সৌমিত্র সেন


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

বাংলায় ছড়া আছে-- আয় বৃষ্টি ঝেঁপে/ধান দেব মেপে! ক্রিকেটেও অবলীলায় এই ছড়াকে চালিয়ে দেওয়া যায়। তবে একটু অন্য  ভাবে-- এল বৃষ্টি ঝেঁপে/  ওয়ানডে দিল মেপে!


একটু রহস্য হয়ে গেল?  


ছাড়ানো যাক রহস্যটা। জায়গাটা মেলবোর্ন। সময়টা ১৯৭১ সাল। চলছে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া সিরিজ। খেলা হচ্ছে তৃতীয় টেস্ট। না, ঠিক 'খেলা' হচ্ছে না। টেস্টের প্রথম তিনদিনই বৃষ্টিতে ভেস্তে গিয়েছে। তখন ঠিক হল, ম্যাচটিকে বাতিল ঘোষণা করে বরং ছোট ফরম্যাটের আকারে কিছু একটা খেলা হোক। ইংল্যান্ডের ম্যানেজার ইলিংওয়ার্থের টিমকে প্রস্তাব দিলেন, এমসিজি-তে একটি ৪০-ওভার ম্যাচ খেললে কেমন হয়! হল সেই ম্যাচ। মজা করে হালকা চালে খেলা সেই ম্যাচটিকে বলা হল-- 'জোক ম্যাচ'। অস্ট্রেলিয়াই জিতল সেই 'জোক' ম্যাচ। ৫ উইকেটে। ব্যস! বৃষ্টির হাত ধরে জন্ম হয়ে গেল একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের! 


তবে, আরম্ভেরও তো আরম্ভ থাকে। ওয়ানডে ক্রিকেটই-বা সেই নিয়মের বাইরে হয় কী করে! সেই বৃষ্টিবিঘ্নিত টেস্ট ম্যাচের ঘাসে আবিল পেট থেকে বেরিয়ে আসা ১৯৭১ -এর ৫ জানুয়ারির 'কৌতুকম্যাচ'টিরও, অতএব, আরম্ভের অন্য উৎস ছিল। 


১৯৭০ সালেই কেরি প্যাকার যে 'ওয়ার্ল্ড সিরিজ ক্রিকেট' চালু করেছিলেন, দেখা গিয়েছিল, সেই ফরম্যাটে যে-সব নিয়মকানুন চালু ছিল, পরবর্তী সময়ে  ওয়ান ডে ক্রিকেট হিসেবে যা স্বীকৃতি পেতে থাকল, তার নিয়ম-কানুনও অনেকটা এক। সেই দিক থেকে দেখতে গেলে, একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পূর্বসূরী হিসেবে কেরি প্যাকারের এই 'ওয়ার্ল্ড সিরিজ ক্রিকেট'কেও ধরা চলে। 


প্রথম দিকে ওয়ান ডে ম্যাচ কখনও ৪০, কখনও ৪৫, কখনও ৫৫ ওভারেও খেলা হয়েছে। তবে পরের দিকে তা ৬০ ওভারে বেঁধে দেওয়া হল। ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত ওয়ান ডে ৬০ ওভারেই খেলা হত। পরে তা ৫০ ওভারে সীমায়িত করে দেওয়া হল। সময়ও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হল-- ৮ ঘণ্টা। প্রথম দিকে সাদা পোশাকেই সীমিত ওভারের ক্রিকেট খেলা হত। রঙিন ইউনিফর্ম পরে প্রথম ক্রিকেট খেলা হয়েছিল অনেক-অনেক পরে। সেটা ১৯৭৯ সালের ১৭ জানুয়ারি। এই ভাবে নানা সময়ে এই ক্রিকেটে নানা বদল আসতে থাকল। 


ক্রমে টেস্ট ফরম্যাট থেকে নানা দিক থেকে, নানা ভঙ্গিতে, নানা সংযোজন-বিয়োজনে একটু-একটু করে আলাদা হতে থাকা ক্রিকেটের এই ফরম্যাটটি একদিনের আন্তর্জাতিক তকমা পেল। এবং বিশ্বকাপ আয়োজনের মধ্যে দিয়েই পূর্ণতা পেল একদিনের আন্তর্জাতিক। ক্রিকেটবিশ্বে যেন নতুন যুগ এল। 


হলে কী হবে? বিশুদ্ধবাদীরা কিন্তু এই ওডিআই-কে মোটেই দেখতে পারতেন না। তারা কৌলীন্যের নিরিখে কোনও মূল্যই দিতে চাইতেন না সীমিত ওভারের ক্রিকেটকে। তাঁরা বিদ্রুপ করে বলতেন-- এ হল পাজামা ক্রিকেট (আসলে চিরাচরিত সাদা পোশাকে খেলা না হয়ে রঙিন পোশাক পরে খেলা হয় বলেই এমন বলেন তাঁরা)।


বিশুদ্ধবাদীরা যা-ই বলুন, ক্রিকেট ইতিহাসবিদেরা কিন্তু স্বীকার করেছেন, টেস্ট টেস্টই, তার কোনও তুলনা হয় না, বিকল্পও হয় না; কিন্তু ওয়ান ডে ক্রিকেট নতুন দিনের নতুন প্রজন্মকে টেনে রেখে সামগ্রিক ভাবে আসলে ক্রিকেটকেই পুষ্ট করেছে। ক্রমশ বিরাট পুঁজি আসতে থাকল। ক্রিকেটের জনপ্রিয়তাও বাড়তে থাকল। একদিনের আন্তর্জাতিকের আলোয় যেন নতুন করে উজ্জীবিত হল টেস্ট-দুনিয়া। টেস্টে স্বীকৃত মহাতারকারা তখন নতুন করে একদিনের ম্যাচেও নিজেকে মেলে ধরার প্রেরণা পেলেন। এভাবেই ওয়ানডে ফরম্যাটেও জন্ম হল নতুন নতুন ক্রিকেট তারকার। ইতিহাস তৈরি হল। ইতিহাস বয়ে চলল।


দেখতে গেলে, আজকের টোয়েন্টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের ক্রিকেট কিন্তু ওই ৫০ ওভারেরই সন্তান। আগে ওই ৫০ ওভার না থাকলে আজকের ২০-২০'কে ভাবা যেত কি? বোধ হয় না। 


২০-২০ আসার পরে ওয়ানডে'র জনপ্রিয়তা অবশ্যই কমেছে। তবুও দেখতে-দেখতে পঞ্চাশটি বসন্ত পার করে ফেলেছে ওয়ান ডে ইন্টারন্যাশনাল। বহু ব্যবহারেও পঞ্চাশ বছরের 'পাজামা' কিন্তু একেবারে ছেঁড়েনি। হয়তো একটু সেলাই পড়েছে কোথাও কোথাও, কিন্তু এখনও সে নিজস্ব মহিমাতেই অম্লান, অটুট, উজ্জ্বল। 


Also Read: Boxing Day Test কোভিড হটস্পট! সিডনি টেস্টের আগে চাঞ্চল্য