২০২০ পুরো বিশ্বের কাছে এক বিভীষিকা। থমকে গেছিল সমগ্র পৃথিবী। রাজনীতি থেকে খেলাধূলো, বিনোদন থেকে শেয়ারবাজার এক ধাক্কায় আটকে গেছিল সব। সৌজন্যে করোনা ভাইরাস। এর মধ্যেই খেলাধূলার জগতে ঘটে গেছে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা। ২০২০ সালের বহু বড় টুর্নামেন্ট গেছে পিছিয়ে আবার পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন অনেক খেলার কিংবদন্তিও। আবার ভারতের খেলাধূলার জগতেও ঘটেছে কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা। 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

বছরশেষে ফিরে দেখা যাক  চলতি বছরের খেলার এমনই কিছু ঘটনা।


বাতিল টোকিও অলিম্পিক - ২০২০ সালে খেলার জগতের অনেকগুলো বড় ইভেন্ট হওয়ার কথা ছিল। পৃথিবীর সবথেকে বড় স্পোর্টস ইভেন্ট অলিম্পিকের আসর বসার কথা ছিল জুলাই মাসে টোকিওতে। কিন্তু করোনার কারণেই ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটি ২০২১ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত পিছিয়ে দিতে বাধ্য হয় এই মেগা ইভেন্ট। আইওসি সভাপতি থমাস বাক জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে টেলিফোনে কথা বলেই এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেন। খেলোয়াড়রা, সব দেশের অলিম্পিক কমিটি এবং স্পোর্টস ফেডারেশনের সঙ্গে কথা বলেই এই সিদ্ধান্তে সিলমোহর দেওয়া হয়। ২০২১ সালের ২৩শে জুলাই থেকে অগস্টের ৮ তারিখ পর্যন্ত বসার কথা অলিম্পিকের আসর।


বাতিল ইউরো কাপ – ইউরোপের সবথেকে বড় আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্ট ইউরো কাপও করোনার কারণে বাতিল করতে বাধ্য হয় উয়েফা। মার্চ মাসেই এই ঘোষণা করা হয় উয়েফার তরফ থেকে। ২৪টি দেশকে নিয়ে জুনের ১২ তারিখ থেকে জুলাইয়ের ১২ তারিখ পর্যন্ত এই টুর্নামেন্ট হওয়ার কথা ছিল। ২০২১ সালের জুনের ১১ তারিখ শুরু হবে ইউরো কাপ।


বাতিল কোপা আমেরিকা – একই কারণে বাতিল হয় কোপা আমেরিকাও। দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবল কনফেডারেশনও মার্চ মাসেই ১২ দলের এই টুর্নামেন্ট বাতিল করে দেয়। ২০২১-এই মেসি, নেইমাররা নামবেন কোপা আমেরিকা খেলতে।


বাতিল মহিলা অনুর্দ্ধ-১৭ ও অনুর্দ্ধ-২০ ফুটবল বিশ্বকাপ – ২০২১ সালে হওয়ার কথা ছিল মহিলা অনুর্দ্ধ-১৭ ও অনুর্দ্ধ-২০ ফুটবল বিশ্বকাপ যথাক্রমে ভারতে ও কোস্টারিকাতে। কিন্তু করোনার কারণে বাতিল হয়ে এখন ২০২২ সালে হবে এই দুটি টুর্নামেন্ট।


বাতিল উইম্বেলডন – এপ্রিলের এক তারিখে অল ইংল্যান্ড ক্লাব ঘোষণা করে যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথমবারের জন্য পিছোচ্ছে এই টুর্নামেন্চ করোনার জেরে। উইম্বেলডনের ১৩৪তম সংস্করণ আগামী বছরের জুন মাসে শুরু হবে।  


বাতিল টি-২০ বিশ্বকাপ – অক্টোবরের ১৮ তারিখ থেকে নভেম্বরের ১৫ তারিখ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়াতে হওয়ার কথা ছিল পুরুষদের ক্রিকেটের টি-২০ বিশ্বকাপ। কিন্তু জুলাই মাসের ২০ তারিখ করোনার কারণে এই টুর্নামেন্টও বাতিল করতে বাধ্য হয় ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থা আইসিসি। ২০২১-এ ভারতে হবে পরবর্তী টি-২০ বিশ্বকাপ। 
এবার দেখে নেব সেইসব কিংবদন্তিদের তালিকা যারা এই বছরেই বিদায় জানিয়েছেন পৃথিবীকে।


দিয়েগো মারাদোনা – সম্ভবত এই বছরের সবথেকে বড় দুঃখের খবরটা ক্রীড়াপ্রেমীরা পেয়েছিলেন ২৫শে নভেম্বর। মাত্র ৬০ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পৃথিবীকে বিদায় জানিয়েছিলেন ফুটবলের রাজপুত্র দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনা। ফুটবলের ইতিহাসে একমাত্র ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি পেলের সঙ্গেই তাঁর তুলনা করা যায়। ১৯৮৬ বিশ্বকাপে গত শতাব্দীর সেরা গোল ও সবথেকে বিতর্কিত গোল একই ম্যাচে ইটালির বিরুদ্ধে করেছিলেন তিনি। অমর হয়ে আছে দুটি গোলই। একার হাতে দলকে সেই বিশ্বকাপও জিতিয়েছিলেন দিয়েগো। ফুটবলের বাইরে তাঁর বিতর্কিত জীবনও আলোচনার বিষয় হয়েছে বারংবার। 



