আমার দেখা ভারতের সর্বকালের সেরা শৈল্পিক ফুটবলার চুণী : সুকুমার সমাজপতি
পরের বছর মোহনবাগান ছেড়ে ইষ্টবেঙ্গলে চলে যান সুকুমার সমাজপতি। বিপক্ষ দলে চুণী গোস্বামী। চুণীর বিপক্ষে দুটি ডার্বি ম্যাচের স্মৃতি কোনওদিন ভুলতে পারবেন না সুকুমার সমাজপতি।
অধীর রায়
নক্ষত্রের মধ্যেই লকডাউনে ঝড়ে গেল দুটি নক্ষত্র। মাসখানেক আগে পিকে। বৃহস্পতিবার চলে গেলেন চুণী গোস্বামী। ছয়ের দশকের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত চুণী গোস্বামীর সঙ্গে যাঁর ময়দানে নানান স্মৃতি জড়িয়ে ছিল সেই সুকুমার সমাজপতির স্মৃতিচারণে চুণী গোস্বামীকে নিয়ে উঠে এল নানান কথা।
চুণী গোস্বামীর সঙ্গে সুকুমার সমাজপতির ফুটবল মাঠে প্রথম সাক্ষাত ১৯৫৭ সালে এলিটস কাপ টুর্নামেন্টে। সেটা ছিল একটি কলেজ টুর্নামেন্ট। আশুতোষ কলেজের হয়ে নেমেছিলেন সুকুমার সমাজপতি। আর আশুতোষ ল কলেজের হয়ে নেমে ছিলেন চুণী গোস্বামী। ১৯৬০ সালে ময়দানে সুকুমার সমাজপতির প্রথম আত্মপ্রকাশ। শৈলেন মান্নার হাত ধরে মোহনবাগানে সই করেন। সেই বছর প্রথম চুণী গোস্বামীর সতীর্থ হয়ে যান সুকুমার সমাজপতি, প্রতিটি মুহূর্তে অনুভব করেছেন ফুটবলে এত শিল্প থাকতে পারে। চুণীর প্রতি মুভমেন্ট যেন তুলি দিয়ে আঁকা থাকত। ১৯৬০ সালে চুণীর সঙ্গে খেলতে গিয়ে অনেক স্মৃতি থাকলেও আজ স্মৃতিচারণে সুকুমার সমাজপতির গলায় উঠে এসেছে লিগের ষষ্ঠ ম্যাচের কথা, সেন্টার ফরোয়ার্ডে খেলার জন্য তাঁকে মোহনবাগান নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সুকুমার সমাজপতির প্রিয় পজিশন রাইট আউটে খেলার ব্যবস্থা করে দেন চুণী গোস্বামী । ইস্টার্ন রেলের বিরুদ্ধে সেই পজিশনে মিরাকেল খেলা সুকুমার সমাজপতি খেলেছিলেন চুণীর জন্য।
পরের বছর মোহনবাগান ছেড়ে ইষ্টবেঙ্গলে চলে যান সুকুমার সমাজপতি। বিপক্ষ দলে চুণী গোস্বামী। চুণীর বিপক্ষে দুটি ডার্বি ম্যাচের স্মৃতি কোনওদিন ভুলতে পারবেন না সুকুমার সমাজপতি। চুণী গোস্বামীর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে স্বীকার করে নিলেন তাঁর দেখা ভারতের সর্বকালের সেরা শৈল্পিক ফুটবলার চুণী গোস্বামী। ১৯৬১ সালে ডার্বি ম্যাচে চুণী ছিল অপ্রতিরোধ্য। সেইদিন লড়াই হয়েছিল চুণী বনাম অরুন ঘোষের মধ্যে। আর দ্বিতীয় ম্যাচটি ছিল ১৯৬৫ সালে। সেবার ইষ্টবেঙ্গলের অধিনায়ক সুকুমার সমাজপতি। আর মোহনবাগানের অধিনায়ক চুণী গোস্বামী। সেদিনের ম্যাচ হয়েছিল চুণী বনাম থঙ্গরাজের মধ্যে। সব ম্যাচেই চুণী অপ্রতিরোধ্য হলেও এই দুটি ম্যাচে চুণী গোস্বামীর শৈল্পিক ফুটবল- সুকুমার সমাজপতি আজও ভুলতে পারেন নি।
এরপর আবার ১৯৬৭ সালে মোহনবাগানে ফিরে আসেন সুকুমার সমাজপতি। হয়েছিলেন চুণীর সহযোদ্ধা। সেই বছরেরও অনেক স্মৃতি আছে। দুজনেই SBI-র একই শাখায় চাকরি করতেন। তাই মাঠের বাইরেও তাঁদের বন্ধুত্ব আমৃত্যু অটুট ছিল। ব্যক্তিগত জীবনে একটু নাক উঁচু স্বভাবের ছিলেন চুণী গোস্বামী। কিন্তু চার বছরের ছোট হলেও খেলার মাঠে সুকুমার সমাজপতিরদের সেই আঁচ কোনদিন স্পর্শ করে নি। বন্ধু চুণীকে নিয়ে অনেক স্মৃতি থাকলেও সময়ের সাথে সাথে তা ফিকে হয়ে গেছে। কিন্তু চুণী গোস্বামীর মৃত্যুর পর তাঁর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সুকুমার সমাজপতি হাতড়ে খোঁজার চেষ্টা করলেন তাঁর ফেলে আসা অতীতকে।
আরও পড়ুন - চুনীদাকে শেষবারের মতো দেখতে পেলাম না, আক্ষেপ থেকে যাবে সারাজীবন:পলাশ নন্দী