সব্যসাচী বাগচী: জীবনের সব ঘটনার কি 'হ্যাপি এন্ডিং' থাকে! অনেক ঘটনার শেষটা কিন্তু সুখের হয় না। তবে মানিয়ে নিতে হয়। মেনে নিতে হয়। 'কপিলস ডেভিলস'-এর (Kapils Devils) ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা ঠিক তেমনই। 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

এই তো কয়েক দিন আগে রণবীর সিং (Ranveer Singh) জানিয়ে দিলেন যে তাঁর স্বপ্নের প্রজেক্ট 83 বড়দিনে মুক্তি পাবে। ব্যস অপেক্ষার প্রহর শুরু। তবে সেই আনন্দের মধ্যেও 'কপিলস ডেভিলস'-এর অন্যতম সদস্য ও এই সিনেমার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ বলবিন্দর সিং সান্ধুর (Balwinder Singh Sandhu) মন খারাপ। কারণ,সবার প্রিয় যশপাল শর্মা (Yashpal Sharma) যে অতীত হয়ে গিয়েছেন। 



বাইশ গজের যুদ্ধের চরিত্রগুলো সিনেমায় জীবন্ত করে তোলার জন্য রণবীর, তাহির রাজ ভাসিন, সাকিব সেলিম, যতীন সার্নাদের ক্রিকেটের পাঠ দিয়েছেন সেই ফাইনালে গর্ডন গ্রিনিজের অফ স্টাম্প উড়িয়ে দেওয়া এই প্রাক্তন ডানহাতি জোরে বোলার। গত ১৩ জুলাই ওঁদের প্রিয় 'যশ' শরীর ছেড়ে দিয়েছেন। তবে ওঁদের স্মৃতিতে এখনও রয়ে গিয়েছেন। এবং থাকবেন। 


আরও পড়ুন: Inzamam-ul-Haq: হৃদরোগে আক্রান্ত পাক কিংবদন্তি, করা হল অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি


প্রয়াত মারকুটে ব্যাটসম্যানকে ‘রোমি’ বলে ডাকতেন বলবিন্দর। কিন্তু তাঁর বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক কপিল দেবের স্ত্রীর নামও যে রোমি! সেটার জন্য নিজেদের মধ্যে সমস্যা হয়নি? জি ২৪ ঘন্টাকে টেলিফোনে বলবিন্দর বললেন, "বিশ্বকাপ অভিযানের সময় যশ ও আমি একই ঘরে থাকতাম। তখনকার দিনে অধিনায়ক ছাড়া আর কারও আলাদা ঘর বরাদ্দ ছিল না। প্রায় দেড় মাসের বেশি সময় আমরা এক ছাদের তলায় কাটিয়েছিলাম। তাই মজা করে ওকে ‘রোমি’ বলে ডাকতাম। সেটা নিয়ে অবশ্য যশ খুব লজ্জা পেত।" 


ক্রিকেট পন্ডিতদের মতে প্রায়ত অজিত ওয়াদেকরের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে ইংল্যান্ড এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে জোড়া টেস্ট সিরিজ  জয় 'ভারত উদয়' হয়ে থাকলে, ১৯৮৩ সালের ২৫ জুন নির্ঘাৎ ভারতীয় ক্রিকেটের রেনেসাঁ ঘটেছিল। সেই বিশ্বকাপ অভিযান, বাতিলের খাতায় থাকা একটা দলের বিশ্বজয়ী হয়ে ওঠার রোমহর্ষক গল্প, কপিল-সুনীল গাভাসকরের (Sunil Gavaskar) মানসিক টানাপোড়েন সবকিছুই উঠে এসেছে পরিচালক কবির খানের রিল লাইফের 83-তে। 



বলবিন্দর ফের যোগ করলেন, "গত ১৩ জুলাই খারাপ খবরটা পাওয়ার আগে শেষবার 83 নিয়ে একটা অনুষ্ঠানে দেখা হয়েছিল। সেখানেই ওর সঙ্গে শেষ আড্ডা দিয়েছিলাম। আমার বাড়তি ওজন, ভুঁড়ি বেড়ে যাওয়ার জন্য কত বকাবকি করল। সেই মানুষটাই আজ আমাদের মধ্যে নেই! অবিশ্বাস্য!” 


