সোমশুভ্র মুখোপাধ্যায়


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

‘আশ্বিনের মাঝামাঝি উঠিল বাজনা বাজি/ পুজোর সময় এল কাছে/ মধু-বিধু দুই ভাই, ছুটোছুটি করে তাই/ আনন্দে দুহাত তুলে নাচি’। ক্লাস সিক্স বা সেভেনে প্রথম পড়েছিলাম। নেহাত আরও পাঁচটা পড়ার মতো করেই. মুখস্থ করে উত্তর লেখার জন্য। এরপর পড়া যখন মুখস্ত থেকে পাঠ হয়ে উঠল, তখন বুঝেছি 'পূজার সাজ' কাকে বলে! বুঝেছি যখন মধু-বিধুর মা বলে ওঠেন, 'আয় বিধু আয় বুকে চুমো খাই চাঁদ মুখে/ তোর সাজ সবচেয়ে ভালো/ দরিদ্র ছেলের দেহে, দরিদ্র বাপের স্নেহে ছিটের জামাটি করে আলো।' তখন বুঝতে পারি যখন রবীন্দ্রনাথ বলেন, 'বিশ্বসাথে যোগে যেথায় বিহারো/ সেইখানে যোগ তোমার সাথে আমারও।' আপন হতে বাহির হওয়ার কথা তো তিনিই বারবার বলেছেন, সকলকে মেলাতে পারার জন্য কী আকুতিটাই না জীবনভর করে গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তিনি আমাদের বারবার বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, মিলনের এই আনন্দটার নামই পুজো। আমাদের মনে করিয়ে দিতে চেয়েছেন, 'বসিয়া আছ কেন আপন মনে / স্বার্থ মগন কী কারণে/ চারিদিকে দেখ চাহি হৃদয় প্রসারি/ ক্ষুদ্র দু:খ সব তুচ্ছ মানি/ প্রেম ভরিয়া লহো শূন্য জীবনে!' তখন নিমেষে চোখ চলে যায় পথের পাঁচালির অপুর দিকে। বিভূতিভূষণ তো বলতে পেরেছিলেন, অন্যের দু:খে চোখের জল পড়ার যে আনন্দ অপু টের পায়, তেমন করে আর কেউ নয়। তাহলে বোঝা যায়, একটা আনন্দবোধ থেকেই নি:স্বার্থ হয়ে অন্যের সঙ্গে মেলা যায়, এই আনন্দের কথা তো রবীন্দ্রনাথও বলেছেন বারবার, 'তাই তোমার আনন্দ আমার পর/ তুমি তাই এসেছো নীচে/ আমায় নইলে ত্রিভূবনেশ্বর/ তোমার প্রেম হত যে মিছে।' তাহলে ঈশ্বর আমাদের সঙ্গে মিলছেন। আমরা নিজেরা মিলতে পারব না কেন? আর মিলতে না পারলে সব প্রেমই যে মিছে! আমাদের দুর্গাপুজো সেই প্রেম, আনন্দ আর মিলনের উতসব।


এই উৎসব আয়োজনের নয়, প্রয়োজনের। মানুষের সঙ্গে মানুষের মিলনের প্রয়োজনে। যখনই এই প্রয়োজনের চেয়ে নৈবেদ্যের আয়োজন বেশি হয়ে যায়, তখনই সতর্ক করে দেন রবীন্দ্রনাথ। 'তোমার পূজার ছলে তোমায় ভুলে থাকি/ বুঝতে নারি কখন তুমি দাও যে ফাঁকি/... ফুলের মালা দীপের আলো ধূপের ধোঁওয়ার/ পিছন হতে পাই নে সুযোগ চরণ ছোঁওয়ার।' চরণ ছোঁয়ার সুযোগ এসেছে আবার। এ আমির আবরণ স্খলিত হয়ে যাক। অল্পে অল্পে খসে পড়ুক নির্জীবতা, দীনতা। আপন হতে বাহির হয়ে এখন সবার মাঝে দাঁড়াবার সময়। আমাদের দুর্গাপুজো তবেই সর্বজনীন উত্‍সব।