সব্যসাচী বাগচী


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

মাঠে নেমে শুধু বিপক্ষের ব্যাটিংকে ধ্বংস করেই তিনি ক্ষান্ত থাকেন না। ক্রিকেটের বিবর্তন কী ভাবে ঘটানো যায় সেটা নিয়েও বারবার প্রশ্ন তুলেছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন (Ravichandran Ashwin)। এ বার টিম ইন্ডিয়ার (Team India) অভিজ্ঞ অফ স্পিনার আরও একটি নিয়মে বদলের দাবি তুললেন। অশ্বিন প্রশ্ন তুলেছেন 'ব্লাইন্ড স্পট' নিয়ে। আর এমন একটা ইস্যু নিয়ে অশ্বিনের চিন্তাভাবনাকে স্বাগত জানালেন বাংলার তিন প্রাক্তন স্পিনার। 


কিন্তু সবার আগে জানতে হবে 'ব্লাইন্ড স্পট' ব্যাপারটা কী? কেনই বা পিচের একটি বিশেষ জায়গায় নাম 'ব্লাইন্ড স্পট' দেওয়া হল? ইতিহাস ঘাটলে জানা যাচ্ছে ১৯২৮ সালের দিকে ব্যাটারদের সুবিধার জন্য এই নিয়ম তৈরি করা হয়েছিল। সেই সময় ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থার কর্তাদের যুক্তি ছিল, কোনও ডেলিভারি লেগ স্টাম্পের বাইরে পড়ে ব্যাটারের প্যাডে লাগলে লেগ বিফোর আউট দেওয়া যায় না। কারণ বল সেই সময় লাইনের বাইরে থাকে, তাই ব্যাটারের পক্ষে সেই বল দেখা সম্ভব হয় না। কিন্তু সময়ের বদলের সঙ্গে বাইশ গজের যুদ্ধে এসেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। এখন সব ফরম্যাটেই রিভার্স সুইপ কিংবা সুইচ হিট মারা স্বভাবিক ব্যাপার। অশ্বিন এই দুটি শটের বিরুদ্ধে কোনও মন্তব্য করছেন না। তবে তাঁর দাবি রিভার্স সুইপ কিংবা সুইচ হিট মারার সময় তো ব্যাটারের স্টান্স একেবারে বদলে যাচ্ছে। তাহলে কেন বোলার লেগ বিফোরের আবেদন করলে আম্পায়ার আঙুল তুলবেন না? এই ইস্যু নিয়ে সরব অফ স্পিনার। 


ব্যাটাররা প্রায় রিভার্স সুইপ করেন। কিন্তু বল লেগ স্টাম্পের বাইরে পড়লে গতিপথ উইকেটের দিকে থাকলেও আউট দেওয়া হয় না। রিভার্স সুইপ নিয়ে কোনও সমস্যা নেই অশ্বিনের। তবে রিভার্স সুইপের ক্ষেত্রে বল লেগ স্টাম্পের বাইরে পড়লেও আউট কেন দেওয়া হবে না! এমনটাই দাবি তুলেছেন তিনি। তাঁর বক্তব্যকে সমর্থন করলেন উৎপল চট্টোপাধ্যায় (Utpal Chatterjee), শরদিন্দু মুখোপাধ্যায় (Saradindu Mukherjee) ও সৌরাশিস লাহিড়ী (Sourasish Lahiri)। 



শরদিন্দু মুখোপাধ্যায় (প্রাক্তন অফ স্পিনার, ভারত): মানকাডিং নিয়ে প্রশ্ন তোলার পর অশ্বিন আরও একটা বড় সমস্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল। এবং বোলারদের কাছে, আরও বিশদে বলতে গেলে স্পিনারদের কাছে এটা বড় সমস্যা। রিভার্স সুইপ কিংবা সুইচ হিট নিয়ে কোনও অসুবিধা নেই। তবে সমস্যা হচ্ছে 'ব্লাইন্ড স্পট' নিয়ে। ডানহাতি ব্যাটার ডেলিভারি ফেস করার সময় বল লেগ স্টাম্পের বাইরে পিচ হলে তখনই 'ব্লাইন্ড স্পট' তৈরি হয়। কিন্তু রিভার্স সুইপ কিংবা সুইচ হিট মারার সময় স্টান্স বদলে যাচ্ছে। ফলে সেই সময় তো আর 'ব্লাইন্ড স্পট' থাকছে না। তখন সেই বল লেগ স্টাম্পের বাইরে পিচ হওয়ার জন্য ডান পা লেগ স্টাম্পের বাইরে চলে যাচ্ছে। তাহলে সেটা কেন আমরা অফ স্টাম্প হিসেবে গণ্য করব না? আর সেই বল লাইনে থেকে উইকেটে লাগে তাহলে আম্পায়ার কেন লেগ বিফোর আউট দেবেন না? সেটা হলেই তো ব্যাটে-বলে ভারসাম্য থাকবে।  জো রুট (Joe Root) এবং জনি বেয়ারস্টো (Jonny Bairstow) এজবাস্টন টেস্টে একাধিক রিভার্স সুইপ মারতে গিয়ে বল প্যাডে খেলেছে। 'ব্লাইন্ড স্পট' নিয়মের বদল হলে ওঁরা দুজন কিন্তু রিভার্স সুইপ মারতে গিয়ে দশবার চিন্তা করত। এখানে আরও একটা বিষয় যোগ করা উচিত। যখন একজন ডানহাতি ব্যাটারকে বাঁহাতি বোলার লেগ স্টাম্পের বাইরে (পড়ুন, নেগেটিভ লাইনে বোলিং) বল করার সময় অফ সাইড ও লেগ সাইডে সেই ভাবে ফিল্ডিং সাজায়। কিন্তু ব্যাটার রিভার্স সুইপ কিংবা সুইচ হিটের মারলে ফিল্ডিং করা দলের পুরো ছক বদলে যায়। এই অ্যাডভান্টেজগুলো ব্যাটার পাচ্ছে। বোলার ডেলিভারি করার আগেই কিন্তু জানিয়ে দিচ্ছে যে সে ওভার দ্য উইকেট কিংবা রাউন্ড দ্য উইকেটে বল করবে। একজন বোলার কিন্তু ডেলিভারি করার সময় নতুন ভাবে ফিল্ডিংয়ে বদল করতে পারে না। তবে ব্যাটার রিভার্স সুইপ কিংবা সুইচ হিট মারার জন্য কিন্তু বোলার ও আম্পায়ারের অনুমতি নিচ্ছে না। ফলে বোলাররাই সমস্যায় পড়ছে। তাই এই নিয়মের দ্রুত বদল হওয়া উচিত। 


