World Music Day 2021: তুমি কেমন করে গান করো হে গুণী!
আজ বিশ্ব সঙ্গীত দিবস। এ দিনটি সঙ্গীতকে নতুন করে উপলব্ধি করার লগ্ন। মানুষের মনে-মননে, স্বপ্নে-কল্পনায় সঙ্গীত যে বিশাল ভূমিকা পালন করে সেটাই অনুভবের দিন এটি। এদিনটিতেই স্মরণ করে নেওয়া যাক বিশ্বের কিছু বিরল সাঙ্গীতিক প্রতিভাকে।
মিয়া তানসেনের জন্ম ১৫০৬ সালে। ভারতীয় হিন্দুস্থানী সঙ্গীতের এক বিস্ময় তিনি। তিনি ভারতীয় হিন্দুস্থানী সঙ্গীতের জনকও। গোয়ালিয়রে জন্ম। বাবা মুকুন্দ মিশ্র ছিলেন একজন কবি। ছোটবেলায় তাঁর নাম ছিল তনু মিশ্র। বাবা অবশ্য ছেলের নাম রেখেছিলেন রামতনু। ছোটবেলা থেকেই তানসেনের সঙ্গীতশিক্ষা শুরু। তাঁর গুরু ছিলেন বৃন্দাবনের তৎকালীন বিখ্যাত সঙ্গীত শিক্ষক হরিদাস স্বামী। বর্তমানে আমরা যে হিন্দুস্তানি উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের সঙ্গে পরিচিত এর মূল স্রষ্টা তানসেনকেই ধরা হয়। তিনি আকবরের রাজদরবারের নবরত্নের মধ্যে অন্যতম ছিলেন।
উলফগ্যাং আমেদিউস মোত্সার্ট। বিশ্বসঙ্গীতের প্রাণপুরুষ, রাজপুরুষও বলা চলে। ১৭৫৬ সালে রোম সাম্রাজ্যে জন্ম। ভায়োলিন ও কিবোর্ড বাজাতে পারতেন খুব ছোট থেকেই। ৬০০-র উপর সাঙ্গীতিক রচনা তাঁর। পাশ্চাত্য ধ্রুপদী সঙ্গীতের আর এক পিতৃপ্রতিম ব্যক্তিত্ব বিথোভেনের সঙ্গীতজীবনও তাঁর ছায়াতেই শুরু। তাঁর সঙ্গীতের গভীরতা আজও স্পর্শ করে শ্রোতাকে। দ্য ম্যারেজ অফ ফিগারো বা ডন জিওভান্নির মতো অপেরা তাঁকে অমর করে রেখেছে। তাঁর দ্য রিকুয়েম বা ম্যাজিক ফ্লুট কনচের্তো মনকে নাড়া দেয়।
১৭৬৭ সালে জন্ম ত্যাগরাজের। কর্নাটকী বা দক্ষিণী সঙ্গীতের পিতৃপ্রতিম ধরা হয় তাঁকে। শ্যামা শাস্ত্রী এবং মুথুস্বামী দীক্ষিতার সঙ্গে ত্যাগরাজকে দক্ষিণী সঙ্গীতের ট্রিনিটি ধরা হয়। প্রায় হাজারের উপর সঙ্গীত রচনা করেছেন তিনি। অধিকাংশই তেলুগুতে। এবং এর সিংহ ভাগই রামের প্রশস্তি। ত্যাগরাজের অনেক গানই আজও গাওয়া হয়। তবে তার মধ্যে 'পঞ্চরত্নকৃতি' তাঁর উজ্জ্বল অবদান।
১৭৭০ সালে জন্ম। জার্মান কম্পোজার ও পিয়ানিস্ট। ফিফথ সিম্ফোনি, নাইনথ সিম্ফোনি তাঁর প্রতিভার নিদর্শন। কিন্তু তাংর সৃষ্টির অন্ত নেই। তাঁর সোনাটাগুলি আজও মানুষের মনকে সেই পুরনো পৃথিবীর ধূসরতায় ডুবিয়ে দেয়, মুগ্ধ করে, উজ্জীবিতও করে। বিঠোফেন একদা বলেছিলেন--Music is like a dream!
উস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর জন্ম ১৮৬২ সালে তৎকালীন ত্রিপুরার শিবপুর গ্রামে যা বর্তমানে বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অন্তর্গত। বাবা আলাউদ্দিন খান নামেও তিনি পরিচিত। রাগসঙ্গীতের গুরু হিসাবে সারা বিশ্বে তিনি প্রখ্যাত। তিনি নিজে বাজাতেন সরোদ। তবে সাক্সোফোন, বেহালা, ট্রাম্পেট-সহ আরো নানা বাদ্যযন্ত্রে তাঁর অপরিসীম অধিকার ছিল। তাঁর সন্তান ওস্তাদ আলি আকবর খান ও অন্নপূর্ণা দেবীও সঙ্গীতক্ষেত্রে উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে স্বীকৃত। আর তাঁর বিখ্যাত শিষ্যরা হলেন পণ্ডিত রবি শঙ্কর, পণ্ডিত নিখিল ব্যানার্জী, পান্নালাল ঘোষ প্রমুখ।
তাঁকে বলা হয় Father of Indian symphony orchestra। আদতে উত্তর কলকাতার ছেলে। পাথুরিয়াঘাটায় বাড়ি। ঠাকুরবাড়িতেও যাতায়াত ছিল। ছোট্ট থেকে সঙ্গীতে আকর্ষণ। সেতার ও হারমোনিয়াম শিখেছিলেন যত্ন করে। পরে উদয়শঙ্করের ট্রুপে যোগ দেন। এবং নতুন নতুন সাঙ্গীতিকক অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ হতে হতে ভারতে নিজেই জন্ম দেন সঙ্গীতের এক নতুন ধারার--অর্কেস্ট্রা।
এই দুই ভারতীয় পুরুষ আধুনিক সময়ে ভারতীয় সঙ্গীতের অন্যতম উদগাতা। আলি আকবরকে বলা হয় স্বরসম্রাট, সুরসিদ্ধ তিনি। সঙ্গীতের বনেদি কাঠামোর মধ্যেই তিনি বৈপ্লবিক কাজ করেছেন। পাশ্চাত্যের সঙ্গে পূর্বকে সুরে সুরে বেঁধেছেন। তবে এই কাজটি সব চেয়ে ভাল করে করেছন রবিশঙ্কর। পাশ্চাত্যে রবিশঙ্কর ভারতীয় সঙ্গীতের মুখ হয়ে গিয়েছেন।
সঙ্গীত সব কিছুতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে, কল্পনার উড়ানে সহায়তা করে, মনে পাখা গজিয়ে দেয়। বলেছিলেন প্লেটো। আর ফ্রেডরিখ নিটশে, যিনি চরম নিরীশ্বরবাদী ছিলেন তিনি পর্যন্ত সঙ্গীতের মাধুর্যে মগ্ন ছিলেন। বলেছিলেন-- Without music, life would be a mistake!