স্বরূপ দত্ত


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

প্রয়াত অমল দত্ত। দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন তিনি। আজ জীবনাবসান হল এই কিংবদন্তি ফুটবল কোচের। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। ভারতীয় ফুটবল হারালো তাঁর হীরের টুকরো সন্তানকে। হীরের টুকরোই তো।


নয়ের দশকের মাঝামাঝিতে যখন কলকাতার তথা ভারতীয় ফুটবল ক্রমশ জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে। মাঠ থেকে মুখ ফেরাচ্ছেন বাঙালি ফুটবলপ্রেমীরা। সেই সময় ডায়মণ্ড সিস্টেমের হাত ধরে ফের জেগে উঠেছিল কলকাতার ফুটবল। সেই কোন যুগ থেকে বায়োস্কোপে পাড়ায় পাড়ায় বিদেশি ফুটবল দেখিয়ে বেড়াতেন। নিজের পয়সা খরচ করে সেই আমল থেকে বিদেশের ফুটবলকে গুলে খেতেন। কিন্তু সেই জানা শুধু নিজের কাছে রেখে দিতে চাননি। যখন এ দেশে টেলিভিশনে বিদেশের ফুটবল দেখার সুযোগ ছিল না, তখনও তিনি ওই বায়োস্কোপ দেখিয়ে বিদেশের ফুটবলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতেন এখানকার ফুটবলপ্রেমীদের। একেবারে ফুটবলওয়ালা।


সত্যি কথা বলতে কী, এই শহরে, গ্রামবাংলায় তাঁর জন্যই বিদেশি ফুটবলে শিক্ষিত হয়েছিলেন মানুষ। ১৯৯৭ সালে তাঁর ডায়মণ্ড সিস্টেমে মাঠে ফুল ফোটাতো মোহনবাগান। চিমা ওকেরি থেকে দীপেন্দু বিশ্বাস, শ্রীকৃষ্ণ ঘোষ থেকে লোলেন্দ্র সিং মোহনবাগানের সেই ফুটবলাররা হয়ে উঠেছিলেন প্রাণবন্ত। সে বছরের ফেডারেশন কাপে তাঁর জন্যই তেতে উঠেছিল বিপক্ষ ইস্টেবঙ্গল। পিকে ব্যানার্জির কোচিংয়ে খেলা বাইচুংকে অমল দত্ত বলেছিলেন চুং চুং। সোসোকে বলেছিলেন শসা, ওমেলোকে বলেছিলেন ওমলেট। তেতে উঠে সেই ফেডারেশন কাপের সেমিফাইনালে ১-৪ গোলে হেরে গিয়েছিল মোহনবাগান। পরের তিন সপ্তাহের মধ্যেই অমল দত্তের কোচিংয়ে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে মধুর প্রতিশোধ নিয়েছিল মোহনবাগান।


ফুটবল মাঠে তাঁর এবং পিকে ব্যানার্জির লড়াই বাঙালির ফুটবল আলোচনায় চিরকালীন হয়ে থাকবে। এমন মানুষ চলে গেলেন আজ, যাঁর জন্য আধুনিক ফুটবল সম্পর্কে ধারণা হয়েছিল আমাদের। আজ তিনি চলে গেলেন। গত কিছুদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় বারবার তাঁর মৃত্যুসংবাদ পাওয়া গিয়েছে। তাই প্রথমবার মনে হয়েছিল, আজও খবরটা মিথ্যে হোক। কিন্তু না। আজ তিনি চলেই গেলেন। বড় ভালো তবলা বাজাতেন। যে পি কে ব্যানার্জির সঙ্গে তাঁর এত রেষারেষি, সেই পিকে ব্যানার্জি গান গাইছেন আর তাঁকে তবলায় সঙ্গত করছেন অমল দত্ত, এমন ছবিও দেখা গিয়েছে। খুব বড় ফুটবলার হয়তো ছিলেন না। কিন্তু বড় ভালো কোচ ছিলেন। আর অবশ্যই ছিলেন ফুটবল শিক্ষক। রবীন্দ্রনাথের অমল ও দইওলার মতো করেই বলা যায়, অমল ফুটবলওয়ালা। আজ তাঁর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ গোটা ফুটবল সমাজ। কেনই বা হবে না। মোহনবাগান, ইস্টেবঙ্গলই হোক অথবা হাওড়া ইউনিয়নের মতো ছোট ক্লাব কিংবা জাতীয় দলের দায়িত্ব, অবলীলায় সামলেছেন। প্রতিভাবান ফুটবলারদের তুলে আনায় তাঁর জুড়ি মেলা ভার ছিল।


অনেক বিতর্কে জড়িয়েছেন। যুবভারতী থেকে স্কুটারে চেপে বেরোনোর সময় দর্শকদের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন। রোভার্স কাপ খেলতে গিয়ে বিপক্ষ দলের কাছে ঘুষ দিতে গিয়েছেন এই অভিযোগে তাঁকে পত্রপাঠ বিদায় করে দেওয়া হয়েছে কোচিং থেকে। আসলে মানুষটার একটা বড় চরিত্র ছিল। সেই চরিত্রটার আজ ধুকপুকানিটা হয়তো স্তব্ধ হল। কিন্তু এই দেশের মাটিতে যতদিন ফুটবল গড়িয়ে চলবে, ততদিনই বেঁচে থাকবেন অমল দত্ত।


আরও পড়ুন গাভাসকরের জন্মদিনে এই ৫ টা তথ্য না জানলে আপনার ক্রিকেটটাই জানা হবে না!