হরি নাম সংকীর্তনের নতুন নক্ষত্র। জনপথে এককালে শ্রীচৈতন্য যা করতেন তিনিও এখন তাই করেন। তবে নিজস্ব ঢঙে। তাঁর গানের রকবাজিতে টিনেজ গিটার ধরার মত অঙ্গ ভঙ্গির সঙ্গেই হাত তুলে হরি বল, হরি বল করে। ৫০০ বছরেরও প্রাচীন ট্র্যাডিশনকে একেবারে ভেঙে চুরে নতুন রূপ দিয়ে দিলেন অদিতি। আর এখানেই তাঁর মুন্সীয়ানা। 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

প্রেমে উন্মাদ শ্রীচৈতন্যদেব শ্রীকৃষ্ণ বিরহে ছাই করেছিলেন সোনার তনু! ভক্তের টানে শ্রীকৃষ্ণ ভক্তের কাছেই ধরাধামে ধরা দিয়েছিলেন। মদনমোহন মোহিত হয়েছিলেন ভক্তের প্রেমে। 'কৃষ্ণকে ভগবান নয়, সখা ভাবো', এটাই তো বলেছিলেন শ্রীচৈতন্যদেব। মানুষ তখনও বোঝেনি, আজও বোঝেনা। তবে মানুষের মনে কৃষ্ণ প্রেম বিরাজ করেছে যুগে যুগে বিবর্তনের ধারা বেয়েই। কৃষ্ণ প্রেমের আধার হয়েছেন কখনও রাধা, কখন চৈতন্য, কখনও মীরা। ইতিহাসে এনারা ছিলেন বলেই লিখিত, আর এখন একজন আছেন, নাম তাঁর অদিতি মুন্সী, যিনি বর্তমান। কৃষ্ণ প্রেম অদিতির কাছে সুরের বন্দনা। একেবারে ঘরোয়া ফ্লেভার, মাটির সৌরভ আকাশে বাতাসে ছড়িয়ে দিয়েছেন অদিতি। মঞ্চে যখন অদিতি 'লাজে মরে'ন, তখন তাঁর প্রেমেই উন্মাদ হয় আট থেকে আশি। 'সা রে গা মা পা'র মঞ্চে গুরু কালিকাপ্রসাদের ছাত্রী অদিতি এখন রীতিমত সেলেব। অদিতি অবশ্য তথাকথিত সেলেব তকমাকে কিছুতেই নিজের সঙ্গে বাঁধতে চাননা। সোজা সাপটা উত্তর, 'আমি সাধারণ'। আর এই 'সাধারণ কীর্তনীয়া'কে ধরতে চেয়েই প্রহর গুনতে হল। অবশেষে 'কুঞ্জবনে' অদিতি আর সৌরভ মুখোমুখি।



সৌরভ- অদিতি তো এখন স্টার, প্রশ্ন শেষ হতে না হতেই কথা থামিয়ে দিয়েই বিরক্তিকর অভিব্যক্তিতে কীর্তনীয়া অদিতি কহিলেন, "এটাই তো আমার পছন্দ নয়। স্টারের কী আছে! আমি যদি স্টার হতাম তাহলে আমি পায়ে হেটে ঘুরে বেড়াতাম না। যদি আমি স্টার হতাম তাহলে সাধারণ মানুষের থেকে আলাদা একটা ব্যারিকেটের মধ্যে নিজেকে আবদ্ধ রাখতাম। কিছুই তো আমি করি না, তাহলে স্টার কীসের?
 

 


সৌরভ- তাহলে স্টার নয়, বলছ? অদিতি- হুম! 


