসি। গান থামলে নির্মল দে-কে তারাবাবু বললেন, ঠিক জনকেই এনেছ। এই-ই পারবে। উত্তমের ব্যক্তিগত বন্ধু আগে-পরে উত্তমের সঙ্গে বহু কাজ করেছেন। আবার উত্তমের প্রস্তাব ফিরিয়েও দিয়েছিলেন একবার। বহুজন পরিচালকের সঙ্গে একইি ছবির সঙ্গীত পরিচালনার কাজ করতে চাননি বলে শোনা গিয়েছিল। সব মিলিয়েই মানবেন্দ্র ছিলেন দারুণ এক চরিত্র।