পুজা বসু দত্ত


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

শিবঠাকুর এখন দিন গুনছেন। আর কিছুদিনেই দুগ্গা দুগ্গা বলে ছেলেমেয়ে নিয়ে স্ত্রীর রওনা। কটা দিন অন্তত ফুর্তিতে কাটানো যাবে তাহলে। নেশার মাত্রাটাও একটু বাড়ানো যাবে। না হলে গৃহিনীর শাসনে, একেবারে লক্ষ্মী ছেলেটি হয়ে থাকতে হয়। আর এই গৃহকর্ত্রী তো যে সে নন। দশ হাতে দশ দিক সামলান, আর ত্রিনয়নে সবদিক। তাই শিব বাবাজির এদিক ওদিক করার জো নেই। সবটাই স্ত্রীর নখদর্পণে। কদিনের ছুটির জন্য এখন আর দিন সইছে না শিব বাবার। এমনিতে মানুষটা বড্ড সাদাসিধে, শুধু একটু ওই টানের নেশা। এখন তো আবার নেশার দারুণ রকমফের। ইচ্ছে আছে, বৌয়ের আড়ালে, গাঁজা ছেঁড়ে, এবার অন্যগুলোর স্বাদ নেবেন। নন্দী ভৃঙ্গীই সব ব্যবস্থা করছে। ওদের সেটিং স্কিলটা বেশ।


দুগ্গা মায়ের মোটামুটি প্রস্তুতি শেষ। ছেলেমেয়েরা কাজ কম্মোও গুটিয়ে এনেছেন। লিভ অ্যাপলিকেশনও স্যাংশন। তবে সমস্যা হচ্ছে সরস্বতীর। লেখালিখি করেন তো। এইসব চাকরিতে আবার ছুটিটা একটু কম। স্পেশাল দিনগুলোতে তো ছুটি মেলাই ভার। কিন্তু আইন থাকলে, যে আইনের ফাঁকও আছে। ফাঁক গলিয়েই মেয়ে ম্যানেজ করবে।


দুগ্গা মায়ের যাত্রা এবার  ঘোড়ায় । সত্যি, বছরের পর বছর মা আসছেন। কত করমের সাজ-স্টাইল রপ্ত করেছেন, সাবেকি থেকে মর্ডান হয়েছেন। কিন্তু নেটোপযোক্ত হননি। আসলে সেরকম জোড়দার কানেক্টিভিটি ছিল না। তাই সরগর হয়নি বিষয়টা। ফোর- জিতেই সিকে ছিড়বে। এবার জিওর হাত ধরে, মাও নেট দুনিয়ায় পা দেবেন, আশা করছি। তাহলে আর হাতি, ঘোড়া, নৌকো ছেড়ে তিনিও ওলা বা উবের কল করবেন। আর এতে ঝঞ্ঝাট কমবে অনেকটা। কারণ, হাতি, ঘোড়া ইত্যাদির যাত্রায় যা সব ইঙ্গিত নিয়ে মা আসেন, তার থেকেও মুক্তি মিলবে। তবে হ্যাঁ, লাক্সারি ক্যাবে যাত্রার যে কোনও মানে থাকবে না, তা নয়। এর মানেই শুধুই উন্নতি। সফ্টওয়ারের উন্নতি। যার জোড়ে, কর লো দুনিয়া মুঠ্ঠি মে। ভেরি মাচ সরি। দুনিয়া আয়ত্তে অনেকদিন আগেই এসেছে। এবার জগত্সংসারের পালা, বিশ্বব্রহ্মান্ডের পালা। দুগ্গা মায়ের হাত ধরেই শুরু হবে এই অভিযান।