 


সৌরভ- বেশ, তোমার কথাই রাখছি। স্টার নয়। তবে পরিবর্তন তো  একটা  এসেছেই! একটা অতীব সাধারণ সঙ্গীত শিল্পী  আর 'সা রে গা মা পা' ফেরত অদিতি, কী পরিবর্তন লক্ষ্য করছ? অদিতি- পরিবর্তন যদি বলই, তাহলে বলব আমাকে যদি আগে ১০টা মানুষ ভালোবেসে থাকত, এখন ১০ হাজার মানুষ আমাকে ভালোবাসেন। এই মঞ্চ আমাকে অনেকটা পরিচিতি দিয়েছে। 


 


সৌরভ- রাজ্যপালের হাত থেকে পুরস্কার না কি 'সা রে গা মা পা'র মঞ্চে অদিতির কমার্সিয়ালাইজেশন হওয়া, সেরার শিরোপা, কোনটাকে এগিয়ে রাখবে? অদিতি- অবশ্যই এগিয়ে রাখব সম্মানের জায়গাটা। জাতীয় স্বীকৃতি আমার কাছে এগিয়ে থাকবে। রাজ্যপালের কাছ থেকে সম্মান পাওয়া মানে নিজের ক্যাপেবিলিটিকে বুঝতে পারা। হ্যাঁ, আমি চেষ্টা করব, এর থেকেও বেটার কিছু করব। এই স্বীকৃতি যদি না আসত তাহলে হয়ত এতটা আত্মবিশ্বাস পেতাম না। 


 


সৌরভ- কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল তোমার সুরের সফর? অদিতি- পুরোটাই চ্যালেঞ্জিং। (যে গল্প অনেকেরই অজানা, সেই গল্পই বলতে শুরু করল অদিতি) কারণ, যখন অডিশন হয়, তখন তো অডিশনে গিয়ে আমি, যেমনটা হয় আর কি, পুরনো দিনের একটা আধুনিক গান গাইলাম। মেলোডিয়াস সং আমার বেশি ভালো লাগত। পুরনো দিনেরই একটা গান গেয়েছিলাম। তারপর আমাকে জিজ্ঞেস করা হল, কী নিয়ে পড়াশুনা করেছ? আমি বললাম যে আমি এটা নিয়ে পড়েছি। তো তখন ওনাদের বিষয়টা ইন্টারেস্টিং লেগেছিল। তারপর বলল একটু শুনে দেখি। গাইলাম। গান শোনার পর আমাকে বল থ্যাঙ্ক ইউ। (হাসতে হাসতে) আমি ভাবলাম, যা গেল, আর কোনও চান্স নেই। তারপর সেকেন্ড রাউণ্ড। আবারও গেলাম। আমার কাছে তাঁরা কীর্তনই শুনতে চাইলেন। তো আবারও গাইলাম। আবার থ্যাঙ্ক ইউ। (আরও হাসি) আর তো কোনও চান্সই নেই। যখন আমাকে ফাইনাল করল, খুবই খুশি হয়েছিলাম, আনএক্সপেক্টেড ছিল গোটা বিষয়টা। 


 


সৌরভ- একটা 'মিথ' খুব চলে, এইধরনের রিয়্যালিটি শো গুলো না কি 'টাকার খেলা', ম্যানুপুলেশন থাকে। তুমি এমন কিছুর সম্মুখীন হয়েছ? অদিতি- না। আমি তেমন কিছু কখনই ফেস করিনি। সত্যই কথা বলতে এত সময়ও পায়নি। ম্যানুপুলেশন হচ্ছে কি হচ্ছে না, এইটা ভাবার মত সময়ও ছিল না।  


 


সৌরভ- অদিতির নতুন বন্ধুর খোঁজ পেলাম ফেসবুকের পাতায়। তা, নতুন বন্ধুর সঙ্গে কীভাবে সময় কাটাবে? অদিতি- (অট্টহাসি। হাসিকে কোনও রকম বাঁধ দিয়ে...) আরে না, দেখো আমি কিছুই জানি না। ক্যামেরা গলায় ঝুলিয়ে বেড়িয়ে গেলাম, ওই স্টাইল-ফাণ্ডাতে আমি নেই। (অদিতি মুন্সীর নতুন বন্ধু ওর DSLR-ক্যামেরা ) আগে শিখে নিই ভাইয়ের কাছে, ট্রেনিং চলছে। তবে ছবি তোলার প্রতি একটা ভালো লাগা আছে। 


