Ghosts of Bengal: জুজু কে? স্কন্ধকাটা কোথায় থাকে? বাংলার ভূতেদের চিনে নিন...

Rajat Mondal Mon, 28 Oct 2024-6:22 pm,

রাগ, সুখ, আনন্দ, ভালোবাসা, উত্তেজনা এমন কিছু অনুভূতি যা প্রত্যেকেই অনুভব করে থাকে, তবে অনুভূতি হিসেবে ভয় খুব একটা কাম্য না হলেও ভয়ের মধ্যে থাকা রোমাঞ্চকেও এড়ানো বেশ কঠিন। মানুষের সঙ্গে ভয়ের সম্পর্কটা বেশ পুরনো। বিভিন্ন আড্ডা-আসর জমে যখন রোমাঞ্চকর কোনও ভূতের গল্প এসে পড়ে আড্ডার টেবিলে। 

বুদ্ধদেব বসুর 'ভূতের ভয়' প্রবন্ধে তিনি ভূতের উপস্থিতিকে বেশ তোয়াজ করেই বলেছেন, 'আজকের দিনের সব সত্য আর অঙ্ক- যা হচ্ছে গিয়ে ফ্যাক্টস, খবরের কাগজের সত্য…ওসব যখন ধুলো হয়ে হারিয়ে যাবে হাওয়ায়, তখনও ভূত থাকবে… ভূত থাকবে মানুষ থাকবে যতদিন। কে বলে ভূত নেই? ভূত যে আছে আমাদের মনের মধ্যে, আমাদের রক্তে…বাইরের কোনো জিনিস নয়, আমরাই তাকে সৃষ্টি করেছি মনের ইচ্ছা থেকে। ভূত আমরা চাই।' বাংলা সাহিত্যের অলি-গলিতেও হরেক রকমের ভূতেদের ঘুরে বেড়ানোর কথা পড়ে থাকি এমনই কয়েকটি পরিচিত-অপরিচিত ভূতেদের কথা আপনি কি জানেন? 

ইংরেজি বোগাস বু আর বাংলা জুজু প্রায়ই একরকম। ভূতের দুনিয়ার সব কথা ভিত্তিহীন হলেও জুজু বোধহয় সবথেকে এগিয়ে। মূলত বাঙালি বাবা-মায়ের ঝামেলা কমাতে জুজুর জন্ম। বাচ্চাদের শাসন করেও যদি সামলানো না যায়, তখন তাদের মনে এক কল্পিত ভূতের চরিত্রের জন্ম দেওয়া হয়। লক্ষ্মী বাচ্চা হয়ে না হলেই চলে আসবে জুজু। যত দুষ্টুমি করুক না কেন বাচ্চারাও সে চরিত্রে বিশ্বাস করে নেয় খুব সহজে। 

মানুষখেকো রাক্ষসদের বিচরণ দেখা যায় মহাভারত-রামায়ণের মতো মহাকাব্য থেকে শুরু করে রূপকথার জগত, সবজায়গাতেই। নাকি স্বরে 'হাঁউমাঁউখাঁউ, মানুষের গন্ধ পাঁউ' মন্ত্রে তারা ছুটে আসে মানবজাতিকে ভক্ষণের আশায়। অ্যাব্বড়ো দাঁত, নখ নিয়ে ভয়ার্ত চেহারার রাক্ষসরা বরাবরই থাকে গল্পের খলনায়ক চরিত্রে। 

পারস্য থেকে মূল ধারণা আসে পেত্নীর। পেত্নী হলো মেয়ে ভূত। যখন এশিয়ায় আগমন ঘটলো, তখন কিছুটা বদল এলো তার গল্পে। শ্যাওড়াগাছের এই বাসিন্দারা জীবদ্দশায় কিছু অতৃপ্ত বাসনা রেখে গেছে। সে সব বাসনাকে মৃত্যুর পর পূরণ করার ফন্দি-ফিকিরেই রাতভর ব্যস্ত থাকে তারা। অবিবাহিত নারীরাই সাধারণত পেত্নী হয় বলে শোনা যায়, তবে মতান্তরে গর্ভাবস্থায় মৃত্যু হওয়া নারীও পেত্নী হতে সক্ষম। পেত্নী রূপে তেমন ভালো না হলেও রূপ পাল্টানোর ক্ষমতা আছে এদের। কাজের সময় তাই রূপসী নারীর রূপ নিতে ভোলে না। পেত্নীদের চেনার একটি ভালো উপায় হলো তাদের উল্টো পা। 

 

