Exclusive, Igor Stimac : ISL কী ভারতীয় ফুটবলের উন্নতি করেছে? অকপট Sunil Chhetri-দের হেড কোচ
খেলা একেবারে ভিন্ন। তবে ভারতীয় ফুটবল (Indian Football Team) দলের কোচ ইগর স্টিমাচের (Igor Stimac) দর্শন অনেকটা মহেন্দ্র সিং ধোনির (Mahendra Singh Dhoni) মতো। ফল যাই হোক। নিজের লক্ষ্যে অটল থাকবেন। এবং ভবিষ্যত নিয়ে বাড়তি মাথা না ঘামিয়ে তৈরি করবেন দল ও নিজের জন্য ছোট `গোল`।
সব্যসাচী বাগচী: ২০১৯ সালের ১৯ মে অনেক ঢাকঢোল পিটিয়ে ভারতীয় ফুটবলে (Indian Football) পা রেখেছিলেন লুকা মদ্রিচদের (Luka Modric) প্রাক্তন হেড কোচ ইগর স্টিমাচ (Igor Stimac)। তিন বছর হতে চললো সাফ কাপ (SAFF Cup) জয় ছাড়া তাঁর ঝুলিতে আর কোনও ট্রফি নেই। ভারতীয় ফুটবল দলের (Indian Football Team) হেড কোচ হিসেবে ২৪টি ম্যাচে সাইডলাইনের ধারে দাঁড়িয়েছেন। হেরেছেন ৯টি ম্যাচ। জয় মাত্র ৬ ম্যাচে। ড্র ৯টি।
ঠিক এমন অবস্থায় এএফসি এশিয়ান কাপ (AFC Asian Cup) কোয়ালিফায়ার্সের চূড়ান্ত পর্ব আর মাস খানেক পরেই। শোনা যাচ্ছে তাঁর পারফরম্যান্স নিয়ে নাকি সর্ব ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের (AIFF) এক শ্রেণির কর্তারা সন্তুষ্ট নয়। এ বার ফল ভাল না হলে তাঁকে নাকি ছেঁটে ফেলা হতে পারে! তবে এই মুহূর্তে নেতিবাচক দিক নিয়ে ভাবছেন না। বরং কলকাতায় ‘ব্লু টাইগার্স’-দের প্রস্তুতির ফাঁকে একমাত্র জি ২৪ ঘন্টাকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন ক্রোয়েশিয়ার (Croatia) এই প্রাক্তন বিশ্বকাপার। আইএসএল (ISL) থেকে শুরু করে ভারতীয় ফুটবলের সুনীল ছেত্রীর (Sunil Chhetri) ফিটনেস ইস্যু। উঠে এল একাধিক প্রসঙ্গ।
প্রশ্ন: এটা আপনার দ্বিতীয় কলকাতা সফর। ‘ভারতীয় ফুটবলের মক্কা’-কে কেমন লাগছে?
ইগর স্টিমাচ: ভারতীয় দলের সঙ্গে এটা আমার দ্বিতীয় কলকাতা সফর হলেও, আমি কিন্তু বিভিন্ন কাজে একাধিক বার কলকাতায় এসেছি। এবং এই শহরে যে ফুটবলের প্রতি আলাদা আবেগ রয়েছে সেটা প্রতিবার উপলব্ধি করেছি।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গতবারের অভিজ্ঞতা ভাল ছিল না। এ বার কলকাতা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য নতুন কোন পরিকল্পনা করেছেন?
ইগর স্টিমাচ: ঠিক বলছেন। সেই ম্যাচে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আমরা ভাল খেলতে পারিনি। শেষ মুহূর্তে ম্যাচ ড্র করেছিলাম। তবে এ বার কিন্তু পরিস্থিতি একেবারে আলাদা। গত ২৬ এপ্রিল থেকে আমরা কর্নাটকের বেল্লারিতে ৪১জনকে নিয়ে ক্যাম্প শুরু করেছিলাম। দলের সবাই প্রায় ফিট। তাই আমি কিন্তু আসন্ন এএফসি এশিয়ান কাপ নিয়ে যথেষ্ট আশাবাদী। তবে এটিকে মোহনবাগানের বেশ কয়েকজন ফুটবলারকে আমরা শুরু থেকে পাচ্ছি না। এটাই চিন্তা বাড়িয়েছে। কিন্তু পাশাপাশি এটাও ঠিক যে ওরা খেলার মধ্যেই থাকবে। তাই জাতীয় দলে পরে যোগ দিলেও এটিকে মোহনবাগানের ফুটবলারদের খেলাতে সমস্যা হবে না।
প্রশ্ন: আচ্ছা আইএসএল ভারতীয় ফুটবল, সোজা কথায় বললে আপনার কোনও সাহায্য হয়েছে?
