EXCLUSIVE, Cheteshwar Pujara: অন্ধকার কাটিয়ে বড় যুদ্ধের জন্য তৈরি হচ্ছেন `চে পূজারা`! জানিয়ে দিলেন গর্বিত বাবা
চেতেশ্বর নেটে তাঁর ব্যাটিং সাধনা চালিয়ে গেলেও, বিশ্ব টেস্ট ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে খারাপ ব্যাটিং এখনও সবার মনে কাঁটার মতো বিঁধছে। মেগা ফাইনালে করেছিলেন ১৪ ও ২৭। সবচেয়ে বেশি চোখে লেগেছিল তাঁর আউট হওয়ার ধরণ। প্রথম ইনিংসে ক্যামেরুন গ্রিনকে জাজমেন্ট দিতে গিয়ে বোল্ড হয়েছিলেন।
সব্যসাচী বাগচী
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের জন্য (India Tour of West Indies) টেস্ট দলের ঘোষণা তখন হয়ে গিয়েছে। আসমুদ্র হিমাচলের সঙ্গে ক্রিকেট দুনিয়ার কাছে খবরটা দাবানলের মতো পৌঁছে গিয়েছিল। আসন্ন ক্যারিবিয়ান সফরের দুটি টেস্টের দল থেকে বাদ পড়েছেন চেতেশ্বর পূজারা (Cheteshwar Pujara)। এত সিনিয়র ক্রিকেটার, টিম ইন্ডিয়ার (Team India) জার্সি গায়ে চাপিয়ে বছরের পর বছর বিপক্ষের আগুনে পেস বোলারদের গোলাগুলি হজম করেছেন। সেই চেতেশ্বরকে ছেঁটে ফেলা হল! মন-মেজাজ খারাপ করে বসে থাকতেই পারতেন। কিন্তু না। নিজেকে গুটিয়ে রাখার বদলে খারাপ খবর জেনেই সোজা চলে গিয়েছিলেন নিজের অ্যাকাডেমিতে।
উদ্দেশ্য খারাপ সময় কাটিয়ে বড় যুদ্ধের জন্য তৈরি হতে হবে। বিরাট কোহলি (Virat Kohli)-রোহিত শর্মা (Rohit Sharma) বিশ্ব টেস্ট ফাইনালে (ICC World Test Championship Final 2023) ব্যর্থ হয়েও, ওয়েস্ট ইন্ডিজ (West Indies) উড়ে যাবেন। সেখানে সবার প্রিয় চিন্টু খেলবেন দলীপ ট্রফি (Dullep Trophy 2023)। বছরের শেষে দক্ষিণ আফ্রিকা (India Tour of South Africa) উড়ে যাবে ভারতীয় দল। কে বলতে পারে বাউন্সি পিচে কাগিসো রাবাদা (Kagiso Rabada), লুঙ্গি এনগিডিদের (Lungi Engidi) বিরুদ্ধে অভিজ্ঞ যোদ্ধাকে কাজে লাগবে না। আর তাই ফের নতুন ভাবে গার্ড নিচ্ছেন বহু যুদ্ধের নায়ক।
রাজকোট স্টেডিয়াম থেকে গাড়িতে আরও ২৫ মিনিটের রাস্তা। এলাকার নাম রিং রোড। সেই রিং রোড থেকে একটু ভিতরের দিকে গেলেই চোখের সামনে ভেসে উঠবে চেতেশ্বর পূজারা ক্রিকেট অ্যাকাডেমি (Cheteshwar Pujara Cricket Academy)। সেখানেই এই মুহূর্তে অস্থায়ী ঠিকানা গড়ে তুলেছেন চেতেশ্বর। সকাল-বিকেল মিলিয়ে প্রায় ৪-৫ ঘণ্টা ধরে চলছে তাঁর ব্যাটিং সাধনা। এমনটাই জানালেন গর্বিত বাবা ও ছোটবেলার কোচ অরবিন্দ পূজারা (Arvind Pujara)।
শনিবার অর্থাৎ ২৪ জুন সন্ধের দিকে জি ২৪ ঘণ্টাকে টেলিফোনে অরবিন্দ বলছিলেন, "আমার ছেলেকে নিয়ে যে যাই বলুক, কিছু যায় আসে না। ও মানসিক ভাবে কতটা শক্তিশালী সেটা আমার থেকে ভালো কেউ জানে না। আমি কিংবা চিন্টু কেউ দল নির্বাচন নিয়ে কোনওদিন মন্তব্য করতে চাইনি। এবারও কাউকে দোষ দেব না। নেটে কিন্তু দারুণ ব্যাট করছে। তাই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থেকে বাদ গিয়েও, নিজের রুটিনে বদল আনেনি চিন্টু।"
তবে চেতেশ্বর নেটে তাঁর ব্যাটিং সাধনা চালিয়ে গেলেও, বিশ্ব টেস্ট ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে খারাপ ব্যাটিং এখনও সবার মনে কাঁটার মতো বিঁধছে। মেগা ফাইনালে করেছিলেন ১৪ ও ২৭। সবচেয়ে বেশি চোখে লেগেছিল তাঁর আউট হওয়ার ধরণ। প্রথম ইনিংসে ক্যামেরুন গ্রিনকে জাজমেন্ট দিতে গিয়ে বোল্ড হয়েছিলেন। আর দ্বিতীয় ইনিংসে প্যাট কামিন্সের বাইরে যাওয়া ডেলিভারিকে অহেতুক মারতে গিয়ে, উইকেট কিপার অ্যালেক্স ক্যারির হাতে জমা হয়ে যাওয়া। ফলে এহেন চেতেশ্বরের কামব্যাক নিয়ে একটা প্রশ্ন তো উঠেই গিয়েছে।
