#উৎসব: শোভাবাজার রাজবাড়িতে চক্ষুদান হল মায়ের
পুজোর আর মাত্র ক'দিন। মহালয়া হয়ে গেল মানে, পুজো দোরগোড়ায়। আর এই মহালয়ার বিশেষ তিথিতেই চক্ষুদান-পর্ব সারা হল শোভাবাজার রাজবাড়িতে। শোভাবাজারের প্রাচীন ইতিহাস আছে। যা নিয়ে সকলেই উৎসুক।
ব্যবসায়ী শোভারাম বসাকের আউটহাউস কিনে বাড়ি তৈরি করেছিলেন রাজা নবকৃষ্ণ দেব। শোভারাম বসাকের নামের বাজার ছিল 'শোভাবাজার'। নবকৃষ্ণ দেবের বাড়ির পরিচয়ও তাই দাঁড়িয়ে গেল 'শোভাবাজার রাজবাড়ি'।
১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধের পরে নবকৃষ্ণ দেব শোভাবাজার রাজবাড়িতে দুর্গাপুজোর সূচনা করেছিলেন। এই পুজোর ইতিহাসেই রয়েছে ইংরেজ-যোগ। রবার্ট ক্লাইভের পলাশীজয়ের উদযাপনেই আসলে শোভাবাজার রাজবাড়িতে দুর্গা পুজোর শুরু। সিরাজের বিরুদ্ধে ইংরেজদের জয়ে নবকৃষ্ণ দেব সাহায্য করেছিলেন। তাই ইংরেজদের জয় উদযাপন করতেই নবকৃষ্ণ তাঁর বাড়িতে দুর্গা পুজো শুরু করেন।
এখন উত্তর কলকাতার অন্যতম বনেদি বাড়ির পুজো হল শোভাবাজার রাজবাড়ি। এই বাড়ির পুজোর কিছু নিয়ম আছে। যেমন, কৃষ্ণপক্ষের নবমী তিথিতে বোধন হয় এই পুজোর। সেই দিন থেকে ষষ্ঠী পর্যন্ত এই বাড়িতে চণ্ডীপাঠ হয়।
শোনা যায়, এই বাড়িতে পুজোর সময়ে একবার উপস্থিত হয়েছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ। ১৮৯৭ সালে স্বামী বিবেকানন্দ শিকাগো বিশ্ব ধর্ম মহাসভা থেকে ফেরার পরে বিনয়কৃষ্ণ দেব বাহাদুর তাঁকে এই বাড়িতেই সংবর্ধনা জানান।
এই রাজবাড়ির দেবীমূর্তির রয়েছে এক বৈশিষ্ট্য। এ বাড়িতে মা বৈষ্ণবীরূপে পূজিতা হন। পুজোর অন্নভোগ হিসেবে গোটা আনাজ, গোটা ফল, চাল, মতিচুর, গজা-সহ বাড়িতে বানানো ৩৩ রকমের মিষ্টান্ন ভোগ দেওয়া হয় মা-কে। কামানের তোপ দেগে সে যুগে শুরু হত সন্ধিপুজো। রাজা নবকৃষ্ণ দেবের আমল থেকেই উল্টোরথের দিন কাঠামো পুজো। রূপোর কারুকাজ করা সোনার সিংহাসনে মা দুর্গাকে বসানো হত। সেই সময় রাজবাড়িতে পশুবলির চলও ছিল। আগে দশমীর দিন নীলকন্ঠ পাখি উড়িয়ে প্রতিমা নিরঞ্জন হত। এখন সে প্রথাও বন্ধ।