 


সৌরভ- অদিতির গানের দোসর ছবি। গানের সঙ্গেই অদিতি ফ্যানরা কী একটা ফটো এক্সিবিশনও পাচ্ছে? অদিতি- একটা মিষ্টি হাসির পর উত্তর... অনেক দূর ভেবে ফেলেছো। জানো তো, যার যেটা কাজ, তাঁকে সেটাই শোভা পায়। যারা ফটোগ্রাফিটা নিয়ে ভাবছে, পড়াশুনা করছে এক্সিবিশনটা তাঁদের জন্যই শোভা পায়। আমরা শখের। শৌখিন। ঘুরতে টুরতে যাই যখন, তখন মনে হয়, একটু ছবি তুলি। ফোন থাকলেও, যদি একটা ভালো ক্যামেরা থাকত, তো সেইটাই একটু শেখার চেষ্টা আর কি। এক্সিবিশন মানে, ও তো স্বপ্ন! ছেড়ে দাও। কিছু মানুষ থাকেন যারা নিজ নিজ জায়গায় নিজের সেরাটা দেন। কথা শেষ হতে না হতেই পাল্টা প্রশ্ন, তাঁর মানে বলছ, কীর্তনে অদিতিই সেরা? অদিতি- আমি কোথায় এটা বললাম। মানে ঘুড়িয়ে নাক ধরার মত। (হাসি)   


 


সৌরভ- অদিতির নাম ফেসবুকে ১৩টা অ্যাকাউন্ট। কোনটা আসল? কোনটায় অদিতিই আছে? অদিতি- প্রচুর, প্রচুর। আমি কমপ্লেন করেছি, তাতেও কিছু হচ্ছে না। আমি কী করব? সৌরভ- ফেসবুকে ৫০০০ বন্ধু হওয়ার কোটা শেষ, নতুন বন্ধুদের কি নো এন্ট্রি? অদিতি- দেখো, ভালো লাগে। মানুষ যখন আমাকে এত ভালোবাসে। তবে কী জানত কিছু মানুষের জন্য অনেক মানুষ মিস গাইডেড হচ্ছে। এইটা আমার কাছে আপত্তিজনক। মানুষের ভালো লাগতেই পারে। সে আমার নাম করে একটা প্রোফাইল খুলতেই পারে, সেটা তাঁর ইচ্ছা। কিন্তু সেখানে সে যেন মেনশন করে যে এটা ফ্যান পেজ, ডিরেক্ট একদম পুরো আমার ভয়েসে কথা বলছে, আমি হয়ে কথা বলছে, এতে তো অনেকেই মিসগাইডেড। আমি এই বিষয়ে খুবই ডিসাপয়েন্টেড। আমার স্যার, ম্যাডামদের সঙ্গে আমি হয়ে কথা বলছে!    
    

 


সৌরভ- তাহলে বুঝতে পারছো তো, না চাইলেও স্টার হয়ে উঠছো। স্টারডমের সিরিতে হাঁটতে কেমন লাগছে? অদিতি- সেই লাস্যময়ী হাসি আর উত্তর, এনজয় করছি। আমি কিন্তু সাধারণ।


 


সৌরভ- তুমি যে সাধারণের কথা বলছ, একজন শিল্পী, সৃষ্টিশীল মানুষ কী এততটাই সাধারণ হন? অদিতি- আমার মনে হয় যে মানুষ শিল্পী, সৃষ্টিশীল সে শিল্প মাসিকতা নিয়েই জন্মান। সেই জন্যই তাঁরা ওমন শিল্পী হতে পারেন, শিল্প সৃষ্টি করতে পারেন। 


 


