Shubman Gill, BGT 2023: ১০৪২ মিনিট সময় মাঠে কাটিয়েও শতরান! ফিটনেস নিয়ে মুখ খুললেন শুভমন

জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটা সত্যি। অঙ্ক বলছে চলতি আহমেদাবাদ (Ahamedabad) টেস্টের তিন দিন মাঠে মোট ১০৪২ মিনিট সময় কাটিয়েছেন শুভমন গিল (Shubman Gill)! এর মধ্যে ১৬৭.২ ওভার ফিল্ডিং করেছে টিম ইন্ডিয়া (Team India)। মিনিটের হিসেবে সেই সংখ্যা হল ৬৯৩। পুরোটা সময়ই মাঠে ছিলেন পঞ্জাবতনয়। তাও আবার বেশি সময় কাটিয়েছিলেন শর্ট লেগে। এরপর চলে ভারতীয় দলের ব্যাটিংয়ের কথায় চলে আসা যাক। ২৩৫ বলে ১২৮ রান করা শুভমন ৭৮.৪ ওভার ক্রিজে ছিলেন। ঘড়ির হিসেবে বলছে মোট ৩৪৯ মিনিট। এতটা সময় মাঠে থাকার জন্য পায়ে ক্র্যাম্প এসেছে। তবুও নিজের লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন তরুণ ওপেনার। কীভাবে ৩৭ ডিগ্রি গরমে এতটা সময় কাটালেন? 

শুভমন বলছিলেন, 'এতটা সময় মাঠে সময় কাটানো খুব কঠিন নয়। কারণ আমি দেশের প্রতিনিধিত্ব করছি। সেটাই আমার কাছে বাড়তি মোটিভেশন হিসেবে কাজ করেছে। শুধু তো ব্যাটিং নয়, শর্ট লেগে ফিল্ডিং করার সময়, প্যাড পায়ে চাপিয়ে ওভারের পর ওভার বসে থাকতে হয়। ফিটনেস সর্বোচ্চ পর্যায়ে না রাখলে এতটা সময় ক্রিজে থাকা সম্ভব নয়। তাছাড়া অনেক বছর ধরেই রাহুল স্যরের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছি। কীভাবে দলের স্বার্থে ঘণ্টার পর ঘন্টা ক্রিজে টিকে থাকতে হয়, ওঁর কাছ থেকে শিখেছি।" 

প্রায় তিন মাসের মাথায় টেস্ট ক্রিকেটে নিজের দ্বিতীয় শতরানের মুখ দেখলেন শুভমন। গত বছর বাংলাদেশের (Bangladesh) বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ১১০ রান করেছিলেন পঞ্জাবতনয়। এবার চলতি সিরিজে ঘরের মাঠে টেস্টে করলেন প্রথম শতরান। ১৯৪ বলে শতরান পূর্ণ করলেন ২৩ বছরের শুভমন। টড মারফিকে ফাইন লেগের উপর দিয়ে চার মেরে তিন অংকের রানে পৌঁছে যান তিনি। এরপর ২৩৫ বলে ১২৮ রানে থামলেন তিনি। মারলেন ১২টি চার ও ১টি ছক্কা। 

সেই প্রসঙ্গে শুভমনের প্রতিক্রিয়া, "দেশের মাটিতে টেস্ট ফরম্যাটে শতরান করার আলাদা অনুভূতি আছে। কারণ এই মাঠেই গুজরাত টাইটান্সের হয়ে আইপিএল জিতেছি। তাই এখানে রান করে ভালো লাগছে। তবে এখানে রান করা খুব সহজ ছিল না। কারণ বল থমকে আসছিল।" 