পাওলো রোসি – ১৯৮২ বিশ্বকাপে ইতালিকে চ্যাম্পিয়ন করার নায়ক পাওলো রসি ৯ই ডিসেম্বর মারা যান। মৃত্যুক সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৪ বছর। ১৯৮২ বিশ্বকাপে ৬টি গোল করেছিলেন তিনি।



কবে ব্রায়ান্ট – আমেরিকার বাস্কেটবল কিংবদন্তি কবে ব্রায়ান্ট ও তাঁর ১৩ বছর বয়সী কন্যা এক মর্মান্তিক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় মারা যান ২৬শে জানুয়ারি। লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে ৪৮ কিলোমিটার দূরে ক্যালাবাসাস নামের একটি জায়গায় যান্ত্রিক গোলযোগে ভেঙ্গে পড়ে তাদের হেলিকপ্টার। তিনি ৫ বারের এনবিএ চ্যাম্পিয়ন ছিলেন এবং ২ বার অলিম্পিকে সোনার পদক পেয়েছিলেন।



চুনী গোস্বামী – ভারতের সর্বকালের সেরা ফুটবলার প্রবাদপ্রতিম চুনী গোস্বামী ৩০শে এপ্রিল কলকাতায় নিজের বাসভবনে মারা যান। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। ১৯৬২ সালে এশিয়ান গেমসে সোনা জেতেন তিনি ও ১৯৬০ সালে অলিম্পিকে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন। 



পি কে ব্যানার্জী – ভারতের আরেক ফুটবল রত্ন পি কে ব্যানার্জী মারা যান ২০শে মার্চ।  বহুদিন ধরেই তিনি অসুস্থ ছিলেন। অর্জুন পুরস্কারপ্রাপ্ত এই ফুটবলার ইস্টার্ন রেলওয়ের হয়ে দাপটের সঙ্গে খেলেছেন কলকাতা ময়দানে। পরবর্তীকালে বাংলার দুই বড় ক্লাব মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গলের কোচ হয়েও পেয়েছেন একাধিক সাফল্য।



ডিন জোন্স – অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন ক্রিকেটার ডিন জোন্স মাত্র ৫৯ বছর বয়সে হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মুম্বইতে মারা যান। আশির দশকে জোন্সকে একদিনের ক্রিকেটের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচনা করা হত। 


এরইমধ্যে বেশ কিছু আশাপ্রদ ঘটনাও ঘটেছে ভারতের জন্য। এবার ফিরে দেখব সেইসব ঘটনা।


মেলবোর্নে প্রত্যাবর্তন – বছরের শেষ টেস্ট ম্যাচে অজিঙ্ক রাহানের নেতৃত্বে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে ভারত। মেলবোর্নে বক্সিং ডে টেস্টে অস্ট্রেলিয়াকে চারদিনে উড়িয়ে দিয়ে সিরিজে সমতা ফিরিয়েছে ভারত। অ্যাডিলেডে ৩৬ রানে অল আউট হয়ে লজ্জার হারের পর মেলবোর্নের এই প্রত্যাবর্তন নিঃসন্দেহে ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম প্রত্যাবর্তনগুলির একটি। কোচ রবি শাস্ত্রীর মতে ৮ উইকেটে এই জয় তাঁর দেখা সেরা টেস্ট জয়। 


সানিয়া মির্জার প্রত্যাবর্তন – সন্তানের জন্মের পর প্রায় ২ বছর পর কোর্টে ফিরেই খেতাব জয় দিয়ে শুরু করলেন ভারতের গ্ল্যামার গার্ল সানিয়া মির্জা। জানুয়ারির ১৮ তারিখ নাডিয়া কিচনককে নিয়ে ডব্লিউটিএ হোবার্ট ইন্টারন্যাশনালের ডাবলস খেতাব জেতেন সানিয়া। 


অলিম্পিকে ৯ জন বক্সার – এমসি মেরি কম (৫১ কেজি), পূজা রাণী(৭৫ কেজি)সহ ৯ জন বক্সার আসন্ন অলিম্পিকে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবেন। অন্যান্য বিভাগে এখনও সুযোগ আছে আরও কিছু বক্সারের অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করার।


পাঁচজন খেলরত্ন – এই প্রথমবার ক্রীড়ামন্ত্রক থেকে ৫ জন খেলোয়াড়কে রাজীব গান্ধী খেলরত্ন পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। ক্রিকেটার রোহিত শর্মা, কুস্তিগীর বিনেশ ফোগত, প্যারা অ্যাথলিট মারিয়াপ্পান থাঙ্গাভেলু, টেবিল টেনিসের মনিকা বাত্রা ও মহিলা হকি টিমের ঋতু রাণীকে এই সম্মানে ভূষিত করা হয়।