মায়ের হাতের অস্ত্রগুলো এখন বড্ড ব্যাকডেটেড। হাতে একটা স্মার্টফোন ছাড়া এখন তিনি খুবই বেমানান। একটা লেটেস্ট আইফোন যাতে সব আপডেটেড অ্যাপ থাকবে। সেটাই তো চাই মায়ের হাতে। যার জোড়ে বাদ দেওয়া যাবে সব অস্ত্র। ব্যাস, তাতেই মা একেবারে ঝাড়া হাত পা। কিন্তু তা বলে ভাববেন না নিরস্ত্র মানে দুর্বল। তিনিই সব মেয়ের সহায়। তিনি দুর্গতিনাশিনী। তিনি শক্তির উত্স। শুধু অস্ত্র হাইটেক নয়, চাই হাইপাওয়ার বাহন। সিংহের এখন সংরক্ষণ প্রয়োজন। তাই রাফায়েল। এটাই লেটেস্ট। এখনও পর্যন্ত সব ঠিক থাকলে, ২০১৯ সেই বাহন পাকা হবে।


মা না হয় একটু সময় নিলেন, কিন্তু কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী। এদের তো হাইটেক হওয়া আগেই উচিত ছিল। আধুনিক মনস্ক সব, আর ব্যবহারে আধুনিকতার ছোঁয়া কই। প্রথমেই আসি কার্তিকের কথায়। এদিক ওদিক ঝারা ঝারি বন্ধ করে এবার থিতু হোন। গণেশ দাদা নিজের জন্য বৌ খুঁজেছেন। হোক না তা কলা বৌ। আপনি কি চির নবীন থাকবেন। কালে কালে বেলা তো কম হল না। সমস্যা নেই। বেঙ্গলি ম্যাটরিমোনি আছে। আর তার থেকেও বড় রেঞ্জে আছে ভারত ম্যাটরিমোনি। খুঁজুন, মনের মত কাউকে পাবেনই। গ্যারান্টি। একটু সময়মাপেক্ষ। তবে আশা করা যায়, এখন থেকে আদা জল খেয়ে নামলে, পরের বছর, জোড়ায় আসবেন মন্ডপে। আমাদের আনন্দের মাত্রাও বাড়বে।


নেট দুনিয়ায় লক্ষ্মীর পছন্দ অবশ্যই কেনাকাটা। তাই সারাদিন কাটাবে অনলাইন শপিং-এ। সবকিছু চোখ বুজে, নির্দ্ধায়, কিনুন। শাড়ি, জামা, জুতো, অ্যাক্সেসরিজ, বাড়ির খুটিনাটি, গ্যাজেট, অ্যামাজন, ফ্লিপকার্ট, জাবং, স্নাপডিল.....সবকিছু সস্তায়, হাতের মুঠোয়। শুধু পছন্দ আর পেমেন্ট। আর কিছুর দায়িত্ব নিতে হবে না। বাড়ি বসেই পেয়ে যাবেন আপনার পছন্দের মালপত্র। আর হ্যাঁ, শুধু নিজের জন্য কিনবেন না। সরস্বতীর তো আবার এসবে মন নেই। তার জন্যও কিনবেন। তিনি তো এই নেট জগতে, সোশ্যাল মিডিয়ায় মন দেবেন নিশ্চয়। কিন্ডলই পারফেক্ট ওর জন্য। হাতের নাগালে বইপত্র। তাতেই তো তার মজা। আর একবার যদি ফেসবুকের মজা পান, দেখবেন ডেটা কখনও অফই হচ্ছে না। নিজের ছবি পরের ছবি দেখে , কত কোটস পড়ে সময়ও দারুণ কাটবে। বাড়বে যোগাযোগের পথও। আসা যাওয়ার মাঝে, ইমেলের ওপর নির্ভরও করতে পারবেন।


এসব অভ্যাস করতে বেশি দিন লাগবেই না। নেক্সট ইয়ার পর্যন্ত টেক স্যাভি হবেনই হবেন। শুধু কনেকশনটা স্ট্রং হতে হবে। নেটই তো এখন ভবিষ্যত্। গুগুলের গণ্ডি এখনও না পেরোলে, পিছিয়ে পড়বেন। তবে সেই কথাই থাকল। এবার তাড়াতাড়ি চলে এসো মা। এদিকে তো যুদ্ধের জুজু। তুমি আসলে যদি শান্তি আসে। কারণ, তুমিই শান্তিরূপেণু সংস্থিতা।