যদিও অরবিন্দ বলছিলেন, "শুধু অধ্যাবসায় ও মনের জোরের উপর ভর করে চিন্টু এতটা পথ পেরিয়ে এসেছে। ওকে আর আটকে রাখা যাবে না। মিলিয়ে নেবেন। আগামী দিনে আরও বড় লড়াই করার জন্য আমার ছেলে রসদ পেয়ে গেল। দলীপ ট্রফির পর আমার ছেলে আবার কাউন্টি খেলতে চলে যাবে। ও কামব্যাক করেবেই।"
গত দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে চেতেশ্বরের সঙ্গে ব্যর্থ হয়েছিলেন অজিঙ্কা রাহানে। কিন্তু রাহানে শুধু ফিরেই আসেননি, বিশ্ব টেস্ট ফাইনালের দুটি লড়াকু ইনিংস তাঁকে সহ-অধিনায়কত্ব ফিরিয়ে দিয়েছে। রাহানে ঘরোয়া ক্রিকেটের সঙ্গে চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে আইপিএল খেলেন। মাাথায় মহেন্দ্র সিং ধোনির হাত রয়েছে। সেখানে চেতেশ্বরের ফিরে আসার মঞ্চ একমাত্র কাউন্টি। মাথার উপর কোনও 'গড ফাদার'-এর হাত নেই।
দেশের হয়ে মাত্র একটি ফরম্যাট খেলার সুযোগ পান। ম্যাচ প্র্যাকটিসের অভাব থাকে। রঞ্জি কিংবা দলীপ ট্রফি খেললেও বিপক্ষের বোলারদের মধ্যে সেই খুনে প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করেন না। এটাও চেতেশ্বরের ব্যর্থ হওয়ার কারণ বলে মনে করছেন সৌরাষ্ট্রের প্রাক্তন ক্রিকেটার। ৭১ বছরের অরবিন্দ যোগ করলেন, "অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ডে সাফল্য পেতে হলে প্রচুর ম্যাচ প্র্যাকটিস দরকার। চিন্টু নিজের অ্যাকাডেমিতে বিভিন্ন ধরনের উইকেট বানিয়ে অনুশীলন করে। এছাড়া সময় সুযোগ পেলে রাজ্য দলের হয়ে প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলে থাকে। এ ভাবে তো বিদেশে গিয়ে পাল্লা দেওয়া যাবে না। তবুও নিজের স্কিলকে আরও ঘষেমেজে ও এগিয়ে যাচ্ছে। আর তো কোনও উপায় নেই। অবসর নিয়ে তো বাড়িতে বসে থাকা যায় না।"
২০১৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সিডনি টেস্টে ১৯৩ রান করার পর, গত বছর বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে করেছিলেন অপরাজিত ১০২। এর মাঝের ৩৪টি টেস্টে তিন অংকের রান নেই। বারবার থমকে গিয়েছেন। খারাপ ফর্ম গত বছর বর্ডার-গাভাসকর ট্রফিতেও বজায় ছিল। অজিদের বিরুদ্ধে চার টেস্টের ছয় ইনিংসে রান (৭,০,৩১*, ১, ৫৯, ৪২) মাত্র ১৪০।
যদিও আক্ষেপ করে অরবিন্দ বলছিলেন, "দেশের হয়ে খেলতে নামলে সফল হতেই হবে। পেশাদার জগতে এটাই নিয়ম। কিন্তু আমার প্রশ্ন হল গত কয়েক বছর ভারতীয় দল বিদেশে কি শুধু চিন্টু ও অজিঙ্কা রাহানের ব্যর্থ হওয়ার জন্য হেরেছিল! আর কি কোনও তারকা ব্যর্থ হয়নি! তাহলে শুধু ওদের ঘাড়ে কেন কোপ পড়বে? অতীতেও চিন্টুকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে আমরা তখনও প্রতিবাদ করিনি। এখনও প্রতিবাদ করব না।"
১০৩টি টেস্ট খেলে রান ৭১৯৫। গড় ৪৩.৬০। সঙ্গে রয়েছে ১৯টি শতরান ও ৩৫টি অর্ধ শতরান। এহেন চেতেশ্বর প্রতিবাদ করতে জানেন না। প্রচারের আলোয় থাকতেও রাজি নন। গায়ে-গতরে ওই ‘লাল গোলা’ হজম করে যান। টি-শার্ট শরীর থেকে নামিয়ে রাখলে জমাট রক্তের দাগগুলো স্পষ্ট দেখা যায়। তবুও নিজের কাজ নীরবে করে যেতে চান একজন প্রকৃত যোদ্ধার মতো। কিন্তু প্রশ্ন হল যশস্বী জয়সওয়াল, রুতুরাজ গায়কোয়াড়দের আগমনে তাঁকে ভুলে যাবে না তো টিম ম্যানেজমেন্ট।
তাঁকে রাহুল দ্রাবিড়ের যোগ্য উত্তরসূরি হিসবে ধরা হয়েছিল। নিজেকে সে ভাবে প্রতিষ্ঠাও করেছিলেন। কিন্তু সেই 'দ্য ওয়াল' হেড কোচ হয়ে টিম ইন্ডিয়ার ড্রেসিংরুমে আসতেই এই নিয়ে দু'বার টেস্ট দল থেকে ছাঁটাই হলে 'চে পূজারা'। এটা কি শুধুই ক্রিকেটীয় যুক্তি। নাকি অদৃষ্টের খেল!আসন্ন দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের জন্য অপেক্ষা করতেই হবে।