স্বরূপ দত্ত


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

 


ভারতীয় ক্রিকেটের মা রত্নগর্ভা তো বটেই। এক আধজন নয়, একের পর এক মহান ক্রিকেটার জন্মেছেন এ দেশে। এঁদের প্রত্যেকেই নিজের নিজের জায়গায় দুর্দান্ত। গর্বিত করে আমাদের প্রত্যেক ভারতবাসীকে। তবু এত গুণী মানুষদের মধ্যেও দু-একজন নিজেকে তুলে নিয়ে যান এমন উচ্চতায় যে, তাঁদের আর মাপা যায় না। দূর থেকে বিষ্ময়ে তাকিয়ে ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। মনসুর আলি খান পতৌদি, কপিল দেব, সুনীল গাভাসকর, সচিন তেন্ডুলকররা এই গোত্রেই পড়বেন। তাঁদের সঙ্গেই উচ্চারিত হবে আরও কয়েকজনের নাম।


কিন্তু ক্রিকেট তো আর শুধুই একটা খেলা নয় যে, শুধু সাফল্য আর ব্যর্থতা দিয়ে মানুষকে বিচার করতে হবে। ক্রিকেট জীবনের পকেট সাইজ সংস্করণ। তাই সাফল্য, ব্যর্থতা ছাড়াও এখানে থাকে অনেক অনেক মাপকাঠি আর অনুভব। আর সেই বিচারে এ দেশের ক্রিকেটে তিনি এগিয়ে থাকবেন অনেকটাই। মহম্মদ আজাহারউদ্দিন। বিতর্কে, সাফল্যে কিংবা ব্যার্থতায় অথবা কেচ্ছায়, সবকিছুতেই আজাহার অন্যদের থেকে এতটাই এগিয়ে যে, উসেইন বোল্টের মতোই ঘাড় ঘুরিয়ে দেখতে পারেন, বাকিদের আদৌ দেখা যাচ্ছে কিনা!


একটা মানুষ কেরিয়ারের শুরুতে বেশ ভালো বল করতেন। এক ডজন আন্তর্জাতিক উইকেটের মালিকও তিনি। সেই মানুষটাই ব্যাট হাতে হয়ে উঠলেন বোলারদের ভয় আর বিরক্তির কারণ! প্রথম তিন টেস্টেই শতরান! না, এই সৌরজগতে এমন কৃতিত্বের অধিকারী আর কেউ নন। আজাহারউদ্দিনের পরিবর্তে তাঁর নামই হয়ে গেল হাজারুদ্দিন! সেই মানুষটাই হলেন দেশের ক্যাপ্টেন। প্রচুর টেস্ট জয়। কুম্বলে, রাজু, চৌহানদের হাতের জাদুতে পাল্টে গিয়েছিল মানুষটার জীবন। প্রথম জীবনের স্ত্রী নৌরিনকে তখন পুরোনো লাগছে। কারণ, আজাহারের চার পাশে যে শুধু সাফল্য, গ্ল্যামার আর ভক্তদের লেসার রশ্মি!নৌরিনের প্রেম ভালোবাসা যে আজাহারের কাছে তখন সৌদাগরের অমিতাভ বচ্চনের মতোই!


গুড়টাই ভুলে গিয়ে মেতে গেলেন পান খাওয়া নারীর লাল ঠোঁটে! এরপর যা ভবিতব্য তাই। নৌরিনের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ। সঙ্গীতা বিজলানির মতো বলিউড নায়িকার হাব্বি হয়ে ওঠা। জীবনে এল ব্যর্থতা। একসময় যে লোকটার নাম হয়েছিল ‘হাজারুদ্দিন’, তাঁরই নাম হয়ে গেল ’আজ হার’! নাম জড়ালো ক্রিকেট বেটিংয়ের সঙ্গে! চিরকালীন নির্বাসিত হয়ে গেলেন! পরে অবশ্য সুপ্রিম কোর্ট আজাহারকে নির্দোষ বলল। কিন্তু তখন যে বড্ড দেরী হয়ে গিয়েছে। আর ক্রিকেটে ফেরার পথ নেই।


ভাবুন একবার। জীবনে ক্রিকেট নেই। ১০০ টেস্ট খেলা যেকোনও ক্রিকেটারের স্বপ্ন থাকে। তাঁকে থেমে যেতে হল কিনা ৯৯টা টেস্ট খেলে! তাঁর টেস্ট ক্রিকেটের সর্বোচ্চ রান কিনা ১৯৯! আর মাত্র কয়েক বছর মারা গেল নিজের ছেলেটাও! একটা মানুষের জীবনে ঈশ্বর এত কষ্ট লিখলেন কীভাবে! এখন মনে এই প্রশ্নটা আসলে, উত্তরও ঠিক করে নিই। ঈশ্বরও কষ্ট দেয় তাঁকেই, যে কষ্টটা সহ্য করতে পারবে। যার সহ্য করারই ক্ষমতা নেই, তাঁকে ঈশ্বর কষ্ট দেন না। আজাহার ভেঙে পড়েছেন হয়তো, কিন্তু অন্য অনেকের মতো ধোত্তর জীবন বলে কাপুরুষের মতো আত্মহত্যার পথ বেছে নেননি। আজও বেঁচে আছেন আজাহার। কে জানে, তাঁর কষ্ট আমি পেলে, কটা দিন এই পৃথিবীতে টিকে থাকতে পারতাম।


তাই তো বায়োপিকটা দেখার জন্য অন্য অনেকের মতো অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছি। ইতিমধ্যে, ট্রেলর মন মাতিয়ে দিয়েছে। হলই বা সামনের লোকটা এমরান হাসমি। তাঁকে পছন্দ করার কোনও কারণ নেই। কিন্তু পর্দায় যে দেখা যাবে ‘আজাহার নামের চরিত্র টাকেই’ ! আর সিনেমা হলে কানে আসবে এই কথাগুলো, ‘ইন্ডিয়া কি হারকি কিমত কিতনি হ্যায়!’


লোগোকো পাতা হোনা চাহিয়ে ইন্ডিয়ামে ক্রিকেটকে নাম পে অর ক্যা ক্যা হোতা হ্যায়! নিন, দেখুন আজাহারের ট্রেলর। আর ভাবুন, আজাহারের মতো ক্রিকেট ব্যক্তিত্ব এ দেশে আর জন্মেছে কিনা। আজ একটা কথা বলতে ইচ্ছে করছে, মানুষটা অনেক কষ্ট পেয়েছেন জীবনে। হয়তো এগুলো তাঁর প্রাপ্যই ছিল। তবুও, মানুষ তো। নিজের জীবন দিয়েই যেন শিখে নিলেন, ‘এ পৃথিবীতে অন্যায় করলে শাস্তি পেতেই হবে! সে তুমি আজাহারই হও অথবা মারাদোনা!’