 



 



উৎপল চট্টোপাধ্যায় (প্রাক্তন বাঁহাতি স্পিনার, ভারত): অশ্বিন শুধু একজন বোলার নয়। আমার কাছে ও অনেকটা দার্শনিকের মতো। আধুনিক ক্রিকেট এবং এই খেলার বিবর্তন নিয়ে অশ্বিন লেখাপড়া করে। তাই এমন একটা বিষয় নিয়ে মন্তব্য করতে পারল। ও একদম ঠিক যুক্তি তুলে ধরেছে। আমাদের সময় রিভার্স সুইপ, সুইচ হিট শটের আমদানি হয়নি। তবে আমি বাঁহাতি স্পিনার, তাই বিষয়টা আরও ভাল ভাবে বুঝতে পারছি। ইদানীং ব্যাটাররা প্রায় রিভার্স সুইপ করেন। কিন্তু বল লেগ স্টাম্পের বাইরে পড়লে গতিপথ উইকেটের দিকে থাকলেও আউট দেওয়া হয় না। রিভার্স সুইপ নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। তবে রিভার্স সুইপের ক্ষেত্রে বল লেগ স্টাম্পের বাইরে পড়লেও আউট কেন দেওয়া হবে না! আসলে আইসিসি-র বর্তমান নিয়মে রয়েছে 'ব্লাইন্ড স্পট' রয়েছে বলেই এই সমস্যা। বল লেগ স্টাম্পে পড়লে ব্যাটারের কাছে আড়াল হয়ে যায়। সেই কারণেই নাম দেওয়া হয়েছে 'ব্লাইন্ড স্পট'। কিন্তু ব্যাটার যদি রিভার্স সুইপ কিংবা সুইচ হিট খেলে, সেক্ষেত্রে কিন্তু 'ব্লাইন্ড স্পট' থাকে না। তাই অশ্বিনের মতো আমিও এই নিয়ম বদলের দাবি জানাচ্ছি। 



সৌরাশিস লাহিড়ী (প্রাক্তন অফ স্পিনার, বাংলা): অশ্বিনের দাবির সঙ্গে অনেক যুক্তি আছে। বল লেগ স্টাম্পের বাইরে পড়লে নিয়ম অনুসারে লেগ বিফোর আউট দেওয়া হয় না। কিন্তু অশ্বিনের বক্তব্য হচ্ছে ব্যাটার যদি রিভার্স সুইপ কিংবা সুইচ হিট মারে তাহলে তো তাঁর স্টান্স বদলে যাচ্ছে। সেই সময় ডানহাতি ব্যাটার তো বাঁহাতির মতো আচরণ করবে। অশ্বিন কিন্তু সেটাই বোঝাতে চেয়েছে। ফলে ব্যাটার রিভার্স সুইপ কিংবা সুইচ হিট মারতে গিয়ে বল প্যাডে লাগলে এবং বল যদি লাইনে থাকে তাহলে লেগ বিফোর দেওয়া উচিত। অশ্বিন কিন্তু সব বোলারদের হয়েই এই সওয়াল করেছেন। তাই আমার ধারণা মানকাডিং নিয়মের যেমন বদল ঘটেছে, তেমনই এই 'ব্লাইন্ড স্পট' নিয়মেরও বদল ঘটবে।  


মানকাডিং নিয়ে একটা সময় ‘স্পোর্টসম্যান স্পিরিটের’ প্রশ্ন তোলা হত। আইপিএল-এর মঞ্চে জস বাটলারকে (মানকাডিং করেছিলেন অশ্বিন) করার জন্য তাঁকে প্রচুর সমালোচনা হজম করতে হয়েছিল। হাতে গোনা কয়েকজন অশ্বিনের পক্ষে বলেছিলেন। নন স্ট্রাইকে থাকা ব্যাটার যদি বল ডেলিভারি হওয়ার আগে অনেকটা এগিয়ে যেতে পারে, তাহলে তাঁর স্পোর্টসম্যান স্পিরিট নিয়ে প্রশ্ন ওঠে না কেন! আইসিসি (ICC) ও এমসিসি (MCC) অবশ্য নিয়ম পরিবর্তনে বাধ্য হয়। মানকাডিংকে রান আউটের নিয়মের মধ্যে রাখা হয়েছে। এ বার অশ্বিন নতুন দাবি তুললেন। তাঁর সেই দাবি বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থা মেনে নেয় কিনা সেটাই দেখার। 


আরও পড়ুন: Virat Kohli, WI vs IND T20I: কুঁচকির চোটে বিশ্রামে বিরাট, দলে ফিরলেন অশ্বিন-রাহুল


আরও পড়ুন: Ravichandran Ashwin: 'ব্লাইন্ড স্পট' নিয়ে সরব অশ্বিন, নিয়ম বদলের দাবি তুললেন


(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta A)