#উৎসব: শিকার করতে বনে ঢুকে শবরযুবক কুড়িয়ে পেলেন পাথরের মাতৃমূর্তি

Soumitra Sen Tue, 12 Oct 2021-1:58 pm,

জয়চণ্ডী মন্দিরে সারা বছর মায়ের পুজা করেন শবরেরা। তবে পুজোর পাঁচদিন তাঁদের সেই অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। তখন পুজো করেন ব্রাহ্মণেরাই।

সাঁকরাইল ব্লকের বাঁকড়া গ্রাম। একসময় ঘনজঙ্গল ছিল এই এলাকা। শবররা এখানে কাঠ কাটতে অথবা শিকার করতে আসত। একবার শিকারে আসা এক শবর যুবক হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলেন। উঠে কী ভাবে পড়লেন তা দেখতে গিয়ে ভালো করে জায়গাটা নজর করে তিনি দেখেন পাথরের এক দেবীমূর্তি পড়ে রয়েছে! 

 

সেটি নিয়ে যুবকটি বাড়ি ফিরে আসেন। কিন্তু সকালে উঠে তিনি সেই মূর্তি আর বাড়িতে খুঁজে পান না। কী মনে করে খুঁজতে-খুঁজতে যেখান থেকে মূর্তিটি পেয়েছিলেন জঙ্গলের ওই জায়গায় ফিরে যান এবং দেখেন দেবীমূর্তি একই রকমভাবে ওখানেই অবস্থান করছেন। আশ্চর্য হন এবং মূর্তিটি আবার সংগ্রহ করেন। সেদিনই ওই শবর যুবক স্বপ্নাদেশ পান, ওই জায়গাতেই মায়ের পুজো করতে হবে। জঙ্গলের ফুল ফলেই হবে পুজা। পুজো করবেন শবর দেহুরী অর্থাৎ শবর পুরেহিতেরা। সেই মত শুরু হয় দেবীপুজো।

গোল বাঁধে এলাকার ব্রাহ্মণ সমাজে। ব্রাহ্মণ থাকতে পুজো করবে শবররা? এ হতে পারে না। ব্রাহ্মণরা মাতৃমূর্তি তুলে নিয়ে চলে আসেন গ্রামে। নতুন করে প্রতিষ্ঠা করা হয় মাকে। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার ঘটে। মা কিছুতেই পুজো নেন না। শেষে ফের জঙ্গলে (বর্তমান স্থানে) মন্দির করে ব্রাহ্মণরা মায়ের পুজোর চেষ্টা করেন। তাতেও ব্যর্থ হন। তখন ব্রাহ্মণরা শবরদেরই পুজো করতে বলেন। শবরেরা পুজো শুরু করতে কোনো বাধাবিঘ্ন ছাড়াই পুজো হয়।

এরপর থেকেই পুজোর দায়িত্ব দেওয়া হয় শবরদেরই। কিন্তু দুর্গাপুজোর ৫দিন তাঁদের কাছ থেকে পুজোর অধিকার নিজেদের হাতে তুলে নেন ব্রাহ্মণেরা। পুজার পাঁচ দিন শববেরা শুধু বলি দেওয়ার কাজ করেন। অর্থাৎ, ঘাতকের ভূমিকায় থাকেন। সেই প্রথা আজও পালন হয়। 

পুজোর দিন এখানে মেলা বসে। বহুদূর থেকে মানুষ পুজা দিতে আসেন এখানে। আগে শবররা মাকে পুজো দিয়ে শিকারে যেতেন। তাঁদের বিশ্বাস, মাকে পুজো করে গেলে ভালো শিকার মেলে। মিলতও। আস্তে আস্তে মায়ের মাহাত্ম্য ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। জাগ্রত দেবী বলে মানা হয় 'মা জয়চণ্ডী'কে।

ZEENEWS TRENDING STORIES

By continuing to use the site, you agree to the use of cookies. You can find out more by Tapping this link