কে এল রাহুল (KL Rahul) নাগপুর ও দিল্লি টেস্টে ব্যর্থ হওয়ার পর, শুভমনকে সুযোগ দিয়েছিলেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা (Rohit Sharma) ও হেড কোচ রাহুল দ্রাবিড় (Rahul Dravid)। ইন্দোরের দুই ইনিংসে (২১,৫) ব্যর্থ হলেও, তাঁকে দলে রেখেই মাঠে নেমেছিল ভারতীয় দল। অবশেষে টিম ম্যানেজমেন্টের ভরসার দাম দিলেন তিনি। শতরানের সময় সঙ্গে ছিলেন পূজারা। তিনি এসে শুভমনকে জড়িয়ে ধরে শুভেচ্ছা জানান। এরপর হাত মেলান। চা পানের বিরতির আগে পূজারা আউট হওয়ার পর ক্রিজে আসেন বিরাট কোহলি। তাঁর কাছে থেকেও অভিনন্দনও পান শুভমন। 

চলতি টেস্টের দ্বিতীয় দিনের শেষ বেলায় রোহিতের সঙ্গে ক্রিজে নেমেছিলেন শুভমন। অজিরা প্রথম ইনিংসে ৪৮০ রান গড়লেও, ঠাণ্ডা মাথায় ইনিংসকে এগিয়ে নিয়ে যান শুভমন। তৃতীয় দিন লাঞ্চের আগে রোহিত ব্যক্তিগত ৩৫ রানে ফিরলেও, চেতেশ্বর পূজারার সঙ্গে জুটি বেঁধে ইনিংসকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন এই তরুণ। মিচেল স্টার্ক, ন্যাথান লিঁওর বিরুদ্ধে তাঁকে আগ্রাসী মেজাজে খেলতে দেখা যায়। 

কিন্তু অফ ফর্ম কাটিয়ে কীভাবে কামব্যাক সম্ভব হল? শুভমন যোগ করলেন, "গত কয়েকটি টেস্টে আমি অহেতুক ডিফেন্স করতে গিয়ে আউট হয়েছি। কিন্তু এটা তো আমার ব্যাটিং স্টাইল নয়। আমি শুরুটা ধরে খেলে চালিয়ে খেলতে ভালোবাসি। তাই মারতে গিয়ে আউট হলে আক্ষেপ থাকে না। কিন্তু ডিফেন্স করতে গিয়ে আউট হয়ে যাওয়া আমি একেবারেই মেনে নিতে পারি না। এবার সেই ছকে বদল এনেছিলাম।" 

শুধু টেস্ট কেন, বাইশ গজের যুদ্ধের বাকি দুই ফরম্যাটেও শুভমনের দাপট বজায় রয়েছে। ২০২৩ সালের ১৫ জানুয়ারি থেকে ১১ মার্চ পর্যন্ত পাঁচটি শতরান সেরে ফেললেন শুভমন। এরমধ্যে একদিনের ক্রিকেটে ৩টি, টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ১টি ও টেস্টে ১টি শতরান করে ফেললেন তিনি। 

১৫ জানুয়ারি শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে করেছিলেন ৯৭ বলে ১১৬ রান। ৫০ ওভারের ফরম্যাটে সেটা ছিল শুভমনের দ্বিতীয় শতরান। এর দু'দিন পর ১৮ জানুয়ারি, সবাইকে চমকে দিয়ে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১৪৯ বলে ২০৮ রানে থেমেছিলেন পঞ্জাব তনয়। চলতি বছরের তৃতীয় শতরান এসেছিল সেই কিউইদের বিরুদ্ধেই। ইন্দোরে বিস্ফোরক মেজাজে করেছিলেন ৭৮ বলে ১১২ রান। শুভমনের সোনার ফর্ম এখানেই থেমে থাকেনি। ১ ফেব্রুয়ারি নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে মাত্র ৬৩ বলে ১২৬ রানে অপরাজিত ছিলেন এই তরুণ। আর এবারও শতরানের মুখ দেখলেন তিনি। এবার তাঁর ব্যাট থেকে এল ১২৮ রানের দুরন্ত ইনিংস।