পিউ রায়


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

প্রথমবার মার্কিন মুলুকে পা রাখার উত্তেজনা প্রথম দর্শনে যেন কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছিলাম না। বিরাট দেশ, বিশাল কর্মকাণ্ড, তার মাঝে নিজেকে জায়গামত বসিয়ে নিতে সময় লাগছিল কিছুটা। আটলান্টার পরিধিতে সাদা, কালো দুই রঙের চামড়াই মিলে মিশে থাকে। ভারতীয়রাও ওখানে ব্ল্যাক, তবে ব্ল্যাক আমেরিকানদের থেকে আলাদা। ওদের নিজস্ব দুনিয়া রয়েছে ভিনদেশে। আটলান্টা থেকে ঘন্টা দুয়েক পেরিয়ে যখন অ্যালাবামায় পৌঁছলাম, মনে হল চেনা মুখের ভিড়।


সবাইকেই জীবনে প্রথমবার দেখলেও মনে হল দীর্ঘ পরিচিত। সকলেই বাংলায় কথা বলছে যে। মার্কিনি আদব কায়দা যে তার সঙ্গে মিশে নেই এমন নয়, তবু আপ্যায়নে ওরা বাঙালি। ষোল আনা। সময়টা ছিল জুলাই মাস। আমেরিকায় তখন বেশ গরম। তবু শরতের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। বাঙালির উত্সব শুরু হবে যে। বাঙালিদের মিলনের উত্সব। বঙ্গমেলা। যোগ্য সঙ্গত করেছিল আকাশে ঘুরে বেড়ানো সাদা থোকা থোকা মেঘ। দুর্গাপুজো নয় ঠিকই, কিন্তু উদ্দেশ্য তো একই।  তল্লাটের সব বাঙালি এক হয়ে হইচই, গানবাজনা, কবিতা, নাটক, আবৃত্তি, খাওয়া দাওয়া, কেনাকাটা, দরদাম সব, সব বাংলায়। বাংলা ভাষাতেই নৈবেদ্য, বোধনও বাংলায়।



এ যেন দুর্গা পুজোরই মহড়া ছিল। শুধু দেবী মূর্তির অনুপস্থিতি। ৩ দিনের মেলায় বাঙালিয়ানার উদযাপন চলল। শেষবার দেশ থেকে আনা শাড়ি, পাঞ্জাবির EXIBITION। একে অন্যকে টেক্কা দেওয়ার প্রতিযোগিতাও ছিল বেশ উপভোগ্য। এই আবহেই ভীষণভাবে যা মন ছুঁয়েছিল, তা হল ওদের নিঃসঙ্গতা। সারা বছর ছুটছে সবাই। WEEKEND  এ সামান্য দেখা সাক্ষাত্. মার্কিনি বন্ধু? হাতে গোনা এক দুটো। তখনই মনের খালি জায়গা দখল করতে চলে আসে ফেলে যাওয়া দেশের মা-বাবা, পরিজনরা। পাড়ার রক, বন্ধু বান্ধব। সবার উপস্থিতি আছে শুধুই মনের গহন গভীরে। সে মনটা সবার সামনে খুলেও দেওয়া যায় না, বোধহয় পরাজয়ের ব্যাখ্যা এড়াতেই। সেই মনটাই আধার পায় বঙ্গমেলার মত উত্সবে। অন্তত একটা ঠাঁই, যেখানে দেশের গন্ধ মাখা যায়. তাই উত্সবের শুরু থেকে শেষ সাপটে খাওয়ার তাড়াহুড়ো থাকে সবার মধ্যে। উত্সব ফুরোলেই তো স্রোতে ভেসে যাওয়া। অ্যাক্সেন্টে ইংরাজি, টার্গেট, ডলার। ৩ দিনের বঙ্গমেলায় মেলে ধরা মনটাকে আবার একান্ত গোপন কুঠুরিতে আটকে ফেলা। আর একটা উত্সবের অপেক্ষায়। NRI খোলস সরিয়ে সেই আবেগমাখা প্রবাসী বাঙালিয়ানা ধরা থাকল ২৪ ঘন্টার ফ্রেমে।