ইগর স্টিমাচ: আইএসএল-এর জন্য ভারতীয় ফুটবলের অনেক কিছু উন্নতি হয়েছে। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে উন্নতির কোনও মাপকাঠি নেই। গত আইএসএল-এই আপনারা দেখেছেন, ভারতীয় গোলদাতা ও গোলে সাহায্যকারী ভারতীয়দের সংখ্যা যথেষ্ট বেড়েছে। এই লিগে বিদেশিদের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়ায় দারুণ ভাবে উপকৃত হচ্ছে ভারতীয় সিনিয়র দল। তবে বিদেশের সঙ্গে পাল্লা দিতে গেলে আরও অনেক বিষয়ে উন্নতির প্রয়োজন। সেইজন্য একাধিক বিষয় নিয়ে আমাদের আলোচনা হচ্ছে। আশাকরি আগামি কয়েক বছরের মধ্যে বেশ কিছু বদল দেখতে পাবেন। তবে শুধু আইএসএল নিয়েই ভাবলে চলবে না। ভারতীয় ফুটবলের সার্বিক উন্নতি করতে হলে অন্তত আট মাসের ফুটবল ক্যালেন্ডার হওয়া উচিত। ডুরান্ড কাপ ও সুপার কাপের মতো প্রতিযোগিতাকেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে। গত দু’বছরে যে ফুটবল হয়েছে এটাই অনেক। অতিমারির জন্য ফুটবলের সব রকমের উন্নয়নমূলক প্রকল্পই বন্ধ ছিল, যা খুবই ক্ষতি করেছে।
প্রশ্ন: কতটা ফিট সুনীল ছেত্রী? ওঁকে লাগাতার খেলিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি নেবেন?
ইগর স্টিমাচ: আগামি অগাস্টে সুনীল ৩৮ বছরে পা দেবে। এবং এখনও পর্যন্ত ও জাতীয় দলের সবচেয়ে ফিট ফুটবলার। বাহরিন, বেলারুশের বিরুদ্ধে ও দলে ছিল না, কারণ, গত দু’বছরে যে ছোটখাটো চোটগুলো নিয়ে খেলতে হয়েছে ওকে, সেগুলো সারিয়ে ফিরে আসতে চেয়েছিল ও। যথেষ্ট ভাল রিকভারি হয়েছে ওর। প্রস্তুতি শিবিরে প্রতিদিন তা প্রমাণ করেছে ও। এখনও ভারতীয় দলের আক্রমণে প্রধান অস্ত্র সুনীলই।
প্রশ্ন: সুনীল ছেত্রীর বিকল্প এখনও ভারতীয় দল পেল না। হেড কোচ হিসেবে এটা কি চিন্তার বিষয় নয়?
ইগর স্টিমাচ: এটা নিয়ে চিন্তা না করে কঠিন পরিশ্রম ও ধৈর্য দেখানোই ভাল। আমাদের দলে কিন্তু বেশ কয়েকজন তরুণ স্ট্রাইকার এসেছে (পড়ুন মনবীর সিং, রহিম আলি, ঈশান পন্ডিতা)। তবে সুনীলের মতো না হলেও, ওর ধারেকাছে যাওয়ার জন্য এই তরুণদের সময় তো দিতেই হবে। যাতে একটা সময় এই তরুণ স্ট্রাইকাররা জাতীয় দলকে ভরসা যোগাতে পারে। সুনীল যখন থাকবে না সেই জায়গা ভরাট করার জন্য তরুণদের সময় দেওয়া খুব জরুরি।
প্রশ্ন: গত তিন বছরে জাতীয় দলের কোচ হিসেবে আপনার পারফরম্যান্স কেমন?
