Durga Puja 2022: তিনশো বছরের ইতিহাস নিয়ে দাঁড়িয়ে নগরীর রায় পরিবারের পুজো
বীরভূমের সদর শহর সিউড়ি থেকে প্রায় আট থেকে নয় কিলোমিটার দূরে নগরী গ্রাম। বীর রাজার বংশধর ছিলেন নেহাল চন্দ্র রায়। নেহাল চন্দ্র রায়, নেপাল চন্দ্র রায়, এবং নকুল চন্দ্র রায় প্রথমে বসবাস স্থাপন করেন নগরী গ্রাম থেকে দুই কিলোমিটার দূরে নওয়াডিহি গ্রামে। জানা যায় কেশব চন্দ্র রায়ের পাঁচ বছরের দ্বিতীয় পুত্র কৈলাসনাথ রায় খেলতে খেলতে একটি কূয়োয় পড়ে যায়। কেশব চন্দ্র রায় কাঠের তৈরি খড়ম সহ পা দুটি কুয়োর মধ্যে ঝুলিয়ে মা দুর্গার উদ্দেশ্যে বলেন, 'মা আমার সন্তান যদি আমার খড়ম সহ পা ধরে উপরে উঠে আসে তাহলে এই বছর থেকে দুর্গা পুজো করবো'। প্রচলিত আছে দেবীর কৃপায় কৈলাসনাথ বাবার খড়ম সহ পা ধরে জল থেকে উঠে আসে। সেই থেকে শুরু হয় পুজো।
বীরভূমের খয়রাশোল থানার পেরুয়া গ্রামের সূত্রধর পরিবার পাঁচ পুরুষ ধরে একই কাঠামোতে একইভাবে একই রঙ দিয়ে মূর্তি তৈরি করে আসছে। ইংরেজ শাসনের সময় স্বাদেশিকতার ধারাকে বহন করার জন্য মূর্তির ডাকসাজ বর্জন করা হয়। তখন থেকেই মাটির সাজ আর সোনা রুপার গয়নায় প্রতিমা সাজানো হয়।
নগরী গ্রামের চৌমাথা থেকে চোখ মেললেই দেখা যায় গ্রামের বিখ্যাত স্থাপত্যের এক অনন্য নিদর্শন "আটচালা" । দু’শ বছরের আগে তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত জমিদার ইন্দ্র নারায়ণ রায়ের আমলে তৈরী হয় এই প্রাণকেন্দ্র। চুনসূরকির ১২টি থাম্বার উপর ভর করে বাইরের চারটি চালা। ভিতরের চারটি রিজু, স্থুল,লম্বা শাল কাঠের উপর। প্রচুর সরু পাতলা বাঁশের ছিলা দিয়ে নিপুণ হাতে বানানো আটটি ছাউনী, তার উপর খড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। বর্তমানে তার জায়গায় কংক্রিটের পিলারের উপর টিনের ছাউনি। এই আটচালার আছে বর্ণময় ইতিহাস। ’৪৭-এ স্বাধীনতার আগের দিন সারারাত ব্যাপী জলসা এবং মিষ্টি বিতরণ সহ ৫০ এর মন্বন্তরে লঙ্গর খানার ইতিহাস দেখেছে এই আটচালা।
রায় পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যই কর্মসূত্রে গ্রামের বাইরে থাকলেও পুজোর সময় সকলেই গ্রামে ফিরে আসে।পুজোর চারদিন সন্ধ্যাবেলা অনুষ্ঠিত হয় নানারকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রায় তিনশ বছরের পুরোনো এই পুজো। বর্তমানে আড়ম্বর কম হলেও রায় পরিবারের সদস্যদের মধ্যে রয়েছে আন্তরিকতা,নিয়মনিষ্ঠা ,ভক্তি ও সৌহার্দ্য।
আগে ছাগ বলিদান হলেও বর্তমানে তা অমানবিক বিবেচনা করে বন্ধ করা হয়েছে। পুজোর সময় সপ্তমী এবং নবমীর দিন অন্নের ভোগ হয়। অষ্টমীতে হয় লুচির ভোগ। সেখানে অনেকেই নিমন্ত্রিত থাকেন। দশমীর দিন রায় পরিবারের মা দুর্গার ঘট বিসর্জন হওয়ার স্পঙ্গে সঙ্গেই ওই একই বেদীতেই ঘট স্থাপন করে কালী পুজোর সূচনা হয়।
এই পরিবারের পুজোর বিশেষত্ব হল সপ্তমীর দিন পরিবারের চারজন কিশোর পাটবস্ত্র পরে চতুরদোলায় নব পত্রিকা অথবা কলা বৌ নিয়ে আসে নির্দিষ্ট পুকুর থেকে ঢাক ঢোল আর সহস্রধারা কে সঙ্গী করে।এই দৃশ্য দেখার জন্য আশে পাশের গ্রামের বহু মানুষের সমাবেশ ঘটে।