সৌরভ- সম্প্রতি, অ্যান্টি ড্রাগ প্রচারে তুমি নিজেকে যুক্ত করেছো? প্রচার অভিযানে তুমিই প্রধান মুখ। এমন একটা সমস্যা নিয়ে কাজ করছ। মানুষ তোমার কথা শুনবে? তোমার কথাগুলো কতটা পরিধি পাবে? কী মনে হয় তোমার? অদিতি- আমি আশাবাদী নই একেবারেই। কিন্তু তাও, বলে না, 'বৃথা আশা মরিতে মরিতে মরে না', আমার চেষ্টাটাও ঠিক ওরকম। যদি দু একটা মানুষ একটু হলেও বুঝতে পারেন, যে হ্যাঁ এর থেকে সরে আসা দরকার, এই প্রচেষ্টা থেকেই এটা করা। আমার বাবাকে আমি কোনও দিন দেখিনি কোনওরকম নেশা করতে। 


 


সৌরভ- তবে তোমার কিন্তু একটা নেশা আছে! অদিতি- হ্যাঁ। প্রচণ্ড গানের নেশা। 


 


সৌরভ- 'সঙ্গীতম' নিয়ে কী ভাবছো? অদিতি- সঙ্গীতম, আমার ড্রিম প্রোজেক্ট। আমি ওকে নিয়েই স্বপ্ন দেখি। জানি না কতটা কী করে উঠতে পারব, তবে সঙ্গীতমকে নিয়ে আমি অনেক স্বপ্ন দেখি। সঙ্গীতমের স্বপ্নপূরণের জন্য আমি আমার সবটুকু উজাড় করে দেব। 


 


সৌরভ- অদিতি তো নিজেকে ইতিমধ্যেই উজাড় করে দিয়েছে। এপারেই শুধু নয়, অদিতি তো এখন ওপারেরও। অদিতি- (কথার মাঝেই বেশ উৎফুল্লতা নিয়েই) হ্যাঁ। চট্টগ্রামের জাতীয় গীতা শিক্ষা কমিটি আমাকে ব্র্যান্ড আম্ব্যাসেডর করেছে। এটা আমার কাছে বড় রকম পাওয়া। আমি প্রথম যখন ওখানে যাই আমি জানিই না যে ওরা আমাকে এইভাবে সংবর্ধনা দেবে। একটা অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ে গেল আমার। আমি যখন চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে নামলাম, দেখলাম অনেক মানুষ একটা বিশাল ফুলের তোড়া নিয়ে দাঁড়িয়ে। আমি ভাবলাম, বাবাহ্‌ কোনও ভিআইপি টিআইপি এসছে হয়ত।  ভিআইপি হলে কত স্পেশ্যাল ট্রিটমেন্ট। তো স্বাভাবিক ভাবেই ভাবলাম গোটা প্লেন খালি হয়ে যাক তারপর নামব। গোটা প্লেন খালি, তবুও লোকগুলো যাচ্ছে না। আমি ভাবলাম এখনও তাঁরা দাঁড়িয়ে মানে পাইলটকে হয়ত উইশ করবে। বা, কিছু একটা ব্যাপার আছে। তারপর যখন নামলাম, দেখছি ফুলের বুকেটা আমার জন্যই। তখন মনে হচ্ছিল যারা প্র্যাক্টিক্যালি সেলিব্রিটি হয়, যাঁদের আমারা সোনালি পর্দা রূপোলি পর্দায় দেখতে পাই তাঁদের লাইফে হয়ত পার্সোনালি কোনও প্রবলেম হতে পারে, কিন্তু ফ্যানদের কাছ থেকে এমন সংবর্ধনা আমি ফাস্ট তাইম এক্সপিরিয়েন্স করলাম।  


 


সৌরভ- বাংলাদেশের মানুষ তোমাকে দেখতে চাইছে, তোমার গান শুনতে চাইছে, তোমাকে ঘিরেই একটা সঙ্গীত বলয় তৈরি হচ্ছে, তোমার অনুভূতি কীরকম? অদিতি- আমার বয়সী, কিংবা আমার থেকেও ছোট বয়সীরা যখন আমার কীর্তন শুনে হাত তুলে হরি বল হরি বল বলছে, এটা না তোমাকে আমি বলে বোঝাতে পারব না। আমার কাছে এমন কোনও শব্দ নেই যা দিয়ে আমি তোমাকে আমার অনুভূতি ব্যক্ত করতে পারব।  


