বিস্মৃতির চর ঠেলে নতুন করে জেগে উঠছে তারাশঙ্করের অপূর্ব হাঁসুলি
1 দীর্ঘদিন উপেক্ষিত থাকার পর, এবার পর্যটকদের জন্য মনোরম পরিবেশ হিসেবে ক্রমে সেজে উঠতে চলেছে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত বিশিষ্ট উপন্যাসের ভিত্তিভূমি বীরভূমের হাঁসুলি বাঁক অঞ্চলটি।
হাঁসুলি বাঁককে অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে তুলে ধরতে চাই পরিকল্পনা। এই উদ্দেশ্যে এ দিন হাঁসুলি বাঁক পরিদর্শনে আসেন ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট-সহ স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি প্রমুখ। জেলা শাসকের বক্তব্য, হাঁসুলি বাঁক প্রত্যেক বাঙালির কাছেই অত্যন্ত পরিচিত একটি নাম। এর সৌন্দর্যের কথা তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখাতেই সকলে পড়েছেন। এখন শুধু সেটাই মানুষকে দেখার সুযোগ করে দেওয়া।
অনেক ভাবনাচিন্তা রয়েছে এই হাঁসুলি বাঁক নিয়ে। যেমন, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি মূর্তি বসানোর কথা ভাবা হয়েছে। তৈরি করা হবে একটি ওয়াচটাওয়ার। বানানো হবে কাহারদের মূর্তিও। তৈরি হবে বসার জায়গা। সব পক্ষেরই বক্তব্য, এর প্রাকৃতিক পরিবেশ অক্ষুন্ন রেখেই হাঁসুলি বাঁককে নতুন করে সাজিয়ে তোলা হবে।
প্রকৃতির ভাঙা-গড়ায় হাঁসুলি বাঁক এখনও নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে কোনো ক্রমে। হয়তো তার আদি সৌন্দর্যের আদিমতা কোথাও কোথাও টোল খেয়েছে। কিন্তু গরিমা কিছুটা ম্লান হলেও এখনও তার টান বাঙালির কাছে অটুট।
যে হাসুলি বাঁকের সৌন্দর্যের উপাখ্যান আমরা তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখার মধ্যে দেখতে পেয়েছি, যার অপরূপ সৌন্দর্যের বর্ণনা আমরা ওই উপন্যাসের পাতায়-পাতায় পড়ে মুগ্ধ হয়েছি, সেই হাঁসুলি বাঁক এখন কালচে পড়া রুপোর গয়নার মতো হয়ে গেছে যেন। হাঁসুলি বাঁক তারাশঙ্করের আমলেও বারবার তার রূপ পরিবর্তন করেছিল। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় খুব কাছ থেকে তা দেখেছিলেন, অনুভব করেছিলেন এবং লিখেছিলেন।
এই প্রজন্মের বাঙালি মনে রেখেছে কিনা কে জানে, তারাশঙ্করের এই অমর উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে বিশিষ্ট চিত্রপরিচালক তপন সিনহা একটি ছবিও তৈরি করেছিলেন। তা-ও খুব সাড়া ফেলেছিল। এক মহাপ্রতিভাবান লেখকের কলম এক মহাপ্রতিভাবান পরিচালকের ক্যামেরায় এক বিশিষ্ট সৃষ্টি হয়ে উঠেছিল।
হাঁসুলির পাশেই এর সেই বিখ্যাত স্থানীয় কাহার পাড়া। যার কথা উল্লেখ করেছিলেন তারাশঙ্কর তাঁর উপন্যাসে। এখন ওই কাহার পাড়াও হাঁসুলির নবরূপ ধারণের বিষয়ে খুশি।