সে বারের বিশ্বকাপে সেরা উইকেটকিপারের তকমা পাওয়া সঈদ কিরমানি (Syed Kirmani) এখনও একই রকম শোকস্তব্ধ। বেঙ্গালুরু থেকে টেলিফোনে বলছিলেন, "২৫ ডিসেম্বর সিনেমা মুক্তি পাওয়ার পর যশ আমাদের হৃদয়ে ফের জীবন্ত হয়ে উঠবে। আন্তর্জাতিক কেরিয়ারে অনেক ডাকাবুকো ক্রিকেটার দেখেছি। তাদের মধ্যে যশ অন্যতম। ওর মধ্যে অনেক সীমাবদ্ধতা থাকলেও সেটা মাঠে প্রকাশ পায়নি। এই কারণে সানি, ক্যাপস, জিমি ওকে সম্মান করত।" 



৬৬ বছরেও ফিটনেস ধরে রাখা যায়, সেটা সতীর্থদের দেখিয়েছিলেন ওঁদের যশ। তাই এহেন মানুষটার থেমে যাওয়া মেনে নিতে পারছেন না কিরমানি। যোগ করলেন, "83-র মাধ্যমে অনেকের কাছে আমাদের সেই অদেখা, অজানা কীর্তিগুলো সামনে আসবে। সবাই হাসব। অগণিত মানুষ হাততালি দেবে। শুধু কাঁদবে ওঁর পরিবার। তাই এই আনন্দ দিনের শেষে মূল্যহীন।" 


আরও পড়ুন: IPL 2021: ফ্যানের চোখে তিনিই প্রথম 'ফোরডি প্লেয়ার'! ম্যাক্সওয়েলের জন্য মিম বন্যা


লর্ডসের সেই মেগা ফাইনালের 'ম্যান অফ দ্য ম্যাচ' ছিলেন মহিন্দর অমরনাথ (Mohinder Amarnath)। তিনিও একই রকম ভারাক্রান্ত। কারণ, প্রয়াত যশপাল শুধু তাঁর জাতীয় দলের সতীর্থ ছিলেন না। দুজন একসঙ্গে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে উত্তরাঞ্চলেও খেলেছেন।  


ছেলেবেলার বন্ধু যশকে নিয়ে জিমি-র প্রতিক্রিয়া, "83 সিনেমা অনেক আগেই রিলিজ হয়ে যেত। কিন্তু গত বছর করোনার জন্য সবকিছু থমকে যায়। ভাইরাস দাপট না দেখালে যশ আরও একবার ঐতিহাসিক মুহূর্তের শরিক হতে পারত। আমাদের দলে যে লোকটা সবচেয়ে বেশি মজা করতে পারত, তাকে এত আগে চলে যেতে হল!" 



যশ চলে গেলেও ওঁদের বন্ধুত্ব এখনও অটুট। তাই তো ২৫ জুন এলেই ওঁরা একে অন্যকে ফোন করে শুভেচ্ছা জানাতেন। সবাই দেখা করতেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। তবে হোয়াটসঅ্যাপ যুগ শুরু হওয়ার পর থেকে বদলে যায় ব্যাপারটা। কয়েক বছর আগে গাভাসকার একটা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করেছিলেন। নাম দিয়েছিলেন ‘চ্যাম্পিয়নস ফর এভার’। সেখানেই এখন চলে নিয়মিত আড্ডা। রোজ মজার জোকস পোস্ট করার দায়িত্ব কিন্তু সানির। 


তবে কালের নিয়মে গত ১৩ জুলাই থেকে সেই গ্রুপের একজন ‘মিউট’ হয়ে গেলেন! রয়ে গেলেন বাকি ১৪ জন।


(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)