Two Poets: ৬ মার্চ দিনটি ফ্লোরেন্সের সঙ্গে জুড়ে দিল কাঁচরাপাড়াকে
৬ মার্চ দুই প্রতিভাধরের জন্ম। একজন বিশ্ববিশ্রুত নাম। অন্যজন হয়তো ভারতেই তত পরিচিত নন। একজন শিল্পী, অন্যজন কবি। একজন হলেন মাইকেলেঞ্জেলো, অন্যজন ঈশ্বর গুপ্ত। বাংলার এই মধুর বসন্তদিন বেঁধে দিল দুই দেশকে, দুই সংস্কৃতিকে, দুই বিশ্বকে।
পুরো নাম মিকেলাঞ্জেলো দি লোদোভিকো বুওনারোত্তি সিমোনি। ১৪৭৫ সালের ৬ মার্চ জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ইতালীয় রেনেসাঁর এক বিশিষ্ট মুখ। ইতালীয় এই ভাস্কর, চিত্রকর, স্থপতি একজন কবিও।
বৈচিত্রময়তা ও ব্যাপ্তির কারণে মিকেলাঞ্জেলোকে 'রেনেসাঁ-মানব' বলে বর্ণনা করা হয়। মিকেলাঞ্জেলোর জীবৎকালেই তাঁকে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ জীবিত শিল্পী হিসাবে বিবেচনা করা হত। তিনিই পাশ্চাত্যের প্রথম শিল্পী জীবদ্দশাতেই যাঁর জীবনী প্রকাশিত হয়। ইতিহাসে তাঁকে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ শিল্পীদের একজন হিসাবে ধরা হয়।
ভ্যাটিকান শহরের ব্যাসিলিকা গির্জায় রক্ষিত তাঁর পিয়েতা ভাস্কর্যটি ইতালিয় নবজাগরণের যুগের ভাস্কর্যশিল্পর এক অনবদ্য নিদর্শন। ১৪৯৮-৯৯ সালের মধ্যে তিনি এই ভাস্কর্যটি তৈরি করেন। মার্বেলে তৈরি এই মূর্তিটিতে দেখা যায় ক্রুশ থেকে নামানো যিশুর মৃতদেহ কোলে শোকস্তব্ধ মা মেরি! পিয়েতা ছাড়া মিকেলাঞ্জেলো'র অন্যতম পরিচিত ও বিখ্যাত কাজ 'ডেভিড'। রোমের সিস্টিন চ্য়াপেলের সিলিংয়ে ফ্রেসকোতে ফুটিয়ে তুলেছিলেন 'জেনেসিস'।
অন্যদিকে, ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের জন্ম ১৮১২ সালের ৬ মার্চ। উনিশ শতকের এক বিশিষ্ট বাঙালি কবি, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক। তাঁর হাত ধরেই বাংলা কবিতা মধ্যযুগীয় ধাঁচ অতিক্রম করে আধুনিকতার পথে পা বাড়িয়েছিল। তিনি 'গুপ্ত কবি' নামে পরিচিত ছিলেন। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁকে 'খাঁটি বাঙালি কবি' বলে অবহিত করেছিলেন।
ঈশ্বর গুপ্ত বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে যুগসন্ধির কবি হিসেবে পরিচিত। তিনি গ্রাম গ্রামে ঘুরে বেড়াতেন, কবিগান বাঁধতেন। প্রায় বারো বৎসর গ্রামে-গঞ্জে ঘুরে ঘুরে তিনি প্রাচীন কবিদের তথ্য সংগ্রহ ক'রে জীবনী রচনা করেছিলেন। তাঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি ভারতচন্দ্র রায়, রামপ্রসাদ সেন, নিধুগুপ্ত, হরু ঠাকুর ও কয়েকজন কবিয়ালের জীবনী প্রকাশ করা। পরবর্তীকালের বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, দীনবন্ধু মিত্র, রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ লেখকের জন্য উপযুক্ত ক্ষেত্র তৈরির কৃতিত্বও তাঁর।
১৮৩১ সালে তিনি 'সংবাদ প্রভাকর' পত্রিকার সম্পাদনায় নিযুক্ত হয়েছিলেন। ১৮৩২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি তিনি সংবাদ রত্নাবলী পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেন। সংবাদ প্রভাকর ছিল একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা,কিছু দিন বন্ধ থাকার পর পত্রিকাটি ১৮৩৬ সালে পুনরায় চালু হয়। তিনি এটিকে দৈনিকে রূপান্তর করেন ১৮৩৯ খ্রিষ্টাব্দে। তিনি 'সংবাদ প্রভাকর'-এর সম্পাদনা করে বাংলা সাংবাদিকতাকে একটা স্তরে পৌঁছে দিয়েছিলেন।