ইগর স্টিমাচ: গত তিন বছর ভারতীয় দলের হেড কোচ হিসেবে আমার মিশ্র অভিজ্ঞতা হয়েছে। অনেক চড়াই উতরাইয়ের মধ্যে দিয়ে গিয়েছি। ফিফা তালিকার নীচে থাকা দল কিংবা আমাদের থেকে এগিয়ে থাকা দলগুলোর বিরুদ্ধেও একাধিক তরুণ ফুটবলারকে সুযোগ দিয়েছি। আসলে বাঁধাধরা ছকে সিনিয়রদের না খেলিয়ে গিয়ে একাধিক জুনিয়রদের দেখে নেওয়াই ছিল আমার মুখ্য উদ্দেশ্যে। অনেক ফল নিজেদের পক্ষে যায়নি। তবে আমি কিন্তু নিজের যুক্তিতে অনড় ছিলাম। এবং সেই জন্য গর্বিত। গত কয়েকটি ম্যাচে এই পরীক্ষা করার পর এখন আমি ভাল ফলের ব্যাপারে আশাবাদী। কারণ প্রতিটা ফুটবলার আমার দর্শন বুঝতে পেরেছে। তাই দায়িত্ব নিয়ে বলছি ২০২৩ সালে চিনে আয়োজিত এএফসি এশিয়ান গেমসে আমরা খেলবোই।
প্রশ্ন: শোনা যাচ্ছে এ বার ভাল ফল না করতে পারলে আপনাকে ছাঁটাই করা হতে পারে?
ইগর স্টিমাচ: যাবতীয় বিষয় নিয়েই এএইএফএফ-এর কর্তাদের সঙ্গে আমার নিয়মিত কথাবার্তা হয়। তবে এটা আমাদের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার।সংবাদমাধ্যমের কাছে এই ইস্যু নিয়ে মন্তব্য করব না।
প্রশ্ন: আসন্ন এএফসি এশিয়ান কাপে ভাল ফল নিয়ে আপনি কতটা আশাবাদী?
ইগর স্টিমাচ: এএফসি এশিয়ান কাপের মূলপর্বে খেলার ব্যাপারে আমি ১০-এর মধ্যে নয় শতাংশ আশাবাদী। বাকি এক শতাংশ বিপক্ষের জন্য ছেড়ে দিলাম। কারণ প্রতিপক্ষকে সম্মান জানানো উচিত। বাছাই পর্বে আমাদের গ্রুপে আমরাই ফেভারিট। আমরা সাফল্যের ব্যাপারে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী। আশা করি, কলকাতার মানুষ আমাদের সমর্থন করবেন। শেষ ম্যাচের পরে আমরা সবাই মিলে সাফল্য উদযাপন করতে পারব। মানসিক শক্তি ও ইতিবাচক মানসিকতা। এগুলোই আমাদের ফুটবলারদের মূলধন। প্রস্তুতি যে রকম হয়েছে, তার ফলে আমরা সবাই আত্মবিশ্বাসী। দলে এমন অনেক তরুণ ফুটবলার আছে, যাদের ওপর আমার আস্থা রয়েছে। ওদের দল হিসেবে সবার সামনে তুলে ধরাই এখন আমার লক্ষ্য।
প্রশ্ন: তিন বিপক্ষের মধ্যে আফগানিস্তান কি সবচেয়ে কঠিন?
ইগর স্টিমাচ: আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচটা যে অনেক বেশি শারীরিক হবে, সেটা আমাদের জানাই আছে। ওদের বিরুদ্ধে আমরা আগেও খেলেছি। ওরা অনেক শক্তিশালী, আত্মবিশ্বাসী। আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতাতেও ওরা এগিয়ে। তবে হংকং-কে নিয়েও চর্চা করতে হবে। কারণ ওদের দলে ব্রাজিলিয়ান ফুটবলারদের আগমন ঘটেছে।
প্রশ্ন: আপনি ভবিষ্যতে এখানে থাকলে আই লিগের দল থেকে টিম ইন্ডিয়ার জন্য ফুটবলার নেবেন?
ইগর স্টিমাচ: দেখুন আমার কাজ হল সেরা ফুটবলার বাছাই করে তাদের জাতীয় দলে জায়গা করে দেওয়া। কোন ফুটবলার কোন ক্লাবে খেলে কিংবা বয়স নিয়ে আমি মাথা ঘামাই না।
আরও পড়ুন: Rabindranath Tagore: কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও তাঁর ক্রিকেট প্রেম!
আরও পড়ুন: Cheteshwar Pujara: বড় যুদ্ধের জন্য তৈরি ‘চে পূজারা’! জানিয়ে দিলেন গর্বিত বাবা