শাঁকচুন্নি গায়ের রঙ শাকের মতো সবুজ। শব্দটা অবশ্য এসেছে সংস্কৃত 'শঙ্খচূর্ণী' থেকে। হিন্দু বিবাহিত নারীদের প্রতিনিধি ভূত শাঁকচুন্নি। তার হাতে শাঁখাপলা, কপালে লাল সিঁদুর। মৃত্যু পরবর্তী জীবনে ভীষণ একাকীত্বে ভোগে সে, জীবদ্দশায় সংসার করার শখ ভালোমতো মেটেনি তার। তাইতো তাকে প্রায়ই দেখা যায় বামুনবৌকে গাছের উপর বন্দী করে রাখে, নয়তো তারই শরীরে ভরে করে আসে– বামুনের সঙ্গে সংসার করবে বলে। গল্পের শেষে ওঝা এসে তাকে পরাজিত করে। 

 

মানুষের মতো ভূতসমাজেও বর্ণপ্রথা প্রচলিত। এই শ্রেণিবিভাগে ব্রহ্মদৈত্যের স্থান সবচাইতে উঁচুতে, কেননা সে জাতিতে ব্রাহ্মণ– অন্তত মৃত্যুর আগে তাই ছিল। ব্রাহ্মণ শ্রেণির প্রতি সামাজিক সমীহের কারণেই কি না কে জানে, এই ভূতকে তেমন ক্ষতিকর হিসেবে দেখানো হয় না, বরং বেশ পবিত্র মনে করা হয়। সাদা ধুতি আর পৈতে পরিহিত এই ভূতটিকে সময়ে অসময়ে মানুষের সাহায্য করতেও দেখা যায়। 

নাম থেকেই বোঝা যায়, মাছের সাথে এই ভূতের বেশ দহরম-মহরম সম্পর্ক। তাই এদের থাকেও গ্রামাঞ্চলের জলাশয়ের আশেপাশে, যেখানে মাছ পাওয়া যায়। তবে শহরেও এরা যে থাকে না তা নয়। বিশেষত রাতের বেলা মাছ কিনে ঘরে ফিরতে গেলে মেছোভূতের দর্শন পাবার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। মাছ খেতে এরা এতই ভালোবাসে যে লোকের ঘরে ঢুকে চুরি করতেও পিছপা হয় না। বাঙালি এমনিতেই মাছেভাতে মজে, তাই এই ভূতটি পুরাদস্তুর বাঙালি খাদ্যরসে প্রস্তুত। 

হ্যারি পটারের জগতে হেডলেস নিক বা স্লিপি হলোর কিংবদন্তী হোক আর বাংলা সাহিত্যের তেপান্তর হোক, মাথাবিহীন ভূতদের বেশ দাপট আছে সবখানেই। এদের মৃত্যু সাধারণত অপঘাতে হয়ে থাকে। তাই মৃত্যুর পর হারানো মাথাটা খুঁজতেই এদের সময় কেটে যায়। রাতের বেলা নিঃসঙ্গ পথচারীকে ধরে তাদেরও মাথা খোঁজার কাজে লাগায় এরা। 

 

এদের দেখা মিলতে পারে শ্মশানঘাট বা কবরস্থানের দিকে গেলে। শুভক্ষণে আগ্রহী এই ভূতেরা মানুষের মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণেও বেশ পারদর্শী। বিভিন্ন ধর্মে পিশাচ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত লক্ষ করা যায়। অন্য ভূতদের মতো এরা ঠিক মৃত নয়। আরব্য রজনী থেকে এদের আগমন বলেই হয়তো এদের জীবদ্দশা ধরে নেয়া হয় এক হাজার এক রাত্রি।

রাতের বেলা কেউ যদি নাম ধরে ডাকে, তাহলে বুঝে সাড়া দেয়াই ভালো। হতে পারে প্রিয়জনের গলার স্বর নকল করে নিশি ডাকছে। তবে নিশি নাকি দু'বারের বেশি ডাকে না। তাই তৃতীয়বার ডাক শুনলে সাড়া দেয়াই ভালো। বেশিরভাগ সময় রাতের বেলা ঘর থেকে বের করে নেয়ার ফন্দি বাধেঁ নিশি। কিন্তু নিশি আসলে কোথায় নিয়ে যায় তার শিকারকে, তা শুধুই ধোঁয়াশার জাল। হতে পারে কোনো শত্রুভাবাপন্ন শক্তিশালী তান্ত্রিক তাকে পাঠিয়েছে, হতে পারে সে নিজের ইচ্ছাতেই এসেছে। নিশিলোকে দিন দিন জনসংখ্যা বৃদ্ধি করাই নিশির কাজ। 

ZEENEWS TRENDING STORIES

By continuing to use the site, you agree to the use of cookies. You can find out more by Tapping this link