 


সৌরভ- এবারের পুজোটা তো একটু স্পেশ্যাল। আগের মত একেবারেই নয়। তোমাকে দেখলেই সেলফি তোলার হিড়িক। কী প্ল্যান? অদিতি- ফ্যামিলির সঙ্গে গোটা সময়টা কাটাবো। ভাই বোনরা সবাই আসছে। খাওয়া দাওয়া ঠাকুর দেখা। আর হ্যাঁ, পুজোতে শো আছে, সেইগুলো করব। যারা আমাকে ভালোবাসছে তাঁদের সঙ্গে একটু সময় কাটানো। এটাই প্ল্যান। 


 


সৌরভ- পুজোতে অদিতির সাজে আরও অদিতিরা থাকলে, কেমন লাগবে? অদিতি- এ। এমন হয় নাকি? পুজোতে কপালে তিলক কেটে কেউ ঠাকুর দেখতে বেড়িয়েছে, এটা হবে? ধুস! (হাসি চেপে রাখতে না পেরে...) যদি এটা হয় তাহলে কিন্তু দারুণ লাগবে দেখতে। আমার খুব আনন্দ হবে। তুমি দেখো বাইরে থেকে যারা এখানে আসেন তাঁরা কিন্তু এখানে এসে শাড়ি পড়তেই পছন্দ করেন। আমাদের সংস্কৃতির ওপর ওদের একটা প্রেম কিন্তু আমার চোখে ধরা পড়েছে। তাঁরা আমাদেরকে নিয়ে চর্চা করছে আর আমরা তাঁদের নিয়ে টানা হেঁচড়া করে যাচ্ছি। 


 


সৌরভ- আচ্ছা অদিতি, তোমার কাছে যদি এমন একটা সুযোগ আসে, যে তুমি প্লে ব্যাক করবে আর তোমার কণ্ঠের সঙ্গেই আরও এক কণ্ঠ জোড়া মেলাবে, সেটা শ্রেয়া ঘোষাল আর পার্বতী দাস বাউল, এই দুইয়ের মধ্যে কোনও একজন, কার সঙ্গে গান গাইতে চাইবে? অদিতি- প্লে ব্যাকের সুযোগ? (একটু ভেবে) প্লে ব্যাকের সুযোগ আসলে আমি শ্রেয়া ঘোষালের সঙ্গে যাব। পার্বতী দাস বাউলের সঙ্গে আমি কোনও দিন প্লে ব্যাক করতে চাই না। কারণ, উনি আমার একজন আইডল মানুষ। আমি ওনার গান বসে শুনতে চাই। আমি ওনার গানটা দেখতে চাই। ওনার পাশে দাঁড়িয়ে গান গাওয়ার মত সাহস আমার নেই। 


 


সৌরভ- প্লে ব্যাকের কথা যখন এলোই, বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে যেভাবে ফোক সং জায়গা করে নিয়েছে কীর্তনও কি তেমন স্থান পাবে? কী মনে হয় তোমার? অদিতি- এটা হওয়াটা অবধারিত। আজ না হোক কাল হবেই। আমি কেনও আরও যারা স্বনামধন্য শিল্পীরা রয়েছেন তাঁদের কি জিজ্ঞেস করলেও এই একই কথাই তাঁরা বলবেন। আমাদের জন্ম তো এখানেই। মাটি এক একটা কথা বলে। গানের প্রেসেন্টেশনটাই এখন আসল কথা। আমাদের ভিতরেই তো ফোক রয়েছে। (প্রশ্নের সঙ্গে আরও এক লেজ জুড়ে...) পুজোর অ্যালবাম? অদিতি সেই সুরেই কন্টিনিউ করল। না, কোনও তাড়াহুড়ো করতে চাই না। এবার পুজোতে আমার কোনও সিডি রিলিজ করছে না। অনেকেই এটাকে নেগেটিভ ভাবে দেখবে তবে আমি একটু সময় নিয়েই এগোতে চাই। সময় লাগুক, তবে যেটা হোক সেটা যেন ভালো হোক, মানুষ যেন ভালোবাসে। 


 


সৌরভ- অদিতির লাইফস্টাইল নিয়ে একটা প্রশ্ন। অদিতি-হুম। সৌরভ- পছন্দের খাবার কি? গ্রিল্ড স্যান্ডবিচ নিশ্চয়ই নয়? অদিতি- না... (দীর্ঘ না)। আমার পছন্দের খাবার প্রচুর। আমি ফুডি তবে পেটুক নই। এক্সপেরিমেন্টাল খাবার একেবারেই পছন্দ নয়। চাইনিজ খাবারের কীসব অদ্ভুদ নাম। যেমন নাম তেমন দেখতে। ঘরের খাবার আমার বেশি ভালো লাগে। 


 


সৌরভ- আড্ডা যখন জমেছেই তাহলে আরও একটু অদিতির অন্দরমহলে উঁকি দেওয়ার ইচ্ছে। অদিতি তো এখন রাই কিশোরীও। অদিতি- (এতক্ষণের চলা কথোপকথনের মধ্যে প্রথমবার অদিতি কিন্তু লাজুক) থেমে থেমে উত্তর, এমন কখনও ভাবিনি। আমার কেমন একটা লাগছে বিষয়টা। (একটু হেসে) বিশ্বাস করো, আমি কিন্তু অদিতি হয়েই পুরো বিষয়টা এনজয় করেছি। সৌরভ- মঞ্চে তুমি অদিতি কিন্তু তোমার গান কিন্তু শ্রোতার কাছে রাই কিশোরীর প্রেমরাগ! অদিতি- মঞ্চে যদি বল, মঞ্চে আমি যখন থাকি, মাইক্রোফোন যখন আমার হাতে, সামনে অডিয়েন্স তখন কোথা থেকে কী হয় আমি একেবারেই জানি না। আমি কী বলি, কী গাই, সেটা হয়ত আমার হাতে থাকে না। আমি প্ল্যানিং করে যাই ঠিকই, কিন্তু গুরুবন্দনা করে আমি যখন মঞ্চে উঠি তারপর থেকে কীভাবে আমি এগোই আমি জানি না। আমার গান গেয়ে আমি খুব আনন্দ পাই। 'এসো মা লক্ষ্মী', 'বৃন্দাবন বিলাসিনী', 'ছি ছি লাজে মরে যাই' এই গানের রিকোয়েস্টগুলো যখন আসে তখন মনে হয় আমি আমার গান গাইছি। পদকর্তা যেই হন, তবে আমি গেয়েছি এই গানটা। এটা ভীষণরকম ভালোলাগা। তবে আমি অবশ্যই বলব অভিজিৎ দা, কালিকাদা, দোহার এবং অবশ্যই জি-এই জায়গাটা তৈরি করেছে, আমার একার কিছু নয়।  


 


সৌরভ- শেষ প্রশ্ন। ডিপ্লোম্যাটিক হলে চলবে না। অদিতি- আমি একটাও ডিপ্লোম্যাটিক উত্তর দেইনি। সৌরভ- রাই কিশোরীর কৃষ্ণ কে? অদিতি- যা, বাবা। আমি তো বললাম। আমার খুব সিলেক্টিভ বন্ধু বান্ধব। হাসতে হাসতেই উত্তর, কৃষ্ণের দর্শনই এখনও পেলাম না সৌরভ- রাই কিশোরী কি গাইছে, 'মিলন হবে কত দিনে?' অদিতি- 'আমি কোথায় পাব তাঁরে, আমার মনের